রাখাইনে সেনা সমাবেশ: সীমান্তে টহল জোরদার করেছে বাংলাদেশ

জেসমিন পাপড়ি ও আবদুর রহমান
2020.09.14
ঢাকা ও কক্সবাজার
রাখাইনে সেনা সমাবেশ: সীমান্তে  টহল জোরদার করেছে বাংলাদেশ 1000 কক্সবাজারের সীমান্তে সর্তক অবস্থানে দায়িত্ব পালন করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০।
আবদুর রহমান / বেনার নিউজ

রাখাইন সীমান্তের কাছে নতুন করে সেনা সমাবেশের প্রতিবাদে মিয়ানারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করার পরদিনই নিজেদের সীমান্তে টহল কার্যক্রম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ।

কক্সবাজার-৩৪ বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ বেনারকে বলেন, “ওদের এলাকায় মিয়ানমার সেনাদের সন্দেহজনক গতিবিধি ও উপস্থিতি ছিল, সেটি আমরা নিশ্চিত হয়েছি।”

“তাই আমরা টহলসহ সকল কার্যক্রম জোরদার করেছি। সীমান্তে সকলকে সর্তক অবস্থানে রাখা হয়েছে। নতুন করে অনুপ্রবেশসহ যেকোনো ঘটনা ঘটলে, তা প্রতিহত করা হবে,” বলেন তিনি।

বিজিবি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত শুক্রবার ভোর থেকে মাছ ধরার ট্রলারে করে মিয়ানমারের সেনাদের সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করে বাংলাদেশ। সীমান্ত এলাকায় বেশ কয়েকটি পয়েন্টে গত কয়েক দিনে মিয়ানমার সৈন্যদের উপস্থিতি দেখা যায়।

এ ঘটনায় ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তলব করে উদ্বেগের কথা জানায় বাংলাদেশ। পাশাপাশি এসব তৎপরতা বন্ধ করে দুই দেশের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি অবসানের জন্য মিয়ানমারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার সেলের মহাপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন বেনারকে বলেন, “আমরা মিয়ামারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। তাঁকে এই বার্তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে।”

সীমান্ত এলাকার একাধিক বাসিন্দা বেনারকে জানান, সীমান্তের চৌকি স্থাপনসহ মিয়ানমার সেনাবাহিনী সদস্যদের তৎপরতা দেখা গেছে। বিশেষ করে কয়েকদিন ধরে সীমান্তের তুমব্রু থেকে লেবুছড়ি পর্যন্ত এলাকায় এপার থেকে প্রতিদিন মিয়ানমার সেনা সদস্যদের নানা তৎপরতার দৃশ্য চোখে পড়ছে। তাঁরা সেখানে ৭-৮টি তাবু টানিয়ে অস্থায়ী চৌকি স্থাপন করছে, যা আগে ছিল না।

টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ফয়সল হাসান খান বেনারকে বলেন, “মিয়ানমার সীমান্তে নয়, দেশটির অভ্যন্তরে সেনাদের সন্দেহজনক উপস্থিতির কথা আমরা জেনেছি। তবে বিজিবি সর্তক অবস্থানে রয়েছে।”

তুমব্রু শুন্য রেখার রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা নূর মোহাম্মদ বেনারকে বলেন, “দুই দিন ধরে তুমব্রু সীমান্তে গাড়ি চলাচলের বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। তাঁরা পুলিশ না সেনা সদস্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এই নিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরের লোকজন ভয়ে আছে।”

“দ্বীপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্তক অবস্থানে রয়েছে। মিয়ানমার জলসীমানায় বড় বড় জাহাজ দেখা যাচ্ছে,” টেলিফোনে বেনারকে জানান সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমেদ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বেনারকে বলেন, “শুরু থেকেই মিয়ানমার রাখাইন রাজ্য রোহিঙ্গাশূণ্য করার চেষ্টা করছে। নতুন সেনা সমাবেশ সে কার্যক্রমেরই অংশ হতে পারে।”

“আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশনা, জাতিসংঘের চাপ—এসবের পরেও রোহিঙ্গাদের ফেরত না নেওয়ার মনোভাবে অটল তারা। যতদিন পর্যন্ত মিয়ানমারের ওপর পশ্চিমা বিশ্ব অর্থনৈতিক অবরোধ না আনবে, ততদিন এভাবে চলতে থাকবে,” মনে করেন তিনি।

ড. তারেক বলেন, “নভেম্বরে দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন। সেখানেও রোহিঙ্গাদের নির্বাচন করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমন কি রাখাইনে নির্বাচন হচ্ছে না। এসবের বিরুদ্ধে জাতিসংঘসহ সব দেশের জোরালো ভূমিকা দরকার।”

বিবিসিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সোমবার বিবিসিকে বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সম্পর্কিত চুক্তি অনুযায়ী সৈন্য সমাবেশের কারণ বা উদ্দেশ্য জানানোর কথা থাকলেও মিয়ানমার বাংলাদেশকে তা জানায়নি।

“আমরা ভিজ্যুয়াল পেয়েছি কিছু এবং আমরা কিছু ছবিও পেয়েছি। সেটি হচ্ছে যে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী সিভিলিয়ান বোট ব্যবহার করে বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে তাদের বেশ কিছু জায়গায় সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। এসব ক্ষেত্রে যা হয়, প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলো তাদের অভ্যন্তরীন কোন ইনসারজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে পাশ্ববর্তী রাষ্ট্রকে তা জানানোর একটা নিয়ম আছে। তো তারা আমাদেরকে না জানিয়ে এ কাজটি করেছে। আমরা একারণে সেটা তাদের এখানকার দূতাবাসকে জানিয়েছি।"

এর আগে ২০১৭ সালে সীমান্তে সেনা সমাবেশ জোরদার করে মিয়ানমার। সে সময় দেশটির রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যাসহ নানা ধরনের নির্যাতন চালায় দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এর জের ধরে ৭ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে ৩৪ টি রোহিঙ্গা শিবিরে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।