গাজীপুরে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৩৩,মালিকের বিরুদ্ধে মামলা
2016.09.13

গাজীপুরের টঙ্গীতে ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিস্ফোরণ, ভবন ধস ও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় লাশের সংখ্যা বেড়ে মোট ৩৩ জনে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া আরো ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। বেনারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম আলম।
অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় কারখানাটির মালিকসহ আট কর্মকর্তাকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত শনিবার ভোরে টঙ্গী বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এলাকার প্যাকেজিং ও প্লাস্টিকের প্যাকেট এবং ফয়েল তৈরীর ওই কারখানায় বিস্ফোরণের পরপর আগুন লাগে। ওইদিনই ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে আহত অবস্থায় কয়েকজন হাসপাতালে মারা যান। এ ছাড়া ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করা হয় আরো কয়েকটি লাশ। অগ্নিকাণ্ডের পর গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নিখোঁজদের তালিকা টানানো হয়েছে।
দুর্ঘটনার তিনদিন পর ট্যাম্পাকোর আগুন নেভানো সম্ভব হয়। ইতিমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনীর একটি দল। গত সোমবার সকাল থেকে সেনাবাহিনী উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
তবে বিভিন্ন জায়গায় রাসায়নিক দ্রব্যের ড্রাম থাকায় কারখানার ঝুঁকিপূর্ণ ধ্বংসস্তুপ সরাতে মাসখানেক লাগতে পারে বলে জানান সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দলের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম মাহমুদ হাসান।
জানা যায়, দুর্ঘটনার আগের দিনই প্রায় ২৫ টন কেমিকেল সত্তর দশকের পুরোনো ওই ভবনটিতে মজুদ করা হয়েছিল।
এদিকে হাসপাতাল মর্গে শনাক্ত হওয়া লাশগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। তবে যেসব লাশ শনাক্ত করা যাচ্ছে না, সেগুলোর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. আলী হায়দার খান। এজন্য অজ্ঞাত লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ওই দুর্ঘটনায় ৩৪ জন শ্রমিক আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১২ এজন এখনো পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ওই ঘটনার পর আরো কয়েক ডজন শ্রমিক আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
মালিকসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা
প্রাণহানির ঘটনায় কারখানার মালিক সৈয়দ মকবুল হোসেনসহ আট কর্মকর্তাকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
গত রোববার রাতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিক মোহাম্মদ হোসাইন জুয়েলের বাবা আব্দুল কাদের পাটোয়ারী এই মামলাটি করেন বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন টঙ্গী থানার ওসি মো. ফিরোজ তালুকদার।
তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি। এ প্রসঙ্গে ওসি বেনারকে জানান, “আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা করছে পুলিশ।”
এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম আলম বেনারকে বলেন, “ঘটনার পর থেকে কারখানার মালিক সৈয়দ মকবুল হোসেন পলাতক আছেন।”
এ মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন; মকবুলের স্ত্রী পারভিন, কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির আহমেদ, মহাব্যবস্থাপক সফিকুর রহমান, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনির হোসেন, ব্যবস্থাপক (সার্বিক) সমির আহমেদ, ব্যবস্থাপক হানিফ ও উপ সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন।
এছাড়া অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও কয়েকজন আসামি থাকার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে তাজরীন ফ্যাশনস ও রানা প্লাজা ধসে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনার পর দায়ের হওয়ায় মামলায় মালিকদের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে, গতকাল পর্যন্ত তা বিস্তারিত জানায়নি পুলিশ।
এ ঘটনায় তদন্তে পৃথক তিনটি কমিটি কাজ করছে। সবগুলো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গাফিলতি থাকলেও পার পেয়ে যাচ্ছেন মালিকেরা
প্রতিবছরই কোনো না কোনো কারখানা দুর্ঘটনায় অসংখ্য শ্রমিক নিহত হচ্ছেন। এজন্য মালিক ও সরকারের গাফিলতিকে দায়ী করছেন শ্রমিক নেতারা। তাঁরা বলছেন, কারখানাগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মালিকের অবহেলা রয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে নজরদারি যথেষ্ট না হওয়ায় মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে শ্রমিকেরা।
এ ছাড়া রানা প্লাজার ও তাজরীন গার্মেন্টসের মত বড় বড় কারখানা দুর্ঘটনার বিচার শেষ না হওয়ায় অনেকেই সতর্ক হচ্ছে না।
এ বিষয়ে বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্যস্য রাজেকুজ্জামান রতন বেনারকে বলেন, “বিভিন্ন কারখানা মালিকেরা শ্রম আইন মানছে না। অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রেই শ্রমিকদের কাজ করানো হচ্ছে। তাদের এসব গাফিলতির কারণেই গত এক বছরে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।”
ওই শ্রমিক নেতা আরো বলেন, “হাজার শ্রমিকের মৃত্যুর দায় মাথায় থাকলেও গত তিন বছরেও রানা প্লাজার মালিকের বিচার শেষ হয়নি। একই অবস্থা তাজরীন গার্মেন্টসের ক্ষেত্রেও। এসব মালিক নামমাত্র ক্ষতিপূরণ দিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেতেও পার পেয়ে যাচ্ছেন।”