ইয়েমেন থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত আনার উদ্যোগ, সহযোগিতা দেবে ভারত
2015.04.01

ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধের মধ্যে আটকা পড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা দিতে রাজি হয়েছে ভারত। ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশন বুধবার এক ট্যুইটে তাদের সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানায়। খবর বিডিনিউজ২৪-এর।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে; ভারতের সঙ্গেও আলোচনা চলছে।
যুদ্ধ শুরুর আগে ইয়েমেনে দেড় থেকে তিন হাজার বাংলাদেশি ছিলেন বলেও জানান তিনি। সচিব বলেন, এই বাংলাদেশিদের মধ্যে অধিকাংশই এডেন এলাকায় রয়েছেন। এখনো ইয়েমেন সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা ওই এলাকা ‘তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এলাকা’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের প্রতিবেশী দেশ ইয়েমেনে গত কয়েক মাস ধরে অস্থিরতা চলছে। সম্প্রতি সেদেশের হুতি বিদ্রোহীরা দেশটির প্রেসিডেন্টকে উৎখাত করে রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ নিলে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়।
এ অবস্থায় বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে ফিরতে পারছেন না বাংলাদেশিরা। ইয়েমেনে বাংলাদেশের দূতাবাস না থাকায় তারা কোনো সহায়তাও পাচ্ছেন না।
ভারত সরকার নিজেদের জাহাজে করে ইয়েমেন থেকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে শুরু করায় তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানানো হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে সচিব বলেছিলেন, “ভারত নীতিগতভাবে রাজি হয়েছে। তারা বলেছে, নিজেদের সব নাগরিককে ফিরিয়ে আনার পর এবং আটকা পড়া বাংলাদেশিরা শনাক্ত হয়ে গেলে ভারত সহযোগিতা করতে পারে।”
এছাড়া আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সঙ্গে যোগাযোগের কথাও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন তিনি।
সচিব জানান, ইয়েমেনে বাংলাদেশের কোনো মিশন নেই। কুয়েতে বাংলাদেশের হাই কমিশনকেই ইয়েমেনের দায়িত্ব দেওয়া আছে। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি।
“আমরা ইয়েমেনে আমাদের কর্মকর্তাদের পাঠানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সেখানে যাওয়ার একমাত্র উপায় হলো সমুদ্রপথ। আমরা আশা করছি, আমরা লোক পাঠাতে পারব।”
‘যোগাযোগ করেনি কেউ’
সরকার উদ্যোগ নিলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কেউ এখনো সানায় আটকা পড়া বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন সেখানে অবস্থানরত এক বাংলাদেশি প্রকৌশলী।
প্রায় এক মাসে আগে একটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজের জন্য ইয়েমেনে যান প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা। তিনি বর্তমানে সানার একটি হোটেলে অবস্থান করছেন।
গত ২৯ মার্চ গোলাম মোস্তফা দেশে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজের ফোন নম্বর ও ই মেইল ঠিকানা দিয়ে সরকারের কাছে সহযোগিতা চান।
বুধবার তিনি টেলিফোনে বিডিনিউজ২৪ প্রতিবেদক আশিক হোসেনকে বলেন, “কেউ এখনো যোগাযোগ করেনি। এখান থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় এখনো আমরা পাইনি।”
সানায় বাংলাদেশের দূতাবাস না থাকায় গোলাম মোস্তফা ও মো. সিরাজুল হক নামের আরেক বাংলাদেশি গতমাসের শেষ দিকে পাকিস্তান দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের কাছে নেতিবাচক উত্তর পেয়ে ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করেন তারা। সে সময় ভারতীয়রাও তাদের ইতিবাচক কোনো সাড়া দিতে পারেননি।
মোস্তফা বুধবার বলেন, “এখানে পাকিস্তানের যে নাগরিকরা ছিল তারা ইতোমধ্যে চলে গেছে। চীনারাও তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়েছে। ভারতীয়রা ফিরতে শুরু করেছে। এখানে ভারতীয়দের সংখ্যা অনেক বেশি।”
তিনি বলেন, “আমরা কয়েকজন কুয়েতে বাংলাদেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম, কিন্তু তারাও আমাদের কিছু বলতে পারেনি। বলতে গেলে কোনো প্রোগ্রেস নেই। আমরা এখানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের তথ্য সংগ্রহ করছি। এখন পর্যন্ত ৯০ জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।”