ঢাকা-ওয়াশিংটন আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে সিটি নির্বাচন ও জঙ্গীবাদ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.05.01
BD-diplomacy ঢাকা-ওয়াশিংটন অংশীদারত্ব সংলাপে অংশ নিতে ওয়েন্ডি শারমেন এবং মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল ঢাকায় এসেছেন। ১মে,২০১৫
বেনার নিউজ

ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে চতুর্থ অংশীদারত্ব সংলাপ ৩০ মার্চ ঢাকায় শুরু হয়েছে। এর আগে তিনদফা এমন সংলাপ হলেও দুই দেশের সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সম্প্রসারণে তা কতটা ভূমিকা রেখেছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন আন্তজার্তিক বিশেষঞ্জরা।

তাদের মতে, বিভিন্ন ইস্যুতে গত কয়েক বছরে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পকর্ অনেকটাই শীতল। এই প্রেক্ষাপটে অংশীদারত্ব সংলাপ সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারে।  তবে তা নিভর্র করবে উভয় দেশের আন্তরিকতা ও উদ্যোগের ওপর।

“ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে প্রথম ধাক্কা ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইস্যু। এরপর ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারীর নিবর্াচন, জিএসপি ইস্যু, সবশেষ সিটি নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক মনোভাবের বিষয়গুলো প্রকাশ্য”, বেনার নিউজকে জানান  অধ্যাপক আকমল হোসেন, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক।

তবে অধ্যাপক আকমল মনে করেন, দুই দেশের সম্পর্কে এখন এক ধরণের স্থিতি  অবস্থা চলছে। সংলাপের মাধ্যমে সেখানে যদি পরিবর্তন আসে, (যেমনটি যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা ফের চালু করে) তাহলে বোঝা যাবে বড় অগ্রগতি হয়েছে। যদিও সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ১ মে বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে ছিল  প্ল্যানারি সেশন। গুচ্ছ আলোচনায় বিনিয়োগ পরিবেশ, জ্বালানি, শ্রমের অধিকার ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক ও মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শারমেনের নেতৃত্বে এই আলোচনায় সম্প্রতি শেষ হওয়া সিটি করপোরেশনের প্রসঙ্গ ওঠে।

অংশীদারত্ব সংলাপে অংশ নিতে ওয়েন্ডি শারমেন এবং মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল  ঢাকায় অবস্থান করছেন।  ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছরই অংশীদারত্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।


মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ওয়েন্ডি শারমেন এ সফরের সময় বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলার পরিকল্পনা করছেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি এবারের সফরে শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক রাজনৈতিক চর্চা এবং এ চর্চার সুযোগ নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত তিনটি বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবারও সে ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। ফলে নতুন করে কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। তাদের মতে, দুই দেশের বিভিন্ন বিষয়ের সহযোগিতার মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সাহায্য, নিরাপত্তা ও মানুষে মানুষে যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ।

তবে দুই পক্ষই উন্নয়ন ও সুশাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা সহযোগিতা—এ তিনটি ক্ষেত্রে আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

গত বছর অক্টোবরে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত অংশীদারত্ব সংলাপে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করা, নাগরিক সমাজের গুরুত্ব, আইনের শাসনের গুরুত্ব, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, অভিবাসন ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অধিকার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শ্রমের অধিকার ও শান্তিরক্ষা নিয়ে আলোচনা হয়।

সূত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্র এবার বাংলাদেশের কাছে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও চরমপন্থা মোকাবিলায় কৌশল জানতে চেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শারমেন ৩০ মাচর্ গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালেও এসব কথা বলেন। খবর বাসসের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা সন্ত্রাসীকে  সন্ত্রাসী হিসেবে দেখি। তাদের কোনো সীমানা এবং অঞ্চল নেই।”

“ আমার কাছে মনে হয় অংশীদারত্ব সংলাপের মূল বিষয় সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ। ওয়াশিংটন কৌশলগত কারনে বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের সম্ভাব্য উত্থান নিয়ে বিচলিত। আলকায়েদা, তালেবান, আই এস এর মতো জঙ্গিরা যাতে এখানে মাথা তুলতে না পারে, সেজন্য তাদের গভীর মনযোগ রয়েছে,” বেনারকে জানান সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মহিউদ্দীন আহমেদ।

তার মতে, বিশ্বজুড়ে একসময় যুক্তরাষ্ট্রের কাজ ছিল কমিউনিজম ঠেকানো, এখন তা মৌলবাদ ঠেকানোর দিকে মোড় নিয়েছে। এর সঙ্গে তারা গণতন্ত্র, নির্বাচন, উন্নয়ন ও সুশাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা সহযোগিতার  বিষয়গুলো আনছে।

সদ্য সমাপ্ত সিটি নির্বাচনের নানা অনিয়মের তদন্ত করা গণতন্ত্রের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন শারমেন।

বাসস আরও জানায়, বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিটি নির্বাচনে কিছু ছোটখাটো অনিয়ম হলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। শারমেন বিএনপির নির্বাচন বর্জনকে খুবই দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন।


ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে শেরমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রেও নির্বাচনে কিছু কিছু অনিয়ম হয়ে থাকে। তবে সরকার সব সময়ই পরবর্তী নির্বাচন ভালোভাবে আয়োজনের চেষ্টা করে। বাংলাদেশ নির্বাচন ব্যবস্থা উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।


শুক্রবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় শারমেন এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের শারমেন বলেন,  “  প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় আমরা নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা করেছি। ভোটে অনিয়মের ব্যাপারে স্পষ্টত সবাই ভীষণ উদ্বিগ্ন, এটা আমাকে অবশ্যই বলতে হবে।”

তিনি বলেন, ”ভোট চলাকালে বিরোধীদলের নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন। আমি মনে করি, নির্বাচনে অনিয়মগুলোর ব্যাপারে কীভাবে স্বচ্ছ তদন্ত করা যায়, এ ব্যাপারে সবার লক্ষ্য করা প্রয়োজন।”

ভবিষ্যত নির্বাচন ও গণতন্ত্রের জন্য ওই অনিয়ম তদন্তগুলোর তদন্ত করা খুব জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট,” বেনারকে জানান ড. বদিউল আলম মজুমদার, যিনি সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক।

এর আগে এক বিবৃতিতে শারমেন বলেন,  নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপি ও ভোটের মাঝখানে বিএনপির নির্বাচন বর্জনে আমরা হতাশ হয়েছি। সব দলের সমঝোতায় এটির দীর্ঘ মেয়াদি সমাধানের দিকে আমরা নজর রাখছি, যাতে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে।

এর আগে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাট সিটি নির্বাচন নিয়ে ২৮ এপ্রিল প্রায় একই মত দেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।