নতুন ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল‏ হতে যাচ্ছে

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.10.21
BD-economy কর্ণফুলী ইপিজেড-এর একটি দৃশ্য। অক্টোবর, ২০১৫
বেনার নিউজ

দেশের অধিকতর উন্নয়নে পর্যায়ক্রমে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে সরকার। ইতোমধ্যে কয়েকটি অঞ্চলের স্থান নির্ধারণও করা হয়েছে। একই সঙ্গে আরো অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় এ ধরনের স্থান নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বুধবার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বোর্ডের তৃতীয় বৈঠকে এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

তিনি জানান, দেশে স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্টের লক্ষ্যে নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে উৎপাদন, শিল্পায়ন ও বাজারজাতকরণকে বহুমুখীকরণে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।


উদ্দেশ্য বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানো

বর্তমানে দেশে ২১টি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। তবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে এ সংখ্যা আরো বাড়াতে চায় সরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে কৃষিজমি নষ্ট না করে শিল্পায়ন খুবই জরুরি। আর এ জন্যই সরকার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এতে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আরো গতিশীল হবে।

এ লক্ষ্যে বিভিন্ন অঞ্চলের সম্ভাবনার বিষয় বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার সম্পদের পর্যাপ্ততার ভিত্তিতে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ওইসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিবেচনায় নিতে হবে। শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।


অবকাঠমোয় জোর

এদিকে বিনিয়োগে গতি আনতে অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বৃহৎ শিল্প নয়, বরং ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং শ্রমঘন শিল্প গড়ে তোলার ওপর জোর দিচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে মংলা বন্দর সচল করা হয়েছে, নতুন পায়রা বন্দরও গড়ে তোলা হচ্ছে। দেশের যে অঞ্চলে যে পণ্য উৎপাদন সহজ এবং চাহিদা রয়েছে, সেসব এলাকায় সেই সম্পর্কিত শিল্পে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী উদ্যোক্তারা নিজেদের উদ্যোগে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা স্থাপন করতে পারেন। এ প্রসঙ্গে তিনি কতৃর্পক্ষকে ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিবেচনায় নিতে এবং পানি সংরক্ষণাগার ও বৃষ্টির পানি ধরে রাখার বিধান সংযোজনের কথাও মনে করিয়ে দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। নিজের দেশের বা প্রতিবেশী দেশগুলোর যে চাহিদা সেই চাহিদাটাও নিরূপণ করে আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে। শিল্প চালু করার ক্ষেত্রে পরিবেশের ক্ষতি না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখার জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।


‘বিনিয়োগ গন্তব্য হবে বাংলাদেশ’

বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান, কম মজুরিতে শ্রমিক পাওয়াসহ নানা কারণে বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। অর্থনৈতিক অঞ্চল ভিত্তিক সুবিধা তাদের এ আগ্রহকে আরো কয়েকগুন বাড়াবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বেনারকে বলেন, “সরকারের অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত খুবই সময়োপযোগী। কারণ, সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশ বিদেশিদের কাছে বিনিয়োগের জন্য সেরা স্থান। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সুবিধা বিনিয়োগকারীদের আরো বেশি আকৃষ্ট করবে”।

তিনি জানান, ইতিমধ্যে  সরকার চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সুবিধা দিয়েছে। মালয়েশিয়াও এদেশে বিনিয়োগের লক্ষ্যে এ সুবিধা পেতে আগ্রহী। সরকার যদি আগ্রহী দেশগুলোকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী অঞ্চল দিতে পারে, তাহলে সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের নজর থাববে বাংলাদেশের দিকে। ফলে দেশে কর্মসংস্থান যেমন বাড়বে তেমনি বাড়বে উৎপানও। যা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি বাড়াবে।


‘ভুল বার্তা দেবে কেইপিজেড’

১৯৯৯ সালে বিনিয়োগের জন্য চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর পাশে কোরিয়াকে দুই হাজার ৪৯২.৩৫ একর জমি দেয় বাংলাদেশ সরকার। কোরীয় সরকারের মনোনীত প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান করপোরেশন সরকারের নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করে ওই জমিতে একটি ইপিজেড প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।

কিন্তু বাস্তবায়ন ব্যর্থতার অজুহাতে সম্প্রতি সে কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) থেকে দুই হাজার একর জমি ফিরিয়ে নেয়ার কথা জানিয়েছে সরকার। বাকি যে ৫০০ একর জমিতে ইয়াংওয়ান করপোরেশন শিল্পকারখানা স্থাপন করেছে, তা ওই কোম্পানিটির নামেই থাকবে বলে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ভূমি ব্যবহার কমিটির প্রথম সভায় জানান প্রধানমন্ত্রী।

এ বিষয়টি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভূল বার্তা দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারের ‘বাস্তবায়ন ব্যর্থতা’র অভিযোগ খন্ডন করে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ার এলজি, স্যামসাংসহ ১০টি কোম্পানি এখানে বিনিয়োগ করতে এসেছিল। কিন্তু সরকার কেইপিজেডের নামে জমির নামজারি করে দেয়নি। আর বিদেশি কোম্পানিগুলো কেইপিজেডের নামে নামজারি ছাড়া সেখানে বিনিয়োগ করতে চায় না। ফলে জমিসংক্রান্ত এ জটিলতায় বিপুলসংখ্যক বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ না করে ফিরে যায়। এদেশে সুযোগ না পেয়ে স্যামসাং শেষ পর্যন্ত ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করে। সেখান এখন বিলিয়ন ডলারের উপর আয় কোম্পানীটির।

কেইপিজেডের আইন উপদেষ্টা রানা দাশগুপ্ত বলেন, “সরকার কেইপিজেডকে জমি দিয়েছিল শিল্পকারখানা স্থাপনের অবকাঠামো তৈরির জন্য। সেই কাজ কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সঠিকভাবে করেছে। কিন্তু তারা যাতে এখানে শিল্পকারখানা করতে না পারে, সে জন্য অনেক চক্রান্ত হয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ-সংযোগসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও তা দিতে ব্যর্থ হয় সরকার। সে ব্যর্থতা স্বীকার না করে উল্টো জমি কেড়ে নিচ্ছে।”

এদিকে সদ্য বিদায় নেওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি ইয়ান-ইয়ং বাংলাদেশ ছাড়ার আগে বেনারের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, “কেইপিজেড ইস্যুটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভূল বার্তা দেবে। বাজে উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই  আশা করি সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কোন প্রকার তিক্ততা ছাড়াই বাংলাদেশ সরকার যথাযথভাবে কেইপিজেড সমস্যার সমাধান করবে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।