স্বাস্থ্যসেবা পেতে ১৬২৬৩ হেল্পলাইন কাজ করছে
2016.02.24

সন্ধ্যায়ও ভালো ছিল সাত বছরের আহনাফ তাহমিদ। মধ্যরাত থেকে হঠাৎ বমি, পাতলা পায়খানা সঙ্গে জ্বর। মা তাহমিনা ফেরদৌস এত রাতে যাবেন কোথায়!
হঠাৎ চার/পাঁচদিন আগে পত্রিকার একটা খবরের কথা মনে পড়ল। ফ্রিজের গায়ে সাঁটা নাম্বারটা দেখে ফোন করলেন। বাকি কথাগুলো তাঁর মুখ থেকেই শোনা যাক।
“আমি ভোর রাতের দিকে খানিকটা অবিশ্বাস নিয়েই ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করেছিলাম । একটা রিং বাজতে না বাজতেই ওপাশ থেকে পরিষ্কার গলায় একজন ডাক্তার সালাম দিয়ে কথা শুরু করলেন।”
“আমি ছেলের সমস্যার কথা বললাম। উনি আমাকে আশ্বস্ত করলেন। ওষুধ দিলেন। বললেন ছেলের গা মুছিয়ে দিতে। কিছুক্ষণ পর দেখি ছেলেটা আরামে ঘুমোচ্ছে।”
তাহমিনা বেনারকে জানান, ওই ডাক্তার শুধু প্রাথমিক সেবাটুকুই দেননি। বাড়ির কাছে কোন হাসপাতাল আছে সে তথ্যটুকুও দিয়েছেন, যাতে জরুরী প্রয়োজনে সেখানে যেতে পারি।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এক নাম্বার থেকে সব ধরনের স্বাস্থ্য সেবা তথ্য দিতে চাইছেন সাধারণ মানুষকে। ব্রিটেনের উন্নয়ন সংস্থা ইউকেএইডের সহযোগিতায় প্রতি মিনিট ২ টাকা ৩০ পয়সা ব্যয় করে যে কেউ দিনে রাতে ২৪ ঘন্টা এই সেবা নিতে পারছেন।
১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে পাওয়া গেল চিকিৎসক ডা. কবিরুল ইসলামকে। তিনি বললেন, গ্রাম থেকে বেশিরভাগ ফোন আসছে।
“মাঝে মাঝে রোগীর স্বজনেরা এমন উপসর্গের কথা বলেন যেগুলো বিপজ্জনক। যেমন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা হৃদরোগ। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা রোগিকে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই প্রাথমিক সেবার তাৎক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হয়। কাছে কোন হাসপাতালে রোগটির চিকিৎসা হবে, সে সম্পর্কেও তথ্য দেওয়া হয়,” বেনারকে জানান ডা. কবিরুল।
“আমরা ১৬২৬৩ নম্বরটিকে জনপ্রিয় করে তুলতে চাই ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে । এখনও সবাই সেবাটি সম্পর্কে জানেন না বলে সেবা নিতে পারছেন না। নম্বরটিকে স্বাস্থ্য সেবার অন্যান্য খাতের সঙ্গে যুক্ত করার ইচ্ছে আছে আমাদের,” বেনারকে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের প্রধান আবুল কালাম আজাদ।
এই নম্বরটি দিয়ে আর কি কি সেবা দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরই মধ্যে সারা দেশের অ্যাম্বুলেন্সকে নাম, ঠিকানা নিবন্ধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৬২৬৩ নাম্বারে ফোন করলে যে কেউ প্রয়োজনীয় সময়ে যেন অ্যাম্বুলেন্স পান সেই সুযোগ রাখা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, বহির্বিভাগে রোগীদের যেন লম্বা সময় লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট করতে না হয় সে কাজেও ব্যবহার হবে নম্বরটি। বহির্বিভাগে টিকিট কাটার পরপরই রোগী বা তাঁর স্বজনের মুঠোফোনে টেক্সট পাঠানো হবে ১৬২৬৩ নম্বরে। সেখানে লেখা থাকবে রোগীকে ঠিক কখন দেখবেন চিকিৎসক।
“১৬২৬৩ নম্বরটি যেন সবসময় সচল থাকে সেজন্য আমি নিজেই মাঝে মাঝে নম্বরটিতে ফোন করি। এটি একটি শুভ উদ্যোগ। মান ধরে রাখা যেন সম্ভব হয় সে চেষ্টা আমরা সবসময়ই করছি, “ বেনারকে জানান স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ সচিব সৈয়দ মঞ্জুর-ইল-ইসলাম।
প্রযুক্তিখাতে এগিয়ে স্বাস্থ্য খাত
মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে প্রযুক্তিখাতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় সামনের সারিতে আছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম হাসপাতালে ঠিক সময়ে চিকিৎসকেরা উপস্থিত থাকছেন কি না দেখতে ভিডিও কনফারেন্স করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
একই সভায় বলা হয় বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে প্রত্যেক চিকিৎসককে আঙুলের ছাপ দিয়ে কর্মস্থলে প্রবেশ করতে হচ্ছে। ফলে অনুপস্থিতির হার কমেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে কে, কতজন রোগী দেখছেন তার ডাটাবেজ তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাশাপাশি, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরও প্রযুক্তিগত দিকে আগের চেয়ে অনেকটা এগিয়েছে।