বন্যায় মৃতের সংখ্যা ২৬,দুর্ভোগের কবলে প্রায় ৭ লাখ পরিবার

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.08.02
20160802-BD-Flood1000.jpg ফরিদপুর সদরের সাদীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। আগস্ট ৩, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় ভাসছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। ঘর ছাড়া হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী না পেয়ে দুর্গত অঞ্চলে মানবেতর জীবন যাপন করছে পানিবন্দি অসংখ্য মানুষ। গত কয়েকদিন ধরে পানি বেড়ে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার সড়ক ও রেল যোগাযোগ।

সরকারি হিসেবে, শিশু ও মহিলাসহ সোমবার পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হলেও গণমাধ্যগুলো ৪২ জনের মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ করেছে।

অপ্রতুল ত্রাণের অভিযোগ

বন্যা পরিস্থিতি কুড়িগ্রামে কিছুটা উন্নতি হলেও ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ঘরে ফিরতে পারছে না চরাঞ্চলসহ নিচু এলাকার মানুষ। বন্যাদুর্গত দেড় লাখ পরিবারের জন্য ওই জেলায় ৫৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন-যাপন করছে অনেক পরিবার।

ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও বন্যা কবলিত বেশিরভাগ মানুষের ভাগ্যে তা জুটছে না বলে অভিযোগ করেছেন দুর্গতরা। দুর্ভোগে পড়া মানুষেরা বলছেন, যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে তা অপর্যাপ্ত।

ফরিদপুরের আলিয়াবাদ এলাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। আগস্ট ২, ২০১৬।

পদ্মা ও যমুনায় পানি না বাড়লেও মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরি, কালিগঙ্গা ও ইছামতি নদীর পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাক প্লাবিত হচ্ছে। দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগে রয়েছে। মানিকগঞ্জে ২৪৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আরও বন্ধ করা হয়েছে জামালপুর জেলার প্রায় ৮০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফরিদপুরের চার উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে ৩৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে ভোলার ইলিশায় উজান থেকে ভেসে আসা মেঘনা নদীর পানির চাপে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ।

স্থানীয়রা বলছেন, জামালপুরে গত ২৮ বছরের মধ্যে এবারের বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। জেলার ৫০টি ইউনিয়নের চার লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

মুন্সীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অপরির্বতিত রয়েছে। পদ্মা নদীর পানি ভাগ্যকুল পয়েন্টে মঙ্গলবার বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। শেরপুর-জামালপুর সড়কে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় শেরপুরের সাথে জামালপুর ও টাংগাইলের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ওই জেলার বন্যা কবলিত পাঁচ ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামে বন্যার্তদের কাছে এখনো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ করেছেন দুর্গতরা।

মৃতের সংখ্যা ২৬, ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় সাত লাখ পরিবার

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছালেহ উদ্দিন বেনারকে জানান, “বন্যার কারণে সোমবার পর্যন্ত মোট ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশের ১৬টি জেলার ৭২টি উপজেলার ৩৭৮টি ইউনিয়েনের ছয় লাখ ৮৫ হাজার ৯১৪টি পরিবার কোনো না কোনভাবে বন্যার কারণে দুর্ভোগে পড়েছে। আর এর মধ্যে ১৫ হাজার ১১২টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে।”

সরকার নিষ্ক্রিয়; বিএনপির অভিযোগ

বিভিন্ন এলাকা পানিতে ভাসলেও বানবাসী মানুষ ত্রান পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি।

দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বেনারকে বলেন, “লাখ লাখ মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহালেও তাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে না

অন্যদিকে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “সরকারের এ আচরণ দুর্ভাগ্যজনক ও নিন্দনীয়। দেশের বিভিন্নস্থানে যে বন্যা দেখা দিয়েছে তা ১৯৮৮ সালের বন্যার ভয়াবহতা অতিক্রম করে গেছে।”

সরকারের নানা আশ্বাস

বন্যার পানি নেমে গেলেই বন্যার্তদের ঘর বাড়ি উঁচু করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, “বন্যার পানি নেমে গেলে সরকার ৪০ দিনের কর্মসূচির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ঘরবাড়ি উঁচু করে দেওয়ার পদক্ষেপ নেবে। এছাড়াও আরও ২০০ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করবে সরকার।”

অন্যদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “বন্যায় দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ তদারকি করতে মনিটরিং টিম কাজ করছে। পানি নেমে গেলে বন্যার্তদের পুনর্বাসনে দুর্গতদের পাশে থাকবে সরকার।”

গতকাল মানিকগঞ্জের ঘিওরে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন ওবায়দুল কাদের।



মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।