স্কুল ছাত্র হত্যার দুই আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত
2016.10.20

দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের চুয়াডাঙ্গা জেলায় এক স্কুলছাত্রকে হত্যায় অভিযুক্ত দুই আসামি র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এর আগেও একজন একইভাবে নিহত হয়।
মামলার ছয় আসামীর মধ্যে তিনজন বন্দুকযুদ্ধে মারা গেল, বাকি তিনজন জেলে রয়েছে।
এভাবে বিচার বহির্ভূত হত্যা অব্যাহত থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। এ হত্যার সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে তাঁরা বলেন, শিশু হত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দেওয়া যেত। আইনে সেই সুযোগ আছে।
চুয়াচাঙ্গার দামুড়হুদা থানার এস আই মহিতুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, গত বুধবার রাত ৩টার কিছুক্ষণ আগে দর্শনা শান্তিপাড়ার বাইপাস সড়ক এলাকার পাশে গোলাগুলির এ ঘটনাটি ঘটে। এতে নিহত হয় আসামি সবুজ (২৪) ও শাকিল (২৩)।
তারা চুয়াডাঙ্গা ভি জে স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মাহফুজ আলম সজীবকে অপহরণ ও হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বলে বেনারকে জানান র্যাব –৬ এর উপ-পরিচালক মেজর মনির আহমেদ।
চলতি বছরের ২৯ জুলাই দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ চত্বরের কৃষিমেলা থেকে দামুড়হুদা এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে সজীবকে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা তার পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
নিহত ছাত্র মাহফুজ আলাম সজীব। ছবিঃ পারিবারিক অ্যালবাম।
এর প্রায় এক মাস পর গত ৩১ আগস্ট চুয়াডাঙ্গার একটি কারখানার সেপটিক ট্যাংক থেকে অপহৃত কিশোর সজীবের গলিত লাশ উদ্ধার করে র্যাব। ওই ঘটনায় ছয় সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে দামুড়হুদা মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেনসজীবের মামা আবদুল হালিম।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর এ মামলার প্রধান আসামি ও চুয়াডাঙ্গা সদরের আলোকদিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর রাকিবুল ইসলাম রাকিব র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
এদিকে র্যাবের পক্ষ থেকে বুধবার রাতের বন্দুকযুদ্ধের বিবরণ গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি। তবে লাশ হস্তান্তরের সময় পুলিশকে যে বিবরণ দেওয়া হয় তা সাংবাদিকদের জানান এস আই মহিতুর রহমান।
তিনি জানান, “ওই রাতে র্যাবের একটি টহল দল চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা শান্তিপাড়া এলাকায় গেলে র্যাবের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে একদল সন্ত্রাসী। জীবন বাঁচাতে র্যাবও পাল্টা গুলি ছুঁড়তে থাকলে হামলাকারীরা পিছু হটে যায়। ওই ঘটনার কিছু পরে তল্লাশি চালিয়ে দুই জনের লাশ খুঁজে পায় র্যাব।”
ঘটনাস্থল থেকে দুটি গুলি, একটি শাটারগানসহ ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করার কথাও জানান পুলিশ কর্মকর্তা মহিতুর।
বিচারবহির্ভূত হত্যা গ্রহণযোগ্য নয়
দেশে হত্যা মামলার বিচারে আইন থাকা সত্বেও অপরাধীদের এভাবে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা বেআইনি বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো জবাবদিহিমূলক আচরণ করার আহবান জানিয়েছেন তাঁরা।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বেনারকে বলেন, “আমরা বারবার বলে আসছি বিচার বহির্ভূত কোন হত্যকাণ্ড সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। তবে এটাও ঠিক বিচারহীনতার সংস্কৃতিও গ্রহণযোগ্য নয়। দেশে বিদ্যমান আইনের আওতায় আসামিদের বিচার করা উচিত।”
এ প্রসঙ্গে আরেক মানবাধিকার কর্মী সালমা আলী বেনারকে বলেন, “দেশে ক্রমাগত শিশু-কিশোর নির্যাতন বাড়ছে। সেটা যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি বিনা বিচারে মানুষ হত্যাকেও সমর্থন করা যায় না। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগেই আসামিদের এভাবে মেরে ফেলা কোন সভ্য দেশের নিয়ম হতে পারে না।”
প্রচলিত বিচার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় আসামিরা বেরিয়ে যায় বলে বিচারের প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। তাই বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতাও কমাতে হবে।