আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালঃ একটিকে পুনর্গঠন, অপরটিকে নিষ্ক্রিয়

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.09.15
BD-ict আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের ২ টি আদালতের মধ্যে একটির কাজ বন্ধ রাখা হচ্ছে। ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
বেনার নিউজ

মঙ্গলবার একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মধ্যে একটিকে পুনর্গঠন করে অপরটিকে নিষ্ক্রিয় করেছে সরকার।

শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে অধিকাংশের বিচার শেষ হওয়ায় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

ট্রাইব্যুনাল-১-কে পুনর্গঠন করে ও ট্রাইব্যুনাল-২-কে নিষ্ক্রিয় করে মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

প্রধান বিচারপতির অনুমতি সাপেক্ষে গত বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর  রাষ্ট্রপতি তাতে স্বাক্ষর করেন।

২০১০ সালে একটি ট্রাইব্যুনাল দিয়ে এই বিচার শুরু হলেও কাজ গতিশীল করতে দুটি করা হয়েছিল। মামলার সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে তিন বছর পর তা আগের অবস্থায় ফেরত গেল।

“একাত্তর সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যতগুলো মামলা নিয়ে তদন্ত সংস্থায় কাজ চলছে তাতে ট্রাইব্যুনাল না কমিয়ে আরও বাড়ানো দরকার,”  বেনারকে জানান তদন্ত সংস্থার প্রধান আব্দুল হান্নান খান।

প্রয়োজনে সাতটি বিভাগে সাতটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেতে পারে বলেও মত দেন এই তদন্ত কর্মকর্তা।

যাত্রা শুরুর পর থেকে গত সাড়ে চার বছরে  দুটি ট্রাইব্যুনালে ২১টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। কাযর্কর হয়েছে দুটি ফাসির রায়। বাকিগুলোর বিচার চলছে।

চলতি বছর এসেছে ছয়টি মামলার রায়।  পৃথক দুটি ট্রাইব্যুনালে আরও ৫ মামলায় মধ্যম সারির ৯ যুদ্ধাপরাধীর বিচার চলছে।

“ দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মধ্যে একটি আপাতত বিচার পরিচালনা করবে। অপরটি অগঠিত থাকবে। সেটা বাতিল বা বিলুপ্ত হবে না। সরকার যখনই মনে করবে তখনই অপরটি সক্রিয় হবে, ” বেনারকে জানান আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক ।


৩ বিচারপতিকে হাইকোর্টে ফেরত পাঠানো হচ্ছে

পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান হয়েছেন এই ট্রাইব্যুনালের সাবেক সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য করা হয়েছে ট্রাইব্যুনাল-২-এর সাবেক সদস্য বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও হাইকোর্টের বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীকে।


এখন একক ট্রাইব্যুনালে নেতৃত্ব দেবেন বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হক। তার সঙ্গে থাকবেন ট্রাইব্যুনালে থাকা বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম। তাদের সঙ্গে নতুন করে যোগ দেবেন হাই কোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী।

ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং ট্রাইব্যুনাল-২ এর সদস্য বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া হাই কোর্টে ফেরত যাবেন।

“আমরা সন্ধ্যায় এ- সংক্রান্ত জিও হাতে পেয়েছি। দুটি ট্রাইব্যুনাল ‘একীভূত’ করে মঙ্গলবার আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন হয়েছে,”  বেনারকে জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ ও ২ এর বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বিবেচনায় উক্ত ট্রাইব্যুনাল দুটিকে একীভূত করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন আবশ্যক।  অন্য ট্রাইব্যুনালটি পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত অগঠিত অবস্থায় থাকবে।”

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ বিচারপতি নিজামুল হককে চেয়ারম্যান, বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এ কে এম জহির আহমেদকে সদস্য করে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এরপর আরও তিনজনকে যোগ করে প্রথম ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ টি এম ফজলে কবীরকে চেয়ারম্যান করে ২০১২ সালের ২৩ মার্চ দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়।

তিন সদস