ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী আফসানার মৃত্যু নিয়ে রহস্য ঘনীভূত
2016.08.19

পলিটেকনিকের ছাত্রী ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ফেরদৌস আফসানার মৃত্যুর নিয়ে রহস্য দানা বাঁধছে। আফসানার পরিবার বলছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের আঙুল তেজগাঁও সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান রবিনের দিকে।
তবে ছাত্রলীগ নেতার পরিবার বলছে, আফসানা আত্মহত্যা করেছেন।
আফসানাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করলেও গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত তাঁর পরিবার হত্যা মামলা করেনি। আফসানার মামা আবদুল হালিম অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে কাফরুল থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।
পুলিশ ওই মামলার তদন্ত করছে। তবে গতকাল পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
আফসানার মৃত্যুকে হত্যা দাবি করে ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। আফসানা ওই সংগঠনের কর্মী ছিলেন।
একই দাবিতে আগামী ২২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলাগুলোতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বরাবর বিক্ষুব্ধ পদযাত্রা ও স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্র সংগঠনটি।
গত শনিবার বিকেলে আফসানার লাশ মিরপুরের আল-হেলাল হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায় দুই যুবক। পুলিশ বলেছে, ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান ওরফে রবিন পলাতক। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে।
রবিনের সঙ্গে আফসানার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জানিয়েছেন উভয়ের বন্ধুরা। আফসানার গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের কানিকশালগাঁওয়ে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আফসানা দ্বিতীয়। আফসানার বাবা আখতার হোসেন ছয় মাস আগে মারা গেছেন ও মা সৈয়দা ইয়াসমিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
২০১০ সালে আফসানা ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাসের পরে ঢাকার শেরেবাংলা মহিলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরে সেই কলেজ ছেড়ে দিয়ে ২০১৩ সালে মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় সাইক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নামের একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থাপত্য বিভাগে ভর্তি হন। সেনানিবাসের মানিকদী এলাকার একটি বাসায় থেকে পড়াশোনা করতেন তিনি।
কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিকদার মোহাম্মদ শামীম হোসেন বেনারকে বলেন, “এখন পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশ তদন্ত করছে। কোন বাসাটিতে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়টিই এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।”
ছাত্রলীগের নেতা হাবিবুরের বাবা ব্যবসায়ী আবদুল হাই বেনারকে বলেন, “আফসানার সঙ্গে তাঁর ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাঁদের সম্পর্কে টানাপোড়ন চলছিল।
তিনি বলেন, শনিবার হাবিবুরকে দেখা করতে বলেছিলেন আফসানা। হাবিবুর যেতে না চাইলে মেয়েটি আত্মহত্যার হুমকি দেন। পরে হাবিবুর মানিকদীর ওই বাসায় গেলে মেয়েটিকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
“আবেগের বশে তাঁরা পুলিশের জন্য অপেক্ষা না করেই ঝুলন্ত অবস্থা থেকে আফসানাকে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান। মেয়েটি মারা গেছেন বুঝতে পেরে তাঁরা ভয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। পরিবারের সঙ্গে হাবিবুরের এখন কোনো যোগাযোগ নেই,” জানান আবদুল হাই।
কাফরুল থানার পুলিশ ও আফসানার পরিবার সূত্রে জানা যায়, আফসানার লাশ আল-হেলাল হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায় দুই যুবক। এরপর অন্য দুই যুবক ওই রাতে ফোন করে পরিবারকে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি জানান। তার আগেই পুলিশ হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে অজ্ঞাতনামা হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
আফসানার ঢাকায় অবস্থানরত স্বজনেরা শনিবার গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। রোববার তাঁরা লাশ নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে চলে যান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, আফসানার গলায় অর্ধ চন্দ্রাকৃতির দাগ রয়েছে। তাঁর শরীরে আর কোনো আঘাতের চিহ্ন দৃশ্যমান নয়।
আফসানার ভাই ফজলে রাব্বী বেনারকে বলেন, আফসানার বন্ধুদের কাছ থেকে তাঁরা জেনেছেন, শেরেবাংলা মহিলা কলেজে পড়ার সময় ছাত্রলীগের নেতা হাবিবুরের সঙ্গে আফসানার পরিচয় থেকে ঘনিষ্ঠতা হয়। একপর্যায়ে তাঁদের সম্পর্কে টানাপোড়নও চলে। কিছুদিন আগে বন্ধুরা তাঁদের মধ্যে মীমাংসা করে দেন। কয়েক দিন আগে আফসানা ও রবিনের মধ্যে আবার বিচ্ছেদ ঘটে।
রাব্বীর অভিযোগ, এসবের জের ধরে তাঁর বোনকে হত্যা করে থাকতে পারেন হাবিবুর। আফসানা নিহত হওয়ার পরের দিন সন্দেহভাজন রবিনের এক বন্ধু ও চাচাতো ভাই পরিচয়ে এক যুবক তাঁকে ফোন করে ঘটনাটি মীমাংসা করার ফেলার প্রস্তাব দেয়।
রাব্বী বলেন, তাঁর বোনকে হত্যা করা হয়েছে। যারা হত্যা করেছে, তাদের সঙ্গে তাঁরা কোনো মীমাংসায় যাবেন না।