সংখ্যালঘু নেতারা জঙ্গি হামলায় ভারতের কূটনৈতিক চাপকে স্বাগত জানিয়েছে
2016.03.04

ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারে যদি তাদের উপর হামলা অব্যাহত থাকে, বলেছেন সংখ্যালঘু নেতারা।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই ধরনের আক্রমন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ভারতীয় মন্ত্রীর বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে সংখ্যালঘু নেতারা। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে জঙ্গিদের হামলা চলে আসছে।
নয়াদিল্লিতে সফরকারী বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তার প্রতিপক্ষ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে ২ মার্চ সাক্ষাতকালে সুষমা বাংলাদেশে হিন্দু সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর হামলাকারীদের সাজা দেয়ার কথা বলেন।
সব শেষ গত ২১ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়ে হিন্দু পুরোহিত মহারাজা জগেশ্বর রায় হত্যার শিকার হন। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামায়াত-উল মুজাহেদিন (জেএমবি)এর সদস্যদের দায়ী করেছে পুলিশ।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বেনার নিউজকে বলেন, “আমরা ও আমাদের সংগঠন সুষমা স্বরাজের আহ্বানকে স্বাগত জানাই, তিনি বাংলাদেশের মাইনরিটিদের পরিস্থিতি যথাযথভাবে তুলে ধরেছেন, এই ধরনের আক্রমন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে”।
তিনি বলেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট কিন্তু সেকুলার প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমনে ভারতের উদ্বিগ্ন হবার কারণ রয়েছে।
“যদি আক্রমন অব্যাহত থাকে সংখ্যালঘুরা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেবে। সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে তারা দেশ ছেড়ে না যায়”, জানান রানা দাশগুপ্ত। যিনি বাংলাদেশে ২ কোটি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনের নেতা।
তাঁর মতে, ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান দেশ ভাগের সময় বাংলাদেশ অংশে ৩০ ভাগ হিন্দু ছিলো। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এদেশে হিন্দু ছিলো ২১ ভাগ। বর্তমানে ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশে এই হার ৯.৭ ভাগে নেমে এসেছে।
'সেকুলার, প্রগতিশীল ও উদার'
২ মার্চ দিল্লিতে সুষমা-মাহমুদ আলী বৈঠকের পর ভারতের বিদেশ মন্ত্রনালয় একটি বিবৃতি প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রতিক হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রী আহ্বান জানায়”।
বিবৃতিতে মন্ত্রী মাহমুদ আলীকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ জঙ্গিদের তৎপরতাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং বাংলাদেশের সেকুলার, প্রগতিশীল ও উদার চরিত্র বজায় রাখতে সরকার বদ্ধ পরিকর।
বাংলাদেশ ক্রিশ্চিয়ান আসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক নির্মল রোজারিও বেনার নিউজকে বলেন, “সুষমার আহ্বান সংখ্যালঘুদের রক্ষায় সরকারের উদ্যোগকে জোরদার করবে যারা জঙ্গিদের সাধারন লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত হয়েছে। এই বিশ্বায়নের যুগে প্রতিটি দেশেই প্রতিবেশি দেশের ঘটনার প্রভাব পড়ে”।
স্থানীয় ইসলামিক জঙ্গি ও কথিত ইসলামিক স্টেটের সদস্যরা গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে বিদেশি, সংখ্যালঘু,সেকুলার ব্লগার, লেখক,প্রকাশক ও আইন শৃংখলা বাহিনীর উপর হামলা চালানো শুরু করে। যদিও সরকার বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেটের উপস্থিতি অস্বীকার করে জানায় এগুলো স্থানীয় জঙ্গিদের অপরাধ।
হামলার লক্ষ্য সংখ্যালঘুদের মধ্যে গত বছর প্রধানত খ্রিস্টানরাই ছিলো। একশত’র মতো খ্রিস্টান নেতা জঙ্গিদের হুমকি পায়। ঝিনাইদহে একজন হেমিওপ্যাথিক ডাক্তারকে হত্যা করা হয় তাঁর খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসের জন্য। দিনাজপুরে ও পাবনায় দুই জন পুরোহিত শারীরিক হামলার শিকার হয়ে বেঁচে যান। পৃথক দুই ঘটনায় দিনাজপুরে দুইটি মন্দিরে বোমা হামলা চালানো হয়।
গত ২৬ নভেম্বর বগুড়ার একটি শিয়া মসজিদে গুলি বর্ষন করা হয়, এতে ৭০ বছরের মুয়াজ্জিন নিহত হন। গত অক্টোবরে ঢাকায় শিয়াদের তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা করা হয়।এতে দুই জন মারা যায়। গত ২৫ ডিসেম্বর রাজশাহীতে আহমেদিয়াদের একটি মসজিদে আত্নঘাতী হামলা চালানো হয়।
‘বাংলাদেশে কোনো স্থান নেই’
জানুয়ারিতে হিন্দু পুরোহিতকে হত্যার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর যারা আক্রমন করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার কথা পূনর্ব্যক্ত করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জান খান কামাল বেনার নিউজকে বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু তারা উগ্র না। আর তাই বাংলাদেশে জঙ্গিরা কোনো ঠাই পাবে না”।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র এম সালাহউদ্দিন বেনারকে বলেন, “মিয়ানমারে সংখ্যাগরিষ্ট বৌদ্ধদের দ্বারা মুসলিমদের উপর হামলার ঘটনা বাংলাদেশে প্রভাব ফেলেছে। বৌদ্ধদের আক্রমন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়”।
তিনি জানান, জাতি সংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ সেই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে।
নেতৃস্থানীয় ইসলামিক পন্ডিত মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ বেনারকে বলেন, “সংখ্যালঘুদের উপর কারো আক্রমনকে ইসলাম অনুমোদন দেয় না। সব ধর্ম বিশ্বাসীদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের নীতিকে ইসলাম জোরালো সমর্থন জানায়”।
তাঁর মতে, শান্তির ধর্ম ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে যে সব জঙ্গিরা হামালা করছে সরকারকে অবশ্যই তাদের হাত থেকে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে হবে।