বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে 'রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা'

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.05.26
150526-BD-Chowhdury-1000.jpg সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। মে ১৫, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সহায়তায় সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে ১২ দিন আগে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। সরকারের অনুমতি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হলো।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর গুলশান থানায় এই মামলা করেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গোলাম রব্বানি। এর আগে গতকাল দুপুরে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “আসলাম চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদে রাষ্ট্রদ্রোহের সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।”

সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আসলামকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গত ১৫ মে সন্ধ্যায় খিলক্ষেত থানা এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য ৩০ মে দিন রেখেছে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসলাম চৌধুরী স্বীকার করেছেন যে, ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে তাঁদের অর্থনৈতিক চুক্তি হয়েছিল। অর্থের বিনিময়ে তাঁরা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছিলেন।

তাঁর দাবি, লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে ‘চুক্তি করার কথা’ জিজ্ঞাসাবাদে ‘স্বীকার করেছেন’ আসলাম।

“স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে,” বেনারকে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদুর রহমান।

তিনি বলেন, ওই নেতার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করতে চাইলে সরকারের অনুমতি নিতে হয়। পুলিশ জানায়, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২০/বি (রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র), ১২১/এ (রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ষড়যন্ত্র) এবং ১২৪/এ (রাষ্ট্রদ্রোহ) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।

আইন অনুযায়ী প্রথম ধারায় সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড, বাকি দুই ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা

ইসরায়েলের মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে আসলামের সাক্ষাতের ছবি ও খবর সম্প্রতি গণমাধ্যমে এলে রাজনীতিতে বিতর্ক শুরু হয়। এ নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্যে ধর্মীয় উস্কানি দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে।

ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের সব সরকার ও রাজনৈতিক দল ওই দেশটির বিপক্ষে।

“ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার বৈঠকের খবর প্রচার করে সরকারি দল এর রাজনৈতিক সুফল নেওয়ার চেষ্টা করছে,” বেনারকে জানান চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন।তিনি বলেন, আসলাম চৌধুরীর এ ধরণের বৈঠকের খবর অবাস্তব-কল্পনাপ্রসূত ও হাস্যকর। তাঁর ব্যক্তিগত সফরের কিছু ছবি নিয়ে সরকার তিলকে তাল করে জনগণের মাঝে প্রপাগন্ডা ছড়াচ্ছে।তিনি আরও বলেন, এভাবে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার মোটেও কাম্য নয়।

আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করতে বিএনপি ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে মিলে ‘ষড়যন্ত্র’ করছে।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, দেশের ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো এখন চুপ কেন?

তবে ইসরায়েল কিংবা মোসাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, আসলামের ওই সফর ছিল ‘ব্যক্তিগত’।

গত মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ধর্ম নিয়ে আওয়ামী লীগের আচরণকে ‘সুবিধাবাদী’ বলে দাবি করেন।

বুধবার আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের এক বৈঠক শেষে ধর্মের বিষয়ে ‘অবস্থান পরিষ্কার’ বলে মন্তব্য করেন হানিফ।

ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হলেও ক্ষমতাসীনদের লক্ষ্য করে মঙ্গলবার রিজভী বলেছিলেন, নিজেরে প্রয়োজনে তাঁরা কখনো ইসলামিক, কখনো ধর্মনিরপেক্ষ।

“আওয়ামী লীগ কখনও রাজনীতিতে ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেনি, ব্যবহার করেছে বিএনপি,” রিজভীর বক্তব্যের জবাবে জানান হানিফ।

তা ছিল ‘ব্যক্তিগত’

চট্টগ্রামের নেতা আসলাম চৌধুরী মাস খানেক আগে বিএনপির নতুন কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব নিযুক্ত হন। আর লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদি ইসরায়েলের বর্তমান সরকারের উপমন্ত্রী এম কে আয়ুব কারার একজন সাবেক উপদেষ্টা।

আসলাম বা সাফাদি কেউই ভারতে ওই সাক্ষাতের খবর অস্বীকার করেননি। বিবিসি বাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি সাফাদি বলেছেন, আসলামের সঙ্গে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে দেখা হলেও তাদের মধ্যে গোপন কোনো কথা হয়নি।

এদিকে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মেন্দি এন সাফাদি যে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা, তা তিনি সে সময় ‘জানতেন না’ ।

অন্যদিকে আসলামের আইনজীবীরা বলেন, এই বিএনপি নেতা ‘চিকিৎসার প্রয়োজনে’ পাঁচ দিনের জন্য দিল্লি গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি এক দাওয়াতে যান। ইসরায়েলের কয়েকজনের সঙ্গে সেখানেই তাঁর দেখা হওয়ার ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।