হিযবুত তাহরীর যেকোনো উপায়ে টিকে থাকতে চায়
2015.09.14

কিছুদিন পরপর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা ধরা পড়ছে, যারা বাংলাদেশে 'খিলাফাহ' বা খেলাফতভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ১২ সেপ্টেম্বর শনিবার রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে ওই দলের সাতজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ এবং অপরাধ গোয়েন্দা বিভাগ (সিআইডি)। গত ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হিযবুতের অনলাইন সম্মেলন করার সঙ্গে এদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ।
এরা হচ্ছে একরামুল খায়ের ওরফে অপু, মো. আব্দুল কাইয়ুম ওরফে কাইয়ুম, মো. নাজমুল হাসান ওরফে নিপন, মো. ইব্রাহীম শেখ, মো. রাশেদুল ইসলাম শেখ, মো. আরিফুল ইসলাম এবং এ এস এম তারেক আমিন। এদের বয়স ২৫ থেকে ৩২ এর মধ্যে।
এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের লিফলেট, জিহাদি বই ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
“তারা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের মাধ্যমে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছিল। তাদের বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে,” বেনারকে জানান মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহজাহান।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত একরামুল খায়ের, আব্দুল কাইয়ুম, মো. ইব্রাহীম শেখ ও মো. রাশেদুল ইসলাম ইতিপূর্বে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে ছিল, পরে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসে। আর আরিফ ও তারেককে গ্রেপ্তার করা হয়, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে হিযবুত তাহরীরের বিভিন্ন লিফলেট বা প্রচারপত্র পোস্ট করার জন্য।
“অনলাইনে হিযবুত তাহরীরের রাজনৈতিক সম্মেলন ডাকা, প্রতিরক্ষা বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী স্ট্যাটাস ও পোস্ট দিয়ে তারা রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে,” বেনারকে জানান গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ (উত্তর) এর উপ-পুলিশ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম।
তিনি বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র ও নিজেদের আদর্শের লোকদের দিয়ে খিলাফত রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে উস্কানিমূলক প্রচারাভিযান চালাচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ওই সংগঠন ।
এর আগে, গত ২৩ আগষ্ট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন শাহী মসজিদের সামনে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছিল ডিবি পুলিশ। এরা হচ্ছে, আলতামাস আহম্মেদ বাবু ও সৈয়দ জানে আলম রুবেল।
তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জিহাদি ও সংগঠনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয় এবং তাঁরা এখন জেলে আছে।
নিষিদ্ধ হলেও থেমে নেই
রাষ্ট্রীয়ভাবে ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ হলেও থেমে নেই জঙ্গি এই সংগঠনের কর্মকাণ্ড। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘শক্ত’ নজরদারি এড়িয়েই তারা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যেও নানা রকম উসকানিমূলক বার্তা ছড়াচ্ছে নিষিদ্ধ ওই সংগঠনটি।
তবে তাহরীরের কার্যক্রম বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করছে না সরকার। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, তাদের ওইভাবে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
“এই জঙ্গি সংগঠনের কথায় আর্মি কেন, সাধারণ মানুষও বিভ্রান্ত হবে বলে আমি মনে করি না। তারা চোরাগোপ্তা কিছু লিফলেট বিতরণ করে। সভা–সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না। তাই ওদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই,” বেনারকে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, হিযবুত যেকোনো উপায়ে টিকে থাকতে চায়। অন্য অনেক জঙ্গি সংগঠন প্রায় নির্মূল হয়েছে বা ভিন্ন নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। কিন্তু তরুণনির্ভর জঙ্গি সংগঠন হিযবুত টিকে থাকার সব চেষ্টা করছে।
“এ দেশে বহু জঙ্গি সংগঠন মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু কেউই ধর্মপ্রাণ মানুষের সমর্থন পায়নি,” বেনারকে জানান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল।
তাঁর মতে, এ দেশে ইসলাম, খিলাফত, ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও জিহাদের নামে নানা বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা চলছে। নব্বই শতাংশের বেশি মুসলিম অধ্যুষিত দেশে ষড়যন্ত্রকারীরা সুবিধা করতে পারেনি।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও পাকিস্তানে হিযবুতের উপস্থিতি
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) চেয়েও ভবিষ্যতে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর । গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী কাউন্টার টেররিজম এক্সচেঞ্জে (সিটিএক্স) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনই আভাস দেওয়া হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের খবরে জানানো হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় হিযবুত তাহরীরের উপস্থিতি ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস যখন উন্মত্ততা ও গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বর্বর নৃশংসতায় ব্যস্ত, তখন হিযবুত তাহরীর খিলাফত প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি হিসেবে তাদের বৈশ্বিক কাঠামো গড়ে তোলায় বিশেষ মনোযোগী।
আরো বলা হয়, বিশ্বজুড়ে হিযবুত তাহ্রীরের সদস্য সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। আইএসের সদস্য সংখ্যাও এত বেশি নয়। এর সদস্যদের রাসায়নিক, জীবাণুনির্ভর ও জীববিজ্ঞান ভিত্তিক যুদ্ধ শাস্ত্রের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৯৫২ সালে জেরুজালেমে প্রতিষ্ঠিত এ দলটির সদর দপ্তর লন্ডনে। মধ্য এশিয়া, ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় (মূলত ইন্দোনেশিয়া) এর শাখা রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার ভেতর পাকিস্তান ও বাংলাদেশে সংগঠনটির ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে।