নিহত হাজির সংখ্যা বেড়ে ৬৮, সৌদি মাটিতেই দাফন চান অধিকাংশ স্বজন‏

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.10.09
BD-haji হতভাগ্য নিহত বাংলাদেশি হাজির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
অনলাইন

সৌদি আরবের মিনায় পদদলিত হয়ে নিহতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৬৮ জন বাংলাদেশিকে শনাক্ত করেছে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশ হজ মিশন। তবে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১০৮ জন বাংলাদেশি। এদিকে লাশ শনাক্ত হওয়া বেশিরভাগ হাজিদের স্বজনরা চাইছেন সৌদির মাটিতেই তাদের দাফন সম্পন্ন হোক।

শুক্রবার সৌদি আরব থেকে রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বেনারকে জানান, “বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আমরা ৬৮ জন বাংলাদেশিকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তবে স্বজনদের নিকট থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে নিখোঁজদের যে তালিকা আমরা করেছিলাম, সে তালিকার ১০৮ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।”

নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস ও হজ অফিসের কর্মকর্তারা।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে পবিত্র হজের শেষ পর্যায়ের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সৌদি আরবের মিনায় হাজিরা 'শয়তানের স্তম্ভে' পাথর ছুড়তে যাওয়ার সময় হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে বহু হতাহতের দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত এক হাজার একশ হাজির ছবি প্রকাশ করে সৌদি আরব। বিভিন্ন দেশের কয়েকশ হাজি আহতও হন। তবে শুক্রবার বার্তা সংস্থা এপি তাদের রিপোর্টে নিহতদের সংখ্যা ১,৪৫৩ জন বলে জানায়।

অবশ্য হাজির মৃতের সংখ্যা নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ইরান বলেছে পদদলিত হয়ে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার হবে। ভারত ও পাকিস্তানের কাছে সৌদি সরকারের দেওয়া তালিকায় এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ হাজির মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে।

লাশ উদ্ধারের পর ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করে এবং তাদের শনাক্ত করার জন্য ছবি প্রকাশ করে সৌদি আরব।

ওই ছবির সঙ্গে মিলিয়েই বাংলাদেশিদের শনাক্ত করার কাজ শুরু করেন হজ কর্মকর্তা ও এজেন্সিগুলো। সৌদি আরব থেকে স্বজনের মৃত্যুর খবর পেয়ে অনেকেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন।  


ডিএনএ পরীক্ষা

এদিকে ছবি আর পরিচয়পত্র দিয়ে সকল হাজির পরিচয় নিশ্চিত হতে না পেরে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে লাশ শনাক্তের করার কথা জানিয়েছে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মক্কার আল নূর বিশেষায়িত হাসপাতালে এ নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে।

সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করে হাসপাতালটির পরিচালক আয়মান ইয়ামানি সাংবাদিকদের জানান, সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই হাসপাতালকে নিহত হাজিদের স্বজনদের ডিএনএ সংগ্রহের দায়িত্ব দিয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে মরদেহ শনাক্ত হলে তা রাখা হবে আল মোসেম ইমারজেন্সি কমপ্লেক্সে।

ডিএনএ নমুনা সনাক্ত করতে নিহত হাজিদের ঘনিষ্ঠজন যদি সৌদি আরবে থেকে থাকেন, তাহলে তাদের ওই হাসপাতাল বা কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

যদি নিহত হাজিদের কেউ সৌদি আরবে না থাকেন, তাহলে তাদেরকে  নিজ নিজ দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ডিএনএ পরীক্ষার ফল পাঠাতে বলা হয়েছে। এ নিয়ে পরে দুই দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য হাজিদের নিকট আত্নীয় যেমন-মা, বাবা, ভাই, বোন, ছেলে বা মেয়ের ডিএনএ নমুনা নিতে তারা আগ্রহী।

ইয়েমানি বলেন, হাসপাতালটিতে পূর্ণাঙ্গ ল্যাবরেটরি ও দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্টদের সহায়তার জন্য যথেষ্ট কর্মীও সেখানে আছেন।


‘অধিকাংশই সৌদিতে দাফন চান’

এদিকে লাশ শনাক্ত হলেও বেশির ভাগ হাজির আত্মীয়রা চান সৌদি আরবের মাটিতেই তাদের দাফন হোক। ধর্মীয়ভাবে সৌদি আরবকে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচনা করেই পরিবারগুলো এমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন।

মিনার ঘটনায় নিহত অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক বাবাকে হারানো ঢাকার শেফালি বেগম জানান, “আমরা বাবার লাশ ফেরত চাই না। পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত দিয়েছি সৌদির পবিত্র মাটিতেই তাকে দাফন করা হোক। আর তাতেই বাবার বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে।”

রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহও জানান, নিহতদের আত্মীয়-স্বজনদের অধিকাংশই নিহত হাজিকে সৌদি আরবে দাফনের ইচ্ছার কথা বলছেন।


সেবায় প্রস্তুত ১০৭ নম্বর কক্ষ

নিখোঁজ হাজিদের খুঁজে পেতে স্বজনদের সাহায্য প্রার্থনা করেছে মক্কায় অবস্থানরত বাংলাদেশ হজ মিশন। পররাষ্ট্র  ও ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ হাজিদের স্বজনদের মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশনে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মৃতদেহ সনাক্ত করতে সৌদি আরবে অবস্থানরত স্বজনদেরকে হজ মিশনের ১০৭  নম্বর কক্ষে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।  ফোন করা যাবে ০০৯৬৬-(০)১২৫৪১৩৯৮০ এই নম্বরে। এছাড়া হাজিদের পরিচয় জানাতে ইমেইল করা যাবে missionhajj@gmail.com এই ঠিকানায়।

এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগের দিন সৌদি আরবের মসজিদ আল-হারামে দুর্ঘটনা ঘটে। প্রবল বাতাসের কারণে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত একটি ভারী ক্রেন মসজিদের ওপর ভেঙে পড়ে। এতে শতাধিক মানুষ নিহত হন। এ ছাড়া আহত হন প্রায় ২৫০ জন। চলতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২০ লাখের বেশি মানুষ মক্কায় হজ পালন করতে যান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।