লক্ষ্য অর্জন না হলেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক, মাথাপিছু আয় বেড়েছে

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.05.15
BD-economics প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে বৃহস্প্রতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা হয়। ১৪ মে,২০১৫
বেনার নিউজ

দেশের মানুষের মাথাপিছু বার্ষিক আয় এখন ১ হাজার ৩১৪ ডলার। এক অর্থবছরের ব্যবধানে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১২৪ ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ১৯০ ডলার।

দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নিয়ে সরকার, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)—কারো পূর্বাভাসই কাজে লাগে নি। এই তিন পক্ষের পূর্বাভাস ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ২, ৫ দশমিক ৬ এবং  ৬ দশমিক ১ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।তবে ব্যুরো জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে জিডিপির যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা এযাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১১-১২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

“সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি খারাপ নয়। চলতি অর্থবছরের একটি বড় সময়ে যদি হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও, অবরোধ ও সহিংসতা না হতো, তবে লক্ষ্যের কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি অর্জন হতো,” ১৪ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল  সাংবাদিকদের একথা বলেন।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থ বছরে বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট টানা ৯০ দিন হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী পালন করেছে।

প্রতি বছরই মে মাসে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয়সহ অর্থনীতির প্রধান কয়েকটি সূচকের প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস।

গত বছরের মে মাসে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জিডিপির প্রাথমিক যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল তাতে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ১৪ মে যে চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশ গত অর্থবছর ৬ দশমিক ০৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বিবিএসের সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, স্থিরমূল্যে চলতি অর্থবছরের জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২৪ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা। আর চলতি মূল্যে এ বছর জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির হার বাড়লেও কৃষি খাতে তা ধরে রাখা যায়নি। বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। গত বছর ছিল ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে সেবা খাতে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ ও শিল্প খাতে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।

এদিকে জিডিপিতে বিনিয়োগের অংশীদারত্ব কিছুটা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে জিডিপিতে বিনিয়োগের অংশ ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ। গত অর্থবছরে ছিল ২৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

“আমরা অর্থনীতি বলতে বুঝি কাজ পাওয়া, ভালো মজুরি এবং জিনিসপত্রের দাম আয়ত্তের মধ্যে থাকা,” জানান ঢাকার কারওয়ানবাজার এলাকার মৌসুমি ফলের ব্যবসায়ি আবদুল হামিদ।

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ওই ব্যবসায়ি গ্রীস্মকালে কাওরানবাজারে মৌসুমি ফল বিক্রি করেন, অন্য সময়ে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।

তাঁর মতে, শ্রমিকের মজুরি যেমন বেড়েছে, তেমনি জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। অর্থনীতির কোথায়, কী উন্নতি হলো, এটা নিয়ে তাঁর ভাবনা নেই।   

মাথাপিছু আয় ১৩১৪ ডলার: দেশের মানুষের মাথাপিছু বার্ষিক আয় এখন ১ হাজার ৩১৪ ডলার। এক অর্থবছরের ব্যবধানে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১২৪ ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ১৯০ ডলার।

২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) তথ্য বিশ্লেষণ করে মাথাপিছু আয়ের এই তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিএস।

মাথাপিছু আয়ের হিসাবে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের পাঠানো প্রবাসী-আয়ও যোগ হয়। তবে মাথাপিছু আয় প্রত্যেক বাংলাদেশির আলাদা বা ব্যক্তিগত আয় নয়। এটি সামগ্রিক আয়, যা মাথাপিছু ভাগ করে দেওয়া হয়।

তিনি জানান, মাথাপিছু আয়ের এই হিসাবে (নমিনাল) বাংলাদেশের অর্থনীতি পৃথিবীতে ৫৮তম।
“আর ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি) আমাদের মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ১৯০ ডলার। ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে আমাদের অর্থনীতি পৃথিবীর ৩৬তম।”

মাথাপিছু আয়ে সার্ক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে শুধু নেপাল ও আফগানিস্তানের ওপরে রয়েছে বাংলাদেশ। নেপাল ও আফগানিস্তানে মাথাপিছু আয় যথাক্রমে ৬৯৮ ও ৬৪৯ ডলার।

সার্ক অঞ্চলে মালদ্বীপে মাথাপিছু আয় সবচেয়ে বেশি, ৮ হাজার ৩৪১ ডলার। শ্রীলঙ্কায় মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ৫৫৭ ডলার, ভুটানে ২ হাজার ৭২৯ ডলার, ভারতে ১ হাজার ৬২৬ ডলার ও পাকিস্তানে ১ হাজার ৩৪২ ডলার।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে লুক্সেমবুর্গের মানুষের মাথাপিছু আয় সবচেয়ে বেশি। তাঁদের মাথাপিছু আয় ১ লাখ ১১ হাজার ৭১৬ ডলার।

প্রসঙ্গ মধ্যআয়ের দেশ:  মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে মাথাপিছু আয়, অর্থনীতির সক্ষমতা ও মানব উন্নয়ন-এ তিনটি সূচকে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। পর পর তিন বছর গড়ে মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার ওপরে থাকলে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার অন্যতম একটি শর্ত পূরণ করা হয়। তবে প্রতিবছর এই মাথাপিছু আয়ের ন্যূনতম নির্দিষ্ট সীমাও পরিবর্তন হয়।

মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে মাথাপিছু আয়ের সীমা চলতি বছরে ১ হাজার ৩৫ ডলার। তিন বছর ধরেই বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় এই ন্যূনতম সীমার ওপরে ছিল।

অর্থনীতি স্থিতিশীল: বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরসের (এসঅ্যান্ডপি) রেটিংয়ে দেখানো হয়েছে। গত ১৩ মে বাংলাদেশের রেটিং গত পাঁচ বছরের মতোই ‘বিবি-’ রেখেছে সংস্থাটি, যার অর্থ হচ্ছে-বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে।

এসঅ্যান্ডপির রেটিং সংস্থার ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির মতে, রপ্তানি আয়, রেমিটেন্স ও বৈদেশিক ঋণ-সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভালো করছে। তবে বাংলাদেশে সংঘাতের রাজনীতি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে এসঅ্যান্ডপি।

“বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশে গত একযুগ ধরে সাড়ে ছয় শতাংশের ওপর প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। একইসঙ্গে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী রয়েছে। এটা অর্থনীতির জন্য বড় সুখবর,” বেনারকে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর আতিউর রহমান।

ড. আতিউর বলেন, “এখন আমাদের দেশে দারিদ্র্য কমছে, বৈষম্য বাড়ছে না। মাথাপিছু আয় বাড়ছে। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতি এখন সঠিকপথেই এগোচ্ছে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।