মারজানের সূত্র ধরে এবিটি নেতা সেলিম এখন পুলিশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ আসামি

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.08.17
150911-BD-suspects-1000.jpg গতবছর সেপ্টেম্বরে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আনসারউল্লাহ্‌ বাংলা টিমের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৫।
এএফপি

গুলশান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী নুরুল ইসলাম মারজানের বিষয়ে তদন্তের ধারাবাহিকতায় পুলিশের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ইতিপূর্বে পুরস্কারঘোষিত আসামি সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী।

পুলিশ বলছে, সেলিমকে পাওয়া গেলে লেখক, ব্লগার, প্রকাশক ও সমকামী অধিকার কর্মীদের হত্যা মামলাগুলোতে বড় ধরনের অগ্রগতি হবে। তবে গুলশানের ঘটনায় সেলিমের সম্পৃক্ততার বিষয়ে পুলিশ কিছু জানায়নি।

গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ফেইসবুক পেইজে এক বার্তায় সেলিমের নতুন ছবি প্রকাশ করে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কারের বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ব্লগার, লেখক ও প্রকাশক হত্যায় জড়িত সন্দেহে গত ১৯ মে যে ছয়জনকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ, তাদের মধ্যেও সেলিম অন্যতম।

এই মুহুর্তে সেলিম গুরুত্বপূর্ণ আসামি হয়ে ওঠার কারণ সম্পর্কে পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে জানান, “গুলশান হামলাকারীরা নিহত হয়েছে, পরিকল্পনাকারীরা গোয়েন্দা জালে আছে। এখন ব্লগার, লেখক, প্রকাশক ও সমকামী অধিকারকর্মী হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত করা গেলে র‍্যাব–পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা বাড়বে, দেশে–বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তিও উজ্জল হবে”।

পুলিশের বার্তায় সেলিমকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম—এবিটির শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং অভিজিৎ রায় হত্যার ‘অন্যতম পরিকল্পনাকারী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী

পুলিশের বার্তায় আরও বলা হয়, সেলিম প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নীলয়, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু, গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদ, সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তাঁর বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যাকাণ্ডের সার্বিক নেতৃত্বে ছিল।

“সেলিম লেখক ও ব্লগার হত্যা মামলাগুলোর প্রায় সব কটির সঙ্গে জড়িত। এ জন্য তাকে ধরা এই মুহুর্তে খুবই প্রয়োজন,” বেনারকে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, সেলিম খুব শিগগির ধরা পড়বে বলে আশা করা যায়।

সেলিমের অবস্থান বা তার সম্পর্কে কারও, কোনো তথ্য জানা থাকলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ফেইসবুক পেইজে অথবা টেলিফোন করে (০১৭১৩৩৭৩১৯৪, ০১৭১৩৩৭৩১৯৮, ০১৭১৩৩৭৩২০৬) কিংবা পুলিশের এন্টি টোরোরিজম ইউনিটের মোবাইল অ্যাপে বিষয়টি জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

গত ১৯ মে সেলিমসহ ছয় সন্দেহভাজন জঙ্গিকে ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক ও প্রকাশক হত্যায় জড়িত হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের ধরিয়ে দিতে ১৮ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

এর মধ্যে সেলিম এবং শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে হাদী-১ এর জন্য পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কারের কথা বলা হয়।

আর সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আব্দুস সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সালমান ওরফে সাদ, শিহাব ওরফে সুমন ওরফে সাইফুল এবং সাজ্জাদ ওরফে সজিব ওরফে সিয়াম ওরফে শামসের জন্য ঘোষণা করা হয় দুই লাখ টাকা করে পুরস্কার।

তাদের মধ্যে শিহাব ওরফে সুমন ওরফে সাইফুলকে গত ১৫ জুন প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। এর চার দিনের মাথায় শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে হাদী-১ ঢাকার খিলগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।

ওই তালিকার বাকি চারজনের মধ্যে সেলিমের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার আবদুল বাতেন বেনারকে বলেন, “মারজানের বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে তার বিষয়টিও গুরুত্বের বিচারে সামনে চলে এসেছে। এ কারণে তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কারের বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

গুলশান হামলার প্রায় দেড় মাস পর গত ১৩ আগস্ট পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ওই ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে মারজানের নাম ও ছবি প্রকাশ করে। এর তিন দিন পর তার ঠিকানাসহ বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। মারজান গোয়েন্দা জালে রয়েছে বলে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ পেয়েছে।

তিন ছাত্রী সাময়িক বহিষ্কার

এদিকে মানারত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তিন ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ।গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী মনিটরিং সেলের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকে তাদের চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে,” বেনারকে জানান সেলের আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রধান ড. নুরুন নাহার।

উল্লেখ্য, দেশজুড়ে জঙ্গি দমন অভিযানে ধরা পড়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামায়াতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ—জেএমবির চার নারী সদস্য; যাদের তিনজন বেসরকারি মানারত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক।

মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা হচ্ছে; ফার্মেসি বিভাগের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী আকলিমা রহমান ওরফে মণি, ইশরাত জাহান ওরফে মৌসুমী ওরফে মৌ এবং খাদিজা পারভিন ওরফে মেঘলা। তাদের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ইসতিসনা আক্তার ঐশী।

চার নারী পুলিশ হেফাজতে

মিরপুর থানার ওসি (তদন্ত) শাহজালাল আলম সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বুধবার জেএমবির চার নারী সদস্যকে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে সাত দিনের হেফাজতের আবেদন করেন।

“শুনানি নিয়ে বিচারক পাঁচ দিন হেফাজত মঞ্জুর করেন। ডা. ঐশীর পক্ষে তার আইনজীবী জামিনের আবদেন করলেও বিচারক তা নাকচ করে দেন,” বেনারকে জানান পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারি কমিশনার মিরাশ উদ্দিন।

জেএমবির ওই চার নারী সদস্যের মধ্যে আকলিমাকে সোমবার রাতে গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মগবাজার থেকে ঐশী এবং মিরপুর-১ এর জনতা হাউজিং থেকে মৌকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর মৌ এর কাছ থেকে তথ্য পেয়ে জনতা হাউজিংয়ের একটি মেস থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মেঘনাকে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।