মালয়েশিয়ায় বিদেশী শ্রমিক নিয়োগ হঠাৎ স্থগিত
2016.02.19

বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নিয়োগের সমঝোতা চুক্তির একদিন পর মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশ থেকে নতুন শ্রমিক নেয়ার উপর স্থগিতাদেশ জারি করেন।
উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমাদ জাহিদ হামিদী সারাওয়াক রাজ্যে সেনা সদস্যদের সাথে সাক্ষাত করার পর সাংবাদিকদের জানান, “আজ আমি ঘোষণা করছি যে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিদেশী শ্রমিক নেয়া স্থগিত থাকবে”।
তিনি আরো বলেন, “ আমি স্থানীয় নিয়োগকারীদের আহ্বান জানাচ্ছি স্থানীয় শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়ার জন্য”। সূত্রঃ স্টার অনলাইন ভিডিও।
জাহিদকে উদ্ধৃতি দিয়ে স্টার জানায়, এই স্থগিতাদেশ দেয়া হলো যখন সরকার খতিয়ে দেখতে চাচ্ছে বিদেশী শ্রমিকের কাছে কত অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তিনি অবশ্য বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই-এর ব্যাপারে কিছু বলেন নি। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা সমঝোতা চুক্তিটি প্রকাশ করতে চাইছেন না, তবে চুক্তিতে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া থেকে আগামি ৩ বছরে ১৫ লাখ শ্রমিক নেবে বলে জানায় কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশে প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছে একটি এনজিও ‘ওয়ারবি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’-এর চেয়ারম্যান সাইফুল হক বেনার নিউজকে জানান, “মালয়েশিয়া যা করেছে তা কূটনৈতিক রীতি ও সৌজন্যতা বহির্ভূত। এক মন্ত্রী এসে সমঝোতা চুক্তি সই করলো, আর এক মন্ত্রী ২৪ ঘন্টার মধ্যে তা স্থগিত করে দিলো”।
মালয়েশিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিকভাবে কোনো মন্তব্য করে নি কেউ, কেনো চুক্তি সাক্ষরের পর পর তা আটকে দেয়া হলো।
ঢাকার শীর্ষ কর্মকর্তারা অবশ্য অপেক্ষা করছেন তাদেরকে মালোয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে শিঘ্রই এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেয়া হবে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ বেনার নিউজকে জানান, “আমরা স্থগিতাদেশ সম্পর্কে মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। কিন্তু মালয়েশিয়া সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানা পর্যন্ত আমরা ধরে নেবো চুক্তিটি বহাল আছে”।
এদিকে, চুক্তি সাক্ষরকারী মন্ত্রী অস্বীকার করেন যে তার সরকার বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নেবে।
শুক্রবার দি স্টার জানায়, মালয়শিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রী রিচার্ড রায়ত আনাক জায়েম পুত্রজায়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “১৫ লাখ শ্রমিককে বাংলাদেশ থেকে আনা হবে এই ব্যাপারটি সত্য নয়”। তাঁর মতে, “অংকটি আসলে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়ে নিবন্ধনভূক্ত শ্রমিকদের সংখ্যা, যারা মালয়েশিয়া সহ বিভিন্ন দেশে চাকরি প্রত্যাশী”।
মালয়েশিয়া সরকারের উপর অভ্যন্তরীন চাপ
জাহিদের শুক্রবারের ঘোষণাটি আসে বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ সস্তায় শ্রমিক আনার ব্যাপারে দ্বিপাক্ষিক পরিকল্পনা প্রকাশ পাবার পর মালয়েশিয়ার মিডিয়ায় ও সামাজিক মাধ্যমে ও শ্রমিক অধিকার গ্রুপের সমালোচনার ঝড় শুরু হবার পর।
বাংলাদেশের কর্মকর্তা ধারনা দেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা মাসে ৯০০ রিঙ্গিত বা ১৬,৭০০ টাকার মতো মজুরি পাবার কথা ছিলো।
মালয়েশিয়ার বৃহত্তর শ্রমিক ইউনিয়ন মালয়েশিয়ান ট্রেডস ইউনয়ন কংগ্রেস বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে। বৃহস্পতিবার তারা সরকারের কাছে লিখিতভাবে আপত্তি জানায়।
এতে বলা হয়, “ এইদেশ বিদেশী শ্রমিকের উপর নির্ভরশীল থাকতে পারে না, এই অবস্থা নিশ্চিতভাবে দেশের অর্থনীতির জন্য ও স্থানীয় জনগনের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে”। সূত্রঃ বারনামা নিউজ এজেন্সি।
‘খুব কঠিন ও বিপজ্জনক’
দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে যাবার একটি সুযোগ ছিল। ২০০৯ সালের পর সেরকম সুযোগ বন্ধ হয়েছিল। এরপর ২০১৩ সালে দুই দেশ সরকারিভাবে ৫ লাখ শ্রমিক নেবার চুক্তি করে। প্রায় দেড় লাখ চাকরি প্রত্যাশী নিবন্ধন করেছিল, কিন্তু তারপর আর কিছুই ঘটেনি।
এরপর অনেক বাংলাদেশি মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পরে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া যাবার প্রলোভনের শিকার হয়।
ওয়ারবির চেয়ারম্যান হক সমঝোতা চুক্তিটির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, “বাংলাদেশ কিংবা মালয়েশিয়া কেউই সমঝোতা চুক্তিটি প্রকাশ করেনি। আর তাই এটা সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। জনগনের জানা উচিত কত টাকা মালয়েশিয়ায় যেতে খরচ হবে। কতো তাদের মজুরি হবে। সেখানে তাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দেয়ার বিধান আছে কিনা”।
তিনি জানান, বাংলাদেশি শ্রমিকরা তথাকথিত ৩-ডি জব নিতে আগ্রহী। সেগুলো হচ্ছে, ডার্টি, ডেঞ্জারাস ও ডিফিকাল্ট (নোংরা, বিপজ্জনক ও কঠিন), যেগুলো পাম ওয়েল ও রাবার প্লান্টেশনের কাজ।
মালয়েশিয়া থেকে ফোনে মোহাম্মদ জহির বেনার নিউজকে বলেন, “পাম প্লান্টেশনের কাজ খুব বিপজ্জনক ও কঠিন। সাপ ও পোকা মাকড়ের কামড়ে অনেকেই মারা গেছে। আর তাই আমি পরিচ্ছন্নতার কাজ বেছে নিয়েছি”।
* ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরী এই প্রতিবেদন তৈরিতে অবদান রেখেছেন।