ঢাকায় পশ্চিমবঙ্গের প্রথম বাংলা সিনেমার যাত্রা শুরু
2015.04.24

পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র ‘খোকা ৪২০’ এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ‘চিনিবিবি’—এই দুটি সিনেমা ঢাকায় মুক্তি পেয়েছে শুক্রবার। চলচ্চিত্র শিল্পী, কলাকুশলী, প্রযোজক ও দর্শক সবার মনযোগ এই দুটি সিনেমা ঘিরেই।
বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সিনেমার বিপরীতে ঢাকাই সিনেমার লড়াই কতটা জমে উঠে, সেটি দেখার অপেক্ষায় আছেন অনেকেই ।
ভারতীয় সিনেমা নিয়ে ঢাকাই সিনেমা সংশ্লিষ্টদের আপত্তি দীর্ঘদিনের। তবে পশ্চিমবঙ্গের এই সিনেমাটি আসার ক্ষেত্রে এবার প্রকাশ্য আপত্তি জানায়নি কেউ। বরং প্রতিযোগিতায় হারজিত দেখার অপেক্ষায় আছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
“ভারতীয় সিনেমা আসা বা না আসা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। আমরা এতদিন শুধু ঠেকানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রতিযোগিতায় নামতে হলে আগে নিজেদের প্রস্তুতি নিতে হবে, যা আমাদের নেই,” অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে বেনারকে জানান চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব রেজানুর রহমান, যিনি আনন্দ আলো নামে একটি বিনোদন পত্রিকার সম্পাদক।
এর আগে ভারতীয় সিনেমা ‘ওয়ান্টেড’ ও ‘ডন-টু’ বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলেও দর্শক টানতে পারেনি। তবে টালিগঞ্জের আমদানি করা বাংলা সিনেমাটি নিয়ে আশাবাদী আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান ব্রাদার্স।
“বাংলা ভাষার একটি ভারতীয় সিনেমা মুক্তি পাওয়ায় এবার প্রচুর দর্শক সমাগম হবে বলে আমরা আশাবাদি,” জানান বাংলাদেশ সিনেমা হলমালিক ও প্রদর্শক সমিতির সহ-সভাপতি সুদীপ্ত দাশ।
অবশ্য মুক্তি পাওয়ার প্রথমদিনে শুক্রবার মধুমিতা সিনেমা হলের সামনে দিয়ে দেখা যায়, দর্শকদের উপস্থিতি ছিল কম।
সিনেমা হলের কর্মী ফারুক আহমেদ বেনারকে জানান, “প্রথমদিন বলে হয়ত দর্শক কম এসেছে। তা ছাড়া মানুষ এখনও সিনেমাটি সম্পর্কে জানেনি। আগামী দুএকদিনের মধ্যে দর্শক বাড়বে।”
তবে ২০১৩ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়, এটি ভারতীয় বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে এরই মধ্যে দেখানো হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সিনেমাটি দেখতে দর্শক সিনেমা হলে কেন যাবে— এমন প্রশ্নের জবাবে সুদীপ্ত বলেন, এ দেশের দর্শকরা তো আর সিনেমাটি দেখেনি।
পুরনো সিনেমা হওয়ায় ‘খোকা ৪২০’ ব্যবসা করতে পারবে না বলে মনে করেন পরিচালক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমার বিশ্বাস ‘চিনিবিবি’র ব্যবসায়িক সাফল্যকে ছুঁতেই পারবে না পশ্চিমবঙ্গের ওই সিনেমাটি।”
“মৌলিক গল্প নিয়ে বড় ক্যানভাসের এই সিনেমাটির কাছে ভারতীয় পুরানো সিনেমা ধোপে টিকবে না। তা ছাড়া পুরানো সিনেমা দর্শক দেখবে কেন?” প্রশ্ন করেন নজরুল ইসলাম।
“আমার সিনেমায় গ্রামের সহজ-সরল প্রেমের গল্প রয়েছে। এজন্য তা দর্শকপ্রিয়তা পাবে,” জানান চিনিবিবির পরিচালক।
এই সিনেমার কাহিনি গ্রামের এক চঞ্চল তরুণীর গল্প নিয়ে তৈরী। ‘চিনিবিবি’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিষ্টি জান্নাত, যিনি চলচ্চিত্র জগতে নবাগত। সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে ৪২টি সিনেমা হলে।
“আমাকে নিয়েই গড়ে উঠেছে গল্প। দুরন্ত আমি সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রেম করি গ্রামের এক ছেলের সঙ্গে। আমি চেষ্টা করেছি নিজের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে,” সাংবাদিকদের জানান মিষ্টি জান্নাত।
অন্যদিকে এসকে মুভিজের সিনেমা ‘খোকা ৪২০’ শুক্রবার ৪৫টি হলে মুক্তি পেয়েছে। রাজিব বিশ্বাস পরিচালিত এই সিনেমায় দেব ছাড়াও অভিনয় করেছেন শুভশ্রী, নুসরাত, রজতাভ দত্ত, তাপস পালসহ আরও অনেকে। তেলেগু চলচ্চিত্র ‘বৃন্দাবনম’ এর কাহিনি অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মিত হয়।
ঢাকার মধুমিতা, শ্যামলী সিনেপ্লেক্স, এশিয়া সিনেমাসহ আরও বেশ কিছু হলে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি।
বাংলাদেশে সিনেমা হলে দর্শক কমার যে প্রবণতা চলছে তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা প্রবেশ করাকে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা হুমকি হিসেবে দেখছেন। তবে এর বিপক্ষ মতও রয়েছে।
রেজানুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের চ্যানেল ভারতে দেখার সুযোগ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের শিল্পী ও কলাকুশলীরা সেখানে পরিচিতি পাচ্ছে না। কিন্তু তাদের শিল্পীরা আমাদের এখানে যথেষ্ট পরিচিত।”
“এই সমস্যার সমাধান করেই পশ্চিমবঙ্গের সিনেমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার মত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় অর্থ বিনিয়োগ করা ও প্রতিযোগিতার জন্য মানসিক অবস্থাও তৈরি করা জরুরী,” জানান রেজানুর রহমান।
দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা কুড়িগ্রামে বাড়ি একজন সিনেমা প্রযোজক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, “আমার নিজের জেলায় পাঁচটি সিনেমা হল ছিল। এখন একটিও নেই।”
এ প্রসঙ্গে রেজানুর রহমান বলেন, “দেশের বিভিন্ন এলাকায় সিনেমা হল ভেঙ্গে মার্কেট বা বাড়ি করা হচ্ছে। এটা স্পষ্ট যে, সিনেমা হলগুলো দর্শকদের টানতে পারছে না। কিন্তু এ নিয়ে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কারও মাথাব্যাথা নেই।”