ফ্লোরিডার ডিটেনশন সেন্টারে বাংলাদেশিদের অনশন

আমান-উদ-দৌলা, কেট বেডাল ও ইমরান ভিটাচি
2015.12.18
BD-hunger টেক্সাসের একটি ডিটেনশন সেন্টার।
এএফপি

শুক্রবার অবধি ১৩দিন ধরে ফ্লোরিডার ডিটেনশন সেন্টারে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় আটকের পর ৭ বাংলাদেশি অনশন করছেন। শুরুতে শতাধিক সংখ্যায় অনশনে অংশ নিয়েছিল। ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টম এনফোর্সমেন্ট-এর এক কর্মকর্তা বেনার নিউজকে তা নিশ্চিত করেছেন।

তবে নিউইয়র্ক ভিত্তিক অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করেন এমন একটি সংস্থা বলছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আটক কেন্দ্রে অন্তত ২০০ জন অনশনে অংশ নেয়।

আইসিই কর্মকর্তা জানান, “শুক্রবার ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত আটককৃত ৭জন মিয়ামির ক্রোম আটককেন্দ্রে কোনো খাবার খাচ্ছেন না”।

“তারা অনশন শুরু করে ৫ ডিসেম্বর শনিবার থেকে, ১৩ দিন চলছে” জানালেন বেনারকে তিনি।

কিন্তু নিউইয়র্ক-কেন্দ্রিক এনজিও যারা অভিবাসীদের আইন সহায়তা দিয়ে থাকে তাদের হিসাবে মিয়ামি সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কেন্দ্রে আটক প্রায় ২০০ জন অনশন শুরু করে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি, ভারতীয়, পাকিস্তানি, নেপালি, আফগানিস্থানি ও আফ্রিকার বিভিন্নস্থান থেকে আসা মানুষ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আটক কেন্দ্রে অন্তত ৭ স্থানে গত ৮ সপ্তাহ ধরে অনশন চলেছে।

সব আটককৃতরা যুক্তরাষ্ট্রে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছে। তারা ফ্লোরিডা,কলোরোডা,কালিফোর্নিয়া,টেক্সাস,লুসিয়ানা ও আলাবামায় আইসিই আটক কেন্দ্রে বিভিন্ন সময় ধরে অনশনে অংশ নেয়। বেনারকে জানান এই তথ্য ড্রামের(ডিআরইউএম) নির্বাহি পরিচালক ফাহদ আহমেদ।

দুই শতাধিক অনশনকারী ড্রামের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে বিভিন্ন জায়গার মধ্যে যোগাযোগ রাখে। তাদের বেশিরভাগ ডিপোর্টেশন অর্ডার বা বহিস্কার আদেশ কিংবা অনির্দিষ্টকাল আটকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই এই অনশন করে।

তিনি আরো জানান, তাদের আটককাল ১০ মাস থেকে ২৭ মাস ধরে চলছে।

বৃহস্প্রতিবার পর্যন্ত ড্রামের প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী ক্রোম আটক কেন্দ্রে ৬ দক্ষিণ এশিয় তাদের মধ্যে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি সবাই অনশন অব্যাহত রেখেছেন।

আহমেদ আরো জানান, “সমস্যা হলো, তাদের ফোন বন্ধ রাখা হয়েছে তাই তথ্য পেতে হচ্ছে ২য় বা ৩য় পক্ষের কাছ থেকে”।

তার তথ্য অনুযায়ী ডেনভারে ৬জন অনশন অব্যাহত রেখেছেন গত ৩০ নভেম্বর থেকে।

কিন্তু আইসিই কর্মকর্তারা বলছেন এখন কেবল মাত্র মিয়ামির ক্রোম আটক কেন্দ্রে অনশন চলছে।

এই এজেন্সির পক্ষ থেকে বলা হয়, “ একসময় বিভিন্ন আটক কেন্দ্রে একসাথে প্রায় ১০০ জন অনশন শুরু করে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে তাদের সংখ্যা কমে আসে। তাদের সবাই বাংলাদেশি। এখন তারা মাত্র ৭ জন ক্রোম কেন্দ্রে অনশন চালিয়ে যাচ্ছে।

আইসিই’র জন সংযোগ কর্মকর্তা নেস্টর ইয়েগলেসিয়াস বেনার নিউজের এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, “ আইসিই খুবই গুরুত্তের সঙ্গে আটককৃতদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও কল্যাণের দিকে খেয়াল রাখছে এবং আমরা পরিস্থিতির উপর পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রেখেছি”।

আরো জানান, “ ক্রোম ডিটেনশন সেন্টারে মেডিক্যাল ও মেন্টাল হেলথ ইউনিটের লোকজন তাদের দিকে খেয়াল রাখছে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। আইসিই প্রয়োজনে বাইরের প্রাইভেট মেডিক্যাল সার্ভিসেরও সহায়তা নিয়ে থাকে। প্রত্যেকের জন্য কাফেটারিয়ায় ৩ বেলা খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত স্ন্যাক্স কিনে খেতে পারে তারা”।


‘আমাদের হাতে নেই’

এদিকে, ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে  শুক্রবার জানানো হয়, মিয়ামিতে অনশনে অংশগ্রহনকারীদের সম্পর্কে  তাদের কাছে নতুন কোনো তথ্য নেই। বেনারকে জানান মিনিস্টার প্রেস শামীম আহমেদ। তিনি আই্সিই কর্মকর্তাদের কথাই তুলে ধরেন।

ফ্লোরিডায় অনশনে অংশগ্রহনকারীরা এদেশে বৈধ কাগজ পত্র ছাড়াই এসেছে, “ তাই তাদের ব্যাপার আমাদের হাতে নেই, এ ব্যাপারে আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই”, জানালেন শামীম।

এর আগে শামীম বেনারকে ফোনে এবং ইমেইলে জানান, অন্তত ৫ জন মিয়ামিতে এবং ২ জন ডেনভারে অনশনরত আছেন। এর আগে টেক্সাসের এল পাসোতে বাংলাদেশি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীরা ডিটেনশন সেন্টারে অনশন করেছিল।

নিউইয়র্কের ড্রাম জানিয়েছে এল পাসোতে ৫৪ জন ৭-দিন ধরে অনশন করে তাদের মধ্যে বাংলাদেশি, আফগান ও পাকিস্তানিরা ছিল।

এ সম্পর্কে এপি তাদের সোমবারের খবরে জানিয়েছিল, “ ক্রোম সেন্টারে ১০ বাংলাদেশি ২ ডিসেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত খাবার খাচ্ছে না ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে দিচ্ছে না”।  এপি আরো জানায়, মিয়ামির ফেডারেল জাজ আইসিই-কে ‘স্বেচ্ছায় তাদের রক্ত গ্রহন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে’ বলে দেয়।


মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।