অকারণে ৯ বছরের শিশু সৌরভকে গুলি করলেন সরকারী দলের এমপি লিটন
2015.10.02

কোনো কারণ ছাড়াই জাতীয় সংসদের একজন আইন প্রণেতার গুলিতে একটি শিশু গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। গতকাল শুক্রবার দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ-বামনডাঙ্গা সড়কের ব্র্যাক মোড় গোপাল চরণ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকার দলীয় সাংসদ মনজুরুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে এই গুলি ছোড়ার অভিযোগ করেছে পরিবার ও স্থানীয়রা।
ঘটনার শিকার শাহাদাত হোসেন ওরফে সৌরভ নামে আট বছরের শিশুটি স্থানীয় গোপালচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।
গুলিবিদ্ধ সৌরভকে প্রথমে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রতিদিনের মত শুক্রবার সকালে বাড়ি সংলগ্ন সুন্দরগঞ্জ-বামনডাঙ্গা সড়কে সৌরভকে নিয়ে প্রাত ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন তার চাচা শাহজাহান আলী ওরফে সাজা মিয়া। ভোর পৌনে ৬টার দিকে সাংসদ মনজুরুল ইসলাম নিজ পাজেরো গাড়িতে তাঁর গ্রামের বাড়ি বামনডাঙ্গা থেকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহরে যাচ্ছিলেন।
সাংসদ গাড়ি থামিয়ে শাহজাহানকে উঠতে বলেন। কিন্তু তিনি ভয় পেয়ে গাড়িতে না উঠে দৌড় দেন।
“সাংসদ গাড়িতে বসেই জানালা দিয়ে আমাকে ইশারা করে ডাকেন। কিন্তু আমি ভয়ে তার কাছে না গিয়ে পালানোর চেষ্টা করি। এ সময় সাংসদ তাঁর পিস্তল দিয়ে গুলি ছোড়েন। এতে সৌরভের ডান পায়ে দুইটি ও বাম পায়ে একটি গুলি লাগে,” জানান শাহজাহান আলী।
স্থানীয় জনগণ গুলিবিদ্ধ শিশুটিকে উদ্ধার করে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
“শিশুটির ডান পায়ে দুইটি ও বাম পায়ে একটি গুলি লাগে। শিশুটির পা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাকে রক্ত দেওয়া হয়েছে,” জানান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক শুভ কুমার দাস ।
“আমার স্বাস্থ্য ভালো। তাই প্রতিদিন চাচার সঙ্গে সড়কে হাঁটাহাঁটি করি। দেখলাম একটি গাড়ি থেকে কে যেন আমার চাচাকে ডাক দিল। চাচা ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন ওই ব্যক্তি গুলি করেন। ওই গুলি আমার গায়ে লাগে। এরপর আমাকে লোকজন ধরাধরি করে হাসপাতালে নেয়,” স্থানীয় সাংবাদিকদের জানায় শিশু সৌরভ।
ওই শিশুটি আরও জানায়, সাংসদ তার চাচাকে আবোলতাবোল বলে বকাঝকা করেছিল।
শিশুটির বাবা সাজু মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, এমপি হোক আর যেই হোক, অকারণে এই ঘটনা যে ঘটিয়েছে তার বিচার চাই।
পুলিশ স্পষ্ট করে বলছেনা কিছু
কার গুলিতে সৌরভ আহত হয়েছে, সে বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ স্পষ্ট করে কিছু বলছে না।
“কে গুলি করেছে বা কীভাবে শিশুটি গুলিবিদ্ধ হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে,” বেনারকে জানান সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জিন্নাত আলী।
গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম খবর পেয়ে রংপুর মেডিকেলে যান। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি, লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে, এমপি সাহেবই গুলি করেছেন। আমরা তদন্ত করছি, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।”
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে দুপুরে পৌর মেয়র আব্দুল্লা আল মামুনের নেতৃত্বে একদল এলাকাবাসী সুন্দরগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবস্থানকারীদের সরিয়ে দেয়।
সাংসদ মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ ছিল।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল রাতে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে সাংসদ পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির গুলিতে এক অটোরিকশা চালক এবং এক রিকশাচালক মারা যান। যানজটে ক্ষুব্ধ হয়ে রনি ফাঁকা গুলি ছুড়লে তাঁরা মারা যান।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার পর পুলিশ রনির গাড়িটি জব্দ করে, গ্রেপ্তার করে রনিকে।
“এই সরকারের সময়ে সাংসদের বন্দুকের নলের মুখে শিশুরও নিরাপত্তা নেই। অবিলম্বে বন্দুকবাজ এমপি লিটনকে গ্রেপ্তার করতে হবে,” বেনারকে জানান ২০ দলীয় জোটনেতা ও জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান।