৮ যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় ঘোষণার অপেক্ষায়,আটক আরও ৪

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.08.09
20160809-BD-WAR-Crime1000.jpg যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় ঘোষণার পূর্বে ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা জোরদারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কাবস্থান। মে ১১,২০১৬।
এএফপি

শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা কমানো হলেও জোরেশোরেই চলছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম। সেই ধারাবাহিকতায় বুধবার একজন সাবেক সংসদ সদস্যসহ আট আসামির যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় জানাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

একই অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও চারজন।

শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পরে আঞ্চলিক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে আরও দ্রুত গতিতে এ বিচার কার্য পরিচালনার পক্ষে মত দিয়েছেন তাঁরা।

সাবেক সাংসদসহ ৮ জনের রায় বুধবার

বুধবার যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেনসহ আট আসামির মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। মঙ্গলবার বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই রায়ের দিন ধার্য করেন।

এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন বেনারকে বলেন, “কিছুদিন আগে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। মঙ্গলবার এটি কার্যতালিকায় আসার পর ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেন।”

এর আগে দুপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৪ জুলাই মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে ট্রাইব্যুনাল।

যাদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হবে তারা হলেন; জাতীয় পার্টির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সাখাওয়াত, মো. বিল্লাল হোসেন বিশ্বাস, শেখ মো. মজিবুর রহমান, মো. ইব্রাহিম হোসাইন, এম এ আজিজ সরদার, আব্দুল আজিজ সরদার, মো. আব্দুল খালেক ও কাজী ওহিদুল ইসলাম।

তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় আটক, নির্যাতন, অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার মতো পাঁচ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।আসামিদের মধ্যে সাখাওয়াত ও বিল্লাল ছাড়া বাকিরা পলাতক রয়েছে। ওই ছয়জনকে পলাতক দেখিয়েই মামলার কাজ চালানো হয়।

বেশ কিছুদিন আগে মো. লুৎফর মোড়ল নামের এ মামলায় অভিযুক্ত আরেক আসামি কারাগারে অসুস্থ হয়ে মারা যান।

গত বছর ২৩ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এসব আসামিদের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষে ১৭ জন সাক্ষী দিলেও আসামিপক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী ছিল না।

সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি

রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটররা এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অপরাধে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আরজি জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে মামলা পরিচালনাকারীদের একজন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বেনারকে বলেন, “আমরা তাদের ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি। সে অপরাধ বিবেচনায় তাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার আরজিও জানিয়েছি। যাতে একাত্তরের শহীদদের আত্মা শান্তি পায়। আমরা এসব যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করছি।”

এদিকে এসব যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।

তিনি বেনারকে বলেন, “আরও আটজন মানবতা বিরোধী অপরাধীর বিচার পেতে যাচ্ছি আমরা। আশা করি ট্রাইব্যুনাল তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করবে।”

তবে ট্রাইব্যুনাল আরও বাড়িয়ে আঞ্চলিক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরও গতিশীল করার পক্ষে মত দেন তিনি। এ ছাড়া পলাতক আসামিদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান ইমরান।

খালাস পাবে: আসামিপক্ষ

অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণ হয়নি দাবি করে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, তারা খালাস পাবে। তবে এ মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক বলেও মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে সাখাওয়াতের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান বেনারকে বলেন, “তিনি মূলত: রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। আমি মনে করি প্রসিকিউশন আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি। আশা করি তিনি খালাস পাবেন।”

সাখাওয়াতসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত সংস্থা। পরে প্রসিকিউশনের আবেদনে ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এরপর ২৯ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বর্তমানে জাতীয় পার্টিতে থাকলেও সাখাওয়াত এক সময় জামায়াত নেতা ছিলেন। ১৯৯১ সালে যশোর-৬ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। তবে মেয়াদপূর্তির আগেই জামায়াত ছেড়ে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এরপর এলডিপি ও পিডিপিতে ঘুরে এসে গত সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে তিনি জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নেন।

আটক চারজন কারাগারে

এদিকে সোমবার যুদ্ধাপরাধের মামলায় ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে, মঙ্গলবার তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

তাদের বিরুদ্ধেও মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনের মত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার ছয়জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে আগামী ২০ অক্টোবর তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের দিন নির্ধারণ করা হয়।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরই সোমবার রাতে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ঢোলাদিয়া থেকে আবদুর রহিম মাস্টার, মুক্তাগাছা উপজেলা সদর থেকে আব্দুস সালাম মুনশি ও সুরুজ আলী ফকির এবং নিমতলা থেকে জালাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।মঙ্গলবার সকালে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশনা চায় রাষ্ট্রপক্ষ।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে ট্রাইব্যুনালে শুনানি করেন প্রসিকিউটর আবুল কালাম। সাংবাদিকদের তিনি জানান, “এ বিষয়ে শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে গ্রেপ্তারকৃতদের কারাগারে পাঠিয়েছে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।