বাংলাদেশে ব্যাপক হামলার আশংকা যুক্তরাজ্যের
2015.10.09

সরকার বিভিন্ন দেশকে সতর্কবার্তা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলেও গতকাল শুক্রবার যুক্তরাজ্য নতুন করে সতর্কবার্তা জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, পশ্চিমা নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে হামলার আশঙ্কা রয়েছে।
শুক্রবার দেশটির সরকারি ওয়েবসাইট গভ ডট ইউকেতে দেওয়া এক নির্দেশনায় এই সতর্কবার্তা হালনাগাদ করা হয় । এতে দেশটির ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস (এফসিও) বাংলাদেশে থাকা সব ব্রিটিশ নাগরিককে চলাফেরায় সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেয়।
এ ছাড়া বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে না যাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া ওই বিভাগের অন্য কোনো অংশ এই নির্দেশনার আওতায় পড়বে না। এ ছাড়া জনবহুল এলাকা ও অনুষ্ঠানে পশ্চিমা নাগরিকদের সতর্কভাবে চলাচলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর জারি করা সতর্কবার্তাকে বাংলাদেশের ‘অগ্রযাত্রার প্রতি অবিচার’ বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অবিলম্বে এই সতর্কবার্তা প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বেনারকে বলেন “প্রধানমন্ত্রী বিদেশি নাগরিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলার পরও বিশ্বের বড় বড় দেশ, যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, স্পেন বাংলাদেশে রেড এলার্ট জারি করেছে। এটা আমাদের অগ্রযাত্রার জন্য অবিচার।”
“আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিচ্ছি, দয়া করে এই সতর্কবার্তা প্রত্যাহার করে নিন,” জানান ওবায়দুল কাদের।
জাপানি নাগরিক হত্যায় দুই ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার
জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যা মামলার আসামি হুমায়ূন কবির হীরার এক আত্মীয়সহ ব্র্যাক ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে রাজশাহী থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । এরা হলেন-ব্র্যাক ব্যাংক রাজশাহী মহানগরীর আলুপট্টি শাখার সেলস অ্যান্ড সার্ভিস অফিসার সুলতান নাহিদ ও ক্রেডিট কার্ড অফিসার এইচ এম শাহরিয়ার আলম।
“পুলিশ ওই ব্যাংকের চার কর্মকর্তাকে কর্মস্থল থেকে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে দুজনকে ছেড়ে দেয়। বাকি দুজনকে রংপুরে নেওয়া হয়,” সাংবাদিকদের জানান রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার সুশান্ত চন্দ্র রায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রংপুরের কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, গ্রেপ্তার নাহিদ এ হত্যা মামলার আসামি হুমায়ূন কবির হীরার খালাতো ভাই। আর শাহরিয়ার হলেন নাহিদের বন্ধু। তারা দুজনেই রাজশাহীর সাগরপাড়ায় থাকেন।
“মঙ্গলবার হীরাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে । তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নাহিদ ও শাহরিয়ারকে গ্রেপ্তার করেছি,” সাংবাদিকদের জানান মামুনুর রশীদ।
একই মামলায় রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য রাসেদ উন নবী খান বিপ্লবকেও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
ব্র্যাক ব্যাংকের রাজশাহী শাখার এক কর্মকর্তা জানান, নাহিদের বাড়ি নাটোরের লালপুরে এবং শাহরিয়ারের বাড়ি ওই জেলার গুরুদাসপুর উপজেলায়।
কুনিও হোশির মরদেহ এখনো রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। তাকে রংপুরে সমাহিত করা সম্ভব কি না তা জানতে চেয়ে জাপান দূতাবাস সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এখন পর্যন্ত সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।
সরকার ও বিরোধীদলে নতুন বাদানুবাদ
এদিকে, জঙ্গি ও উগ্রবাদ রুখতে জাতীয় ঐক্য চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সরকারের একাধিক মন্ত্রী উল্টো বিএনপিকে দোষারোপ করে বলছেন, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক হওয়ায় ঐক্য চাইলে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানের পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, “জঙ্গিবাদ নিয়ে সারা দেশে কথা হচ্ছে। সারা বিশ্ব জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য বাংলাদেশে এ নিয়ে অপরাজনীতি হচ্ছে। এ কারণে দেশে জঙ্গি ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য হচ্ছে না।”
গত বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফখরুল এ কথা বলার পর সরকারি দলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
