ঢাকার মাঠে পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’, উৎসব-আনন্দে ভাসছে গোটা দেশ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.04.22
BD-cricket বুধবার মিরপুর স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৩য় জয় পেলো বাংলাদেশ। খেলার একটি মুহূর্ত। ২২ এপ্রিল,২০১৫
বেনার নিউজ

তরুণ সৌম্য সরকারের প্রথম শতকে পাকিস্তানকে অনায়াসে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৮ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

সৌম্যর ১১০ বলে ১৩টি চার ও ছয় ছক্কায় অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংসে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ৩-০তে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। এটি বাংলাদেশের প্রতিপক্ষকে করা দশম ধবলধোলাই। মাত্র কদিন আগে যে দলটার বিপক্ষে একটা জয় পেতে ১৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে, ছয় দিনের মধ্যেই তাদের বিপক্ষে তিন তিনটা জয়!

বুধবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভারে ২৫০ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। জবাবে ৩৯ ওভার ৩ বলে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

তামিম ইকবালের সঙ্গে শতরানের উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশকে দারুণ সূচনা এনে দেন সৌম্য। শুরুতে দেখেশুনে খেললেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন আগের দুই ম্যাচে শতক করা তামিম। ১৪৫ রানের উদ্বোধনী জুটিতে তার অবদান ৬৪ রান।

দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের নিজের রেকর্ডই ভাঙা তামিম ফিরেন জুনায়েদ খানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। তামিমের ৭৬ বলের ইনিংসটি গড়া ৮টি চার ও একটি ছক্কায়।

পরের ওভারে মাহমুদউল্লাহকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে চাপে ফেলেন জুনায়েদ। কিন্তু সৌম্য ও ছন্দে থাকা মুশফিকের পাল্টা আক্রমণে চাপ কেটে সহজ জয়ই পায় বাংলাদেশ।

অধিনায়ক আজহার আলির প্রথম শতকের পরও তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের কাছে ৮ উইকেটের হার এড়াতে পারেনি পাকিস্তান। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় ও সব মিলিয়ে দশমবারের মতো সিরিজের সব ম্যাচে জিতল বাংলাদেশ।

পাকিস্তানকে ‘হোয়াইট ওয়াশ’ করায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ক্রিকেট খেলা নিয়ে বাঙালির আগ্রহে কমতি নেই। আর সেই খেলা যদি হয় পাকিস্তান বা ভারতের সঙ্গে তাহলে তো স্বাভাবিক কাজকর্মেও ভাটা পড়ে যায়।

বুধবারের অবস্থাও ছিল এমনটি।সবর্ত্রই কেবল খেলাকেন্দ্রিক জল্পনা-কল্পনা।শেষমেষ পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের দাপুটে জয়ের আনন্দ উদযাপন হয়েছে দেশজুড়ে।

বিজয় যেহেতু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাই আনন্দটাও ছিল তুলনামূলক বেশি। উৎসবের রাত, উদযাপনের রাতে পরিণত হয় টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া।

“১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাংলাদেশের যে বিজয় দুই দলের ক্রিকেট খেলা আসলে সেই চেতনা পেয়ে বসে অনেকের মধ্যে,” বেনারকে জানান মাহফুজুর রহমান, যিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার।

২১ এপ্রিল বাংলাদেশে ক্রিকেট প্রেমিদের আকাঙ্ক্ষার শব্দ ছিল একটি, তাহলো ‘বাংলাওয়াশ’। এর ইংরেজি হোয়াইটওয়াশ যা বাংলা করলে বলা যায় ধবলধোলাই।

নিজের দেশে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এবার পাকিস্তানকে পেয়ে মধুর শোধ নিল বাংলাদেশ। একসময় যে দলটিকে তারা ‘চোখ বুজে’ হারাত, এককালে যাদের গায়ে লেপে দিয়েছিল বারোমেসে খুদে দলের তকমা, সেই বাংলাদেশের কাছে তিনটি ম্যাচেই হেরেছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানকে তিন ম্যাচের সিরিজে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করতে পারায় বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৮১। আর পাকিস্তানের পয়েন্ট কমে হয়েছে ৯২।

ওয়ানডে  রাংকিংয়ে নবম স্থানে থাকা বাংলাদেশের সিরিজ শুরুর আগে পয়েন্ট ছিল ৭৬। ৯২ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের ঠিক ওপরে রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এর আগে টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের সব ম্যাচে জেতার কৃতিত্ব রয়েছে বাংলাদেশের।

এবার বিশ্বকাপে কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলা, ১৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জেতায় দলটি এখন পৌঁছে গেছে নতুন উচ্চতায়।

গতকালের খেলায় ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে শতক করে দলকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন আজহার আলি। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশকে বড় লক্ষ্য দিতে পারেনি তার দল। মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসানদের চমৎকার বোলিংয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে জয়ের জন্য ২৫১ রানের লক্ষ্য পায় স্বাগতিকরা।

এক সময় পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ২০৩ রান। সেখান থেকে আরো বড় স্কোরের সম্ভাবনা জাগিয়েও বেশি রান তুলতে পারেনি অতিথিরা। পাকিস্তান শেষ ৮ উইকেট হারায় মাত্র ৪৭ রানে।

এবারের সিরিজে পাকিস্তান আসলেই যন্ত্রণাদগ্ধ। প্রথম ম্যাচে ৭৯ রানে হার, দ্বিতীয় ম্যাচে ৭ উইকেটে, সেটিও ৭১ বল বাকি থাকতে। আর তৃতীয় ম্যাচেও পরাজয়।


স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ  বললেন, “তিন ম্যাচেই হার আমাদের জন্য কিছুটা যন্ত্রণাদায়ক তো বটেই। তবে হ্যাঁ, ক্রিকেটে এ রকম হতেই পারে।”

গত বছরের শুরুতে একের পর এক হারে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে চলে গিয়েছিল। বছরের শেষ দিকে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে খেলায় তাদের ঘুরে দাড়ানোর শুরু। এরপর বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা। সবশেষ পাকিস্তানকে পরপর তিন ম্যাচে হারিয়ে বাংলাওয়াশ।

“রাজনৈতিক অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতাসহ বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে এই বিজয় আমাদের মাথা উঁচু করেছে,” বেনারকে জানান নুরুল আমিন, যিনি ঢাকার একটি ওয়াশিং প্লান্টের মালিক।

“খেলার আবেগ ও উত্তেজনায় আমি নিজেও যেমন কাজকমে মন দেইনি, আমার কর্মকতা-কর্মচারিরাও ছিল ঢিলেঢালা,” জানান ওই তরুণ উদ্যোক্তা।


মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।