আসামের ভোটে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ
2016.04.11

আসামের ৬১টি বিধানসভা আসনের এক কোটি পাঁচ লক্ষ মানুষ এত ক্ষণে বৈদ্যুতিন ভোটিং যন্ত্রে ৫২৫ জন প্রার্থীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে ফেলেছেন। আজ উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম প্রধান এই রাজ্যটিতে দ্বিতীয় ও শেষ দফার ভোট ছিল। প্রথম দফার ভোট হয়েছিল গত সোমবার, ৪ এপ্রিল।
আসামের নির্বাচনের ফলাফলের দিকে নজর থাকছে গোটা দেশেরই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যে চারটি রাজ্যে— অর্থাৎ আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু ও কেরল— বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে, তার মধ্যে আসামেই বিজেপি-র জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছরের গোড়ায় দিল্লি এবং শেষে বিহারে দু’দফা ধাক্কা খাওয়ার পর বিজেপি আসামের ফলাফলকে স্বভাবতই গুরুত্ব দিচ্ছে। অন্য দিকে, কংগ্রেস তাকিয়ে আছে তরুণ গগৈ-এর দিকে। ২০০১ সাল থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গগৈ কি পারবেন আরও এক বার কংগ্রেসকে ক্ষমতায় ফেরাতে?
যে ক’টি প্রশ্নকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে অসমের নির্বাচনী রাজনীতি, তার মধ্যে প্রধানতম হল বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দিলেন, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে বিজেপি-র অবস্থান নতুন নয়। রাজ্যে জিতে ক্ষমতায় এলে তাঁরা গোটা সীমান্তই কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে মুড়ে দেবেন বলে দাবি করেছেন বিজেপি-র সভাপতি অমিত শাহ। অসমীয়া মানুষের বাঙালি মুসলমানদের প্রতি যে রাগ, তাকেই বিজেপি কাজে লাগাচ্ছে বলে মত দীপকবাবুর।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, বিজেপি ও তাদের আদর্শগত পিতৃ সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের মতে, বাংলাদেশ থেকে যে হিন্দুরা ভারতে প্রবেশ করছেন, তাঁরা অনুপ্রবেশকারী নন, শরণার্থী। অনুপ্রবেশকারী হলেন মুসলমানরা। কাজেই, আসামের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশকারী নিয়ে যে তর্ক, তা মূলত সাম্প্রদায়িক, মুসলমানদদের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি যেমন আসামে সভা করতে এসে বলেছিলেন, আসামে যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অনুপ্রবেশকারীদের চাকরি দেয়, বিজেপি ক্ষমতায় এলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই জাতীয় মন্তব্যকে মুসলমানদের অর্থনৈতিক বয়কট করার হুমকি হিসেবেই দেখছেন।
এই অবস্থানের একেবারে উল্টো দিকে আছেন এআইইউডিএফ-এর অবিসংবাদী নেতা বদরুদ্দিন আজমল। রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৩৩ শতাংশ মুসলমান। ফলে আসামে এই সংখ্যালঘু নেতার গুরুত্বকে কোনও ভাবেই খাটো করে দেখা যাবে না, বললেন নগাঁও-এর বাসিন্দা সুপর্ণা সাঁতরা। তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে এআইইউডিএফ-এর জোট হলে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ হত না, ফলে বিজেপি সমস্যায় পড়ত। জোট না হওয়ায় বিজেপি-র সুবিধা হয়ে গেল।
কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করলেন না কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে আজমল জানিয়েছেন, তাঁরা জোটের পক্ষেই ছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস শেষ অবধি কোনও সাড়া না দেওয়ায় তাঁরা একাই ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত করেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কংগ্রেসের নেতা, বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ জানিয়েছেন, জোট হয়নি ঠিকই, কিন্তু রাজনীতিতে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। অর্থাৎ, নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরও হয়তো কংগ্রেস এআউইউডিএফ সমঝোতার রাস্তা খোলা থাকবে।
গুয়াহাটি আইআইটি-র অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ দেবর্ষি দাস জানালেন, শুধু মুসলমান-বিদ্বেষই নয়, আসামে এখনও ভিন্ন ভাষাভাষীদের ওপর রাগ যথেষ্ট। বিশেষত শহরাঞ্চলের মধ্যবিত্ত আসামিয়ারা উদ্বিগ্ন, বাঙালিরা তাঁদের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে। ফলে, এই নির্বাচনে সেই প্রশ্নটিও থাকছে। অধ্যাপক দাস মনে করিয়ে দিলেন, এখন আসামে বিজেপি-র প্রধান মুখ যে দুই নেতা, মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী সর্বানন্দ সোনওয়াল এবং সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া হিমন্ত বিশ্বশর্মা, দু’জনেই ১৯৮০-র দশকে বিদেশি খেদাও আন্দোলনের অত্যন্ত পরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ মুখ ছিলেন। তার ওপর, আসাম গণ পরিষদ এ বার বিজেপি-র সঙ্গে জোট বেঁধেছে। অতএব, আসামের রাজনীতির প্রশ্নে ভাষাও থাকছে।