জবাবে গতকাল শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেছেন, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে জঙ্গিবাদ দমনে জাতীয় ঐক্য হয় না। তাঁর মতে, জাতীয় ঐক্য গড়তে হলে জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা ছেড়ে আসতে হবে।
সম্প্রতি দুই বিদেশিকে হত্যার পর জঙ্গিবাদের বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচনায় আসে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায় ইতালীয় নাগরিক তাবালা সিজার এবং এর ছয় দিনের মাথায় ৩ অক্টোবর রংপুরের এক গ্রামে একই কায়দায় খুন হন জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি।
দুটি ঘটনার পর আইএস হত্যার দায় স্বীকার করেছে মর্মে খবর দেয় জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’। এতে হঠাৎ করে বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থানের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়, যদিও সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে বলে আসছে, দেশে আইএস এর অস্তিত্ব নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত রোববার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আইএস বা তেমন কোনো জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা বাংলাদেশে নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, “গণতন্ত্রহীন অবস্থা চলতে থাকলে উগ্র ও জঙ্গিবাদীরা সুযোগ নেবে। জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদীরা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে জন্য গণতন্ত্র থাকতে হবে।”
গত বছরের ৫ জানুয়ারি বিএনপি–জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলে একতরফা নির্বাচনে ফের সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। তখন থেকে বিএনপি–জামায়াত জোট বলে আসছে, দেশে গণতন্ত্র নেই।
গত বৃহস্পতিবারও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য সবার অংশগ্রহণে একটি জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন বলে মির্জা ফখরুল মন্তব্য করেন।
সরকারের অন্য মন্ত্রীরা যা বলেন
মির্জা ফখরুল ইসলামের জাতীয় ঐক্যের আহ্বানের প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত পৃথক আরেকটি অনুষ্ঠানে গতকাল শুক্রবার খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, “জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরাও জাতীয় ঐক্য চাই। ঐক্য হওয়া উচিত।”
“কিন্তু যারা জঙ্গিবাদের দোসর, অর্থের জোগানদাতা, জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা করে এবং জঙ্গিবাদের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত তাদের নিয়ে কোনো অবস্থাতেই জাতীয় ঐক্য হতে পারে না,” জানান কামরুল ইসলাম।
তাঁর মতে, “শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। আজকে প্রত্যেক পেশার মানুষ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।”
তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, জঙ্গিবাদী তৎপরতার জনক হচ্ছেন জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং পরে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার গোলাপনগরে নিজ বাসভবনে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইনু বলেন, “যারা মানুষ পোড়ানোর সঙ্গে জড়িত, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে জড়িত, সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে জড়িত, জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত, তাদের বাদ দিয়ে সবাইকে নিয়ে সরকার জাতীয় ঐক্যের জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে।”
“আমরা জাতীয় ঐক্যের প্রতিফলন মহাজোটের মধ্য দিয়ে করেছি। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং বাকি যারা আছে তাদেরও এই ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছি,” বলেন হাসানুল হক।
তাঁর এই আহ্বান প্রসঙ্গে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বেনারকে বলেন, “নীতিহীন, রুগ্ন ও দুবৃর্ত্তায়িত রাজনীতি এখন আমাদের গ্রাস করছে। বুর্জোয়া দলগুলো ক্ষমতার লোভে সাম্প্রদায়িক দল ও রাজনীতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে।”
ওই বাম নেতা মনে করেন, “এখন প্রয়োজন নীতিহীন রাজনীতির বিপরীতে আদর্শবাদী রাজনীতির উত্থান ঘটানো, সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ-বিএনপি কেন্দ্রিক দ্বি-দলীয় রাজনীতির বাইরে বিকল্প বলয় গড়ে তুলতে হবে।”