বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব পাচ্ছে ব্রিটেনের কোম্পানি
2016.03.14

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার ব্যবস্থাপনা ব্রিটেনের একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নিরাপত্তাবিষয়ক নানা আলোচনার মধ্যে বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যানকে ইতিমধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তায় ঘাটতি থাকার অভিযোগে গত ৯ মার্চ বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে সরাসরি পণ্য পরিবহনের ওপর ব্রিটেনের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারির প্রেক্ষাপটে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পাশাপাশি পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে বিমানবন্দরে দিনে একটি সময়ে অফিস করছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
“আগামী ২০ মার্চের মধ্যে বিদেশি কোম্পানিকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে এ–সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে,” বেনারকে জানান বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
তিনি বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদি’ পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাজ্যের বেসরকারি বিশেষায়িত নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় সরকার সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
শাহজালালের নিরাপত্তা উন্নয়নে বিদেশি কোম্পানিকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়ার কোনো চিন্তা নেই বলেও জানান বিমানমন্ত্রী। তিনি ওই কোম্পানির নাম প্রকাশ না করলেও জানান, মঙ্গলবার একটি এবং বুধবার আরেকটি কোম্পানি ঢাকায় আসছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে একটিকে চূড়ান্ত করা হবে।
“আপাতত আলোচনার ভিত্তিতে ওই দেশটির বেসরকারি কোম্পানির সার্ভিস নেব। প্রথমে ছয় মাসের জন্য চুক্তি হতে পারে। পরবর্তীতে প্রয়োজনে সময় বাড়বে,” জানান মেনন।
এর আগে গত রোববার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ব্রিটিশ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিমানমন্ত্রীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে সোমবার যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেকের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
“ব্রিটেনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। তারা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে,” সাংবাদিকদের জানান তোফায়েল।
তিনি মনে করেন, যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট ঢুকতে না দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা শিগগিরই সমাধান হবে।
এদিকে ইউরোপীয় কমিশনের মবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট শাখার নিবন্ধিত প্রত্যয়নকারী ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান বিসিসি লিমিটেডের কর্মকর্তা ডেসিন ও’সালিভান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেছেন। তিনি বুধবার পর্যন্ত বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখতে টার্মিনাল দুটি পরিদর্শন করবেন।
সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানায়, ডেসিন ও’সালিভানের প্রতিবেদনের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তিনি এয়ার কার্গো ক্যারিয়ার অপারেটিং ইন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ফ্রম এ থার্ড কান্ট্রি নীতিমালা অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের দেওয়া নির্দেশনাগুলো কার্যকর করার ক্ষেত্রে কতটা অগ্রগতি হলো তা খতিয়ে দেখবেন।
সচিব ও চেয়ারম্যানকে বদলি
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে এই টানাপোড়েনের মধ্যে গতকাল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য করা হয়েছে। অন্যদিকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এস এম গোলাম ফারুক পেয়েছেন বিমান সচিবের দায়িত্ব।
এর আগে গত রোববার বেসামরিক বিমান চলাচল (সিভিল অ্যাভিয়েশন) কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদ থেকে এয়ার ভাইস মার্শাল সানাউল হককে সরিয়ে দেওয়া হয়। নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরীকে।
যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রতিনিধিদল আসছে
সন্ত্রাসবাদ দমন ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার জন্য চলতি মাসে তিনটি পৃথক মার্কিন প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে। এর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাইবার-বিষয়ক উপ-সমন্বয়কারী টমাস ডিউকসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ২২ ও ২৩ মার্চ আসছে।
বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার-বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি সারাহ সিউয়ালের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল আসছে ২৯ মার্চ, থাকবে ১ এপ্রিল পর্যন্ত।
এ ছাড়া হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালেন বারসিনের নেতৃত্বে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল ৩০ ও ৩১ মার্চ আসবে। অ্যালেনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলটির সফরের মূল প্রতিপাদ্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তা।
সাত সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি
গত রবিবার দুপুরে ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেইকের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্যের সাত সদস্যের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে। বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নয়ন ও কার্গো কমপ্লেক্সকে ঢেলে সাজাতে ব্রিটিশ প্রতিনিধিদলটি স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দেয়।
ব্রিটিশ প্রস্তাবের ভিত্তিতে বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রীকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়। ১৯ মার্চ ওই কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত নভেম্বরে যখন অস্ট্রেলিয়া কার্গো নেওয়া বন্ধ করল, তখন এখানকার কর্তৃপক্ষ গুরুত্বসহকারে নেয়নি।
“তখন দুই বিদেশি হত্যা ও আইএসের দায় স্বীকার, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের ভ্রমণে সতর্কতা জারির প্রেক্ষাপটে অস্ট্রেলিয়ার কার্গো বন্ধ করাকে বিদেশি ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখেছিল সরকার। এখন দেরিতে হলেও নিরাপত্তা ঘাটতি পূরণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে,” বেনারকে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা।
বাড়তি নিরাপত্তা চায় এমিরেটস ও সাউদিয়া
ঢাকা থেকে লন্ডনে সরাসরি পণ্য পরিবহনে যুক্তরাজ্যের সাময়িক নিষেধাজ্ঞার পর এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমান সংস্থা এমিরেটসও ঢাকা থেকে পণ্য পরিবহনে বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েছে।
এ ছাড়া সৌদি আরবের বিমান সংস্থা সাউদিয়াও তাদের বিমানে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাড়াতে জোর দিচ্ছে বলে বিমান বন্দর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।