রাজ্জাককে ফিরিয়ে দিতে মিয়ানমারের নতুন শর্ত, মানবে না বাংলাদেশ
2015.06.22

নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে সাগর থেকে উদ্ধার হওয়া ৫৫৫ জনকে ফেরত আনার নতুন শর্ত জুড়ে দিয়েছে মিয়ানমার। নতুন এই শর্তকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যকে উদ্ধারে বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনাও উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
“মিয়ানমারের বিজিপি (বর্ডার গার্ড পুলিশ) আমাদের সদস্যদের গুলি করে, তুলে নিয়ে যায়। এখানে আমরা কেন প্রতিরোধ গড়তে পারি না? তাঁদের পাল্টা গুলি করতে পারি না? তার মানে কি আমাদের বিজিবি শক্তিশালী না?” জাতীয় সংসদে সোমবার এই প্রশ্ন রাখেন সরকারি দল আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. সেলিম।
সরকারদলীয় হলেও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত এই সংসদ বলেন, “রাজ্জাককে ধরে নেওয়ার পর মিয়ানমারের বিজিপি তাদের ফেসবুকে যে কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে, এর মধ্যে একটি ছবিতে দেখা যায় রাজ্জাককে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছে। যে হাতকড়া শুধু রাজ্জাকের হাতে রাখে নাই, এটি ১৬ কোটি মানুষের হাতে পরানো হয়েছে।”
হাজি সেলিম আরও বলেন, “আমরা কিছুই করতে পারছি না। না কূটনীতি দিয়ে, না আমাদের বর্ডার গার্ডের মাধ্যমে।”
ছয় দিন আগে গত ১৭ জুন কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে নাফ নদীতে গোলাগুলির পর বিজিবির নায়েক রাজ্জাককে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিজিপি) । এ ঘটনায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থানকে ১৮ জুন তলব করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর আগে সমুদ্রপথে মানব পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার হওয়া লোকজন বাংলাদেশের নাগরিক বলে মিয়ানমার অপপ্রচার চালালে দেশটির এ ভূমিকার প্রতিবাদে ৫ জুন মিন্ট থানকে তলব করা হয়েছিল।
এদিকে রাজ্জাককে ফেরত না দিয়ে উল্টো তাঁকে নির্যাতন করে রক্তাক্ত ছবি বিজিপির ওয়েবপেজে প্রকাশ করায় ১৯ জুন ফ্যাক্স ও ই মেইলে কড়া প্রতিবাদ পাঠায় বিজিবি।
কিন্তু তাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে ২২ জুন পর্যন্ত সুস্পষ্ট কিছু জানায়নি দেশটি। টেকনাফে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিজিপির মধ্যে ১৮ জুন যে পতাকা বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি।
এরপর ১৯ জুন বেলা ১২টায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম জিরো পয়েন্টে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও রাজ্জাককে ফেরত দেওয়া হয়নি। সেদিন কক্সবাজার সেক্টরের কমান্ডার এমএম আনিসুর রহমানের কাছে মানবপাচারের শিকার ৩৭ জন বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করেন মিয়ানমার ইমিগ্রেশন বিভাগের সহকারী পরিচালক চ নাইং।
এর আগেও গত ৮ জুন ১৫০ জনকে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে ফেরত আনা হয়েছিল।
“এবার বিজিপির পক্ষ থেকে শর্ত দেওয়া হয়েছে, রাজ্জাকসহ মিয়ানমারের জলসীমায় দেশটির নৌ-বাহিনীর হাতে উদ্ধার হওয়া ৭২৭ জনের মধ্যে ৫৫৫ জনকে ফিরিয়ে আনতে হবে,” বেনারকে জানান বিজিবির টেকনাফ ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদ।
তিনি বলেন, “রাজ্জাক এবং অভিবাসীদের ইস্যুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। এরা বাংলাদেশি কি না বা কতজন প্রকৃত বাংলাদেশি, তা যাচাই-বাছাই করা একটি সময়ের ব্যাপার।”
২২ জুন সোমবার বিজিপির সঙ্গে তার তিন দফা আলোচনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা এই শর্তে রাজ্জাককে ফেরত দিতেও রাজি হয়েছে।
অবশ্য বিজিবির মহাপরিচালক গতকাল রাতে ঢাকায় একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, মিয়ানমার নি:শর্তে রাজ্জাককে ফেরত দিতে রাজি হয়েছে।
বিজিবি সূত্র জানায়, মিয়ানমারের মংডুতেই পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে বিজিপি। তবে কবে নাগাদ এ বৈঠক হবে তা নিশ্চিত করে কিছুই জানায়নি বিজিপি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মিয়ানমার দাবি করলেও বাংলাদেশ সরকার যাচাই করে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার আগে সাগর থেকে উদ্ধার হওয়া কাউকে আনতে নারাজ। সপ্তাহখানেক আগে যাচাই করে দেড়শ জনকে আনার পরও তার মধ্যে ২ জন রোহিঙ্গা ধরা পড়েছিল।
পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে রাজ্জাককে ফেরত আনার চেষ্টা চলছে বলেও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গতকাল সাংবাদিকদের জানান।
“ঘটনাটি অমানবিক ও দুঃখজনক। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত গৃহীত ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। বলা যায়, এটা সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা,” বেনারকে জানান সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মহিউদ্দিন আহমেদ।
গত ১৭ জুন ভোরে বিজিবির ছয় সদস্যের একটি দল নায়েক আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে নাফ নদীতে টহল দিচ্ছিল। তাঁরা বাংলাদেশের জলসীমায় মাদক চোরাচালান সন্দেহে দুটি নৌকায় তল্লাশি করছিলেন।
একপর্যায়ে বিজিপির সদস্যদের বহনকারী ট্রলারটি বিজিবির টহল নৌযানের কাছে এসে থামে। বিজিপির ট্রলারটিকে বাংলাদেশের জলসীমা ছেড়ে যেতে বলা হলে তাঁরা নায়েক রাজ্জাককে জোর করে ট্রলারে তুলে নেন।
বিজিবির অন্য সদস্যরা এতে বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়। এতে সিপাহি বিপ্লব কুমার গুলিবিদ্ধ হন।
অবশ্য বিজিপির অভিযোগ, বিজিবির সদস্যরা মিয়ানমার সীমান্তে অনুপ্রবেশ করেছিল।