প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সুরক্ষায় নতুন আইন হচ্ছে

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.07.13
BD-cabinet সরকারি কর্মচারিদের আইনী সুরক্ষার জন্য মন্ত্রিসভা নতুন আইনের খসড়া অনুমোদন করে। ১৩ জুলাই,২০১৫
বেনার নিউজ

স্বাধীনতার চার দশক পর বাংলাদেশে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য মন্ত্রিসভায় একটি নতুন আইনের খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে, যার অন্যতম লক্ষ্য ফৌজদারি অপরাধ থেকে সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের রক্ষা করা।

ওই আইনের ফলে সরকারের অনুমোদন ছাড়া এখন আর কেনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। তবে মামলা দায়ের ও তদন্ত করা যাবে এবং আদালত অভিযোগপত্র অনুমোদন করে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিলে সে ক্ষেত্রে আর অনুমতি নিতে হবে না।

১৩ জুলাই ‘সরকারি কর্মচারী আইন ২০১৫’ শিরোনামের ওই আইনটি অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা, যা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের পর জাতীয় সংসদে উঠবে।

আইনজ্ঞরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে আইনের চোখে সবাই সমান-এই ধারণার ব্যত্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

“ব্যক্তির পরিচয় বা অবস্থানের ওপর তাঁকে গ্রেপ্তার করা বা না করার বিষয়ে আইন হতে পারে না। কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে কী হবে না, তা অপরাধের ওপর নির্ভর করবে,” বেনারকে জানান বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক।

তিনি বলেন, এটি যদি ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে তাহলে তা মধ্যযুগীয় বা সামন্তবাদি আইন বলতে হবে।

এতদিন রাষ্ট্রপতির বিধি দিয়ে প্রজাতন্ত্র পরিচালিত হতো। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রথমে সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট তৈরি করার উদ্যোগ নিলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধানের সঙ্গে মিল রেখে সরকারি কর্মচারী আইন প্রণয়নের অনুশাসন দেন।

“এত দিন সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন বিধি বা আইন থাকলেও সেগুলো ছিল বিক্ষিপ্ত। এখন একটি পূর্ণাঙ্গ আইন পাওয়া গেল,” বেনারকে জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।

অবশ্য এই আইন চূড়ান্ত হওয়ার আগেই সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সম্প্রতি সাভার উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি দেয়নি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো।

সরকারি অনুমোদন ছাড়াই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি ওই ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে পাঁচ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। এটা বিবেচনা করে দেখবে আদালত।

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ ধারা অনুসারে সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দপ্তরের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে।

জনপ্রশাসনের পদস্থ একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, সরকারি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতির জন্য এই আইন প্রয়োজন। কারণ তাঁরা এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন, যেগুলোর সঙ্গে তাঁরা একমত নন বা ওপরের নির্দেশে মেনে নেন।

“সরকারি কর্মচারীদের এমন কোনো সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না, যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক,” ১৩ জুলাই সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা।

সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, সরকারি কর্মচারী আইনে সুরক্ষা পেলেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রেহাই পাবেন না। যদিও সরকারি কর্মচারী আইনে বলা আছে, দুদক বা অনুরূপ সাংবিধানিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংস্থা তদন্ত করতে বা উপযুক্ত আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে পারবে।

তবে এ সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করতে হলে সরকারের পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে।

সরকারের অনুমোদন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না-এই বিধান রেখে ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে দুদক সংশোধন বিল ২০১৩ পাস হয়। এর মাধ্যমে দুদকের ক্ষমতা খর্ব করার অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে।  

এরপর ২৫ নভেম্বর চার আইনজীবী সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জানুয়ারি দুদক আইনের সংশোধনীতে আনা ৩২(ক) ধারা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। ওই ধারায় বলা হয়েছে, জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ (১) ধারা আবশ্যিকভাবে পালন করতে হবে।


হাইকোর্ট ওই ধারাটি বাতিল করার পর সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব খন্দকার শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে প্রথম দুর্নীতির মামলা করে দুদক। এ ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নেওয়া হয়নি।

“সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। কিন্তু দুদক আইনের সংশোধনীতে জজ, ম্যাজিস্ট্রেট ও সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল,” জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

তিনি বলেন, দুদক আইনে বলা আছে, অন্য আইনে যা কিছু থাকুক না কেন, দুদক আইন প্রাধান্য পাবে। তারপরও সরকারি কর্মচারী আইনে অসংগতিপূর্ণ কিছু থাকলে তাঁরা আবারও আইনের আশ্রয় নেবেন।

উল্লেখ্য, নিজস্ব আইন থাকায় সাংবিধানিক পদে ও বিচার বিভাগে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, পোশাকধারী শৃঙ্খলিত যেকোনো বাহিনী, রেলওয়ের কর্মচারী, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী, উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি কর্মচারী আইনের আওতায় পড়বেন না।  

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।