চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর মসজিদে বোমা হামলা

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.12.18
BD-attack বিস্ফোরণের খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটণাস্থলে গেলে ঈশা খাঁ ঘাঁটির মূল ফটক ও হাসপাতাল গেইটে তাদেরকে আটকে দেওয়া হয়।
বেনার নিউজ

বাংলাদেশে এখনো মন্দির-মসজিদে বোমা হামলার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এবার নৌবাহিনীর একটি মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। অব্যাহত এসব হামলা সারাদেশে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে।

অপরাধের ভিন্ন মাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিতে পুলিশের ব্যর্থতার কারণেই একের পর এক এসব ঘটনা ঘটছে বলে বিশ্লেষণ অপরাধ বিজ্ঞানীদের। আর পুলিশ বলছে, সফলতার সঙ্গেই প্রত্যেকটি ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। তবে জঙ্গি দমনে পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট থাকার প্রয়োজনীয়তাও স্বীকার করেছে তারা।

বাংলাদেশের পুলিশ বলছে, চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর একটি মসজিদে দুটি ককটেল হামলায় অন্তত ছ’জন আহত হয়েছে। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়েও দেওয়া হয়। পতেঙ্গায় ঈশা খা ঘাঁটিতে শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীর ওপর এধরনের হামলার ঘটনা খুবই বিরল।

ওই ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে অবিস্ফোরিত আরও কয়েকটি বিস্ফোরকসহ একজনকে আটক করা হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম পুলিশের কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ হাজারীর বরাতে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, “নামাজ শুরু হওয়ার পর প্রথম রাকাতেই সুরা ফাতিহা পড়ার পরই দুটো গ্রেনেড ছুঁড়ে এই হামলা চালানো হয়।”

পুলিশ বলছে, তৃতীয় গ্রেনেডটি ছোড়ার সময় স্থানীয় মুসল্লিরাই একজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত চলছে- বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।

এর আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকজন বিদেশি নাগরিক হত্যাসহ কয়েকটি মন্দিরেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেসব ঘটনা পুলিশের তদন্তাধীন রয়েছে।


‘ব্যর্থ পুলিশ’

চট্টগ্রামের নৌবাহিনীর মসজিদের বিস্ফোরণের ঘটনার সংগঠিত অপরাধের অংশ বলে মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুল হক মারজান বেনারকে বলেন, সংরক্ষিত এলাকায়ও এ ধরনের বিস্ফোরণ ঘটছে। এসব অপরাধীরা অপরাধের ধরন বদলাচ্ছে বারবার। ব্রিটিশ আমলের পুলিশ দিয়ে এসব সন্ত্রাস বা জঙ্গি দমন সম্ভব নয়।

তারমতে, সন্ত্রাসবাদ ঠেকানোর জন্য প্রয়োজন বিশেষ বাহিনী। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠনের ঘোষণা দিলেও সে বিষয়টি চাপা পড়ে আছে। সময়ের সাথে অপরাধের ধরন যেমন পরিবর্তন হয়, তেমনই যুগোপযোগী পরিবর্তন আনতে হবে আইনশৃঙ্খল বাহিনীতেও। পরিবর্তন আনতে হবে পুলিশের সিস্টেমে।

র‌্যাবের সমালোচনা করে তিনি বলেন,  এই বিশেষ বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল দেশের নতুন নতুন অপরাধ দমরে উদ্দেশ্যে, যার মধ্যে জঙ্গি দমনও একটি। অথচ র‌্যাবকে ধীরে ধীরে ক্রস ফায়ারের দিকে নিয়ে যাওয়া হল। র‌্যাবের মধ্যে রয়েছে সমন্বয়হীনতা। এমনকি পুলিশের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক সুখকর নয়। তাই এখনই সময় সন্ত্রাস দমনে বিশেষ কোন বাহিনী তৈরি করা।

পুলিশের পক্ষ থেকেও এ ধরনের বিশেষ বাহিনীর প্রয়োজনীতা স্বীকার করা হয়েছে। তবে সারাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সঠিক তদন্ত চলছে বলেও দাবি করেছে পুলিশ।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনারের (ডিসি)  মুনতাসিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, আমরা প্রত্যেকটি ঘটনার তদন্ত করছি, প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করছি, অনেককে আটকও করা হয়েছে।  পুলিশ দুইভাবে কাজ করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং কোন অপরাধ সংঘঠিত হলে সে অপরাধের প্রকৃত তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের আটরে মাধ্যমে। আইনে পুলিশকে এই অধিকারই দেওয়া রয়েছে।

তিনি আরো জানান, তবে পুলিশের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন করার কোন সুযোগ নেই। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চিন্তা করলে পৃথিবীর কোন দেশই নিরাপদ না। উন্নত বিশ্বেও বড় বড় দূর্ঘটনা ঘটছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশ যে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে তার অত্যন্ত নূন্যতম। এবং পুলিশ অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে সেসব ঘটনার তদন্ত করছে।

তারমতে, আন্তরিকতা, পেশাদারিত্ব এবং সক্ষমতা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। তবে জঙ্গিবাদ নির্মূলের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে। এবং সেই হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে পৃথক জঙ্গিবাদ ইউনিট থাকলে ভাল হয়।


ইতালীয় নাগরিক হত্যায় জেএমবি সদস্যের স্বীকারোক্তি

এদিকে দিনাজপুরে ইতালীয় নাগরিক ডা. পিয়েরো পারোলারি’কে হত্যা চেষ্টার কথা স্বীকার করেছে জেএমবি সদস্য শরিফুল ইসলাম (২৪)। যাকে আগেই দিনাজপুরের কাহারোলের ইসকন মন্দিরে বোমা হামলা ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শরিফুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত।

এ বিষয়ে দিনাজপুর কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আবু সাইদ সরকার বলেন, কাহারোলের জয়নন্দ ইসকন মন্দিরে বোমা হামলার ঘটনায় গ্রেফতার শরিফুলকে রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদালতে হাজির করা হয়। এসময় তিনি ইতালির নাগরিক ডা. পিয়েরো পারোলারির ওপর গুলি করা ও সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

গত ১৮ নভেম্বর সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে শহরের মির্জাপুর বিআরটিসি বাস কাউন্টার সংলগ্ন এলাকায় পিয়েরোকে গুলি করে পালিয়ে যায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, পরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।