বাংলাদেশ-মিয়ানমার গুলিবিনিময়, আটক বিজিবি সদস্যকে ফেরত দেয়নি বিজিপি
2015.06.17

মিয়ানমারের ভেতরে ঢুকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অপারেশনের কয়েকদিন পর এবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটল।
টেকনাফ সীমান্তে ঢুকে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) একজন সদস্যকে আহত করেছে। এছাড়া আরও এক বিজিবি সদস্যকে বিজিপির সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।
একদিন পেরিয়ে গেলেও তাকে ফেরত দেয়নি মিয়ানমার। এমনকি পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বিজিপি কর্তৃপক্ষের সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনের দাবি ‘ভুল বোঝাবুঝির’ থেকেই বিজিবি সদস্যদের ওপর গুলি চালিয়েছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা।
বিপ্লব (৩৫) নামে বিজিবি সদস্যের ডান হাত ও মাথায় গুলি লেগেছে। চট্টগ্রাম সামরিক হাসপাতালে তাকে চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে। আর আব্দুর রাজ্জাক নামে ধরে নিয়ে যাওয়া বিজিবি সদস্যকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত নিয়ে আসার আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি’র কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এম এম আনিসুর রহমান।
বিজিবি জানায়, বুধবার ভোর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নাফ নদীর দমদমিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।বাংলাদেশের পানি সীমানায় ঢুকে গুলি চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় বিজিপির ট্রলার।
টেকনাফ ৪২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু জার আল জাহিদ বলেন, “ভোরে নাফ নদীতে টহলরত বিজিবির একটি দল একটি ট্রলারে তল্লাশি চালাচ্ছিল।এসময় বিজিপির ট্রলার নিয়ে আসা একদল অস্ত্রধারী তাদের বাধা দেয়।এনিয়ে বিজিবির সঙ্গে অস্ত্রধারীদের বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে অস্ত্রধারীরা বিজিবিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে সিপাহি বিপ্লব গুলিবিদ্ধ হন।”
মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এ সময় বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পড়ে বলে দাবি করেন তিনি।ওই ঘটনায় বিজিপিকে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানানো হয় বলে বেনারকে জানান এমএম আনিসুর রহমান।
জানা যায, বুধবার বিজিবি-বিজিপি পতাকা বৈঠকের সম্ভাবনার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত বিজিপি রাজি হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে বেনারকে জানিয়েছেন আবু জার আল জাহিদ।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, “নাফ নদীতে দায়িত্ব পালনকালে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে এক পর্যায়ে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) গুলি চালায়।
ঘটনার ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “নাফ নদীর মাঝ বরাবর ভাগ করে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরা টহল দেয়।বিজিবির একটি জলযান টহল দেওয়ার সময় মাছ ধরার জালে বাধাগ্রস্ত হলে সমস্যার সৃষ্টি হয়”।প্রতিমন্ত্রীর এই বিবরণ বিজিবির ঘটনার বিবরণের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন।
তবে কূটনীতি বিশ্লেষকরা মন্ত্রীর এই যুক্তি মানতে রাজি নয়। দেশটির সঙ্গে শক্ত অবস্থানে আসার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, “যদি ভূল বোঝাবুঝির কারণেই এ ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে একটি দিন পেরিয়ে গেলেও কেন আমরা আটক বিজিবি সদস্যকে ফেরত পেলাম না। কেন বিজিপিকে পতাকা বৈঠকে রাজি করানো গেল না।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে সরকারের মায়ানমারের বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন।”
এর আগে ২০১৪ সালের জুন মাসে বান্দরবানের পাইনছড়ি সীমান্তে টহল দেয়ার সময় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের অতর্কিত গুলিবর্ষণে নিহত হন বিজিবি নায়েক মিজানুর রহমান। ঘটনার চারদিন পর বিজিবি'র মিজানুর রহমানের লাশ কাছে হস্তান্তর করে বিজিপি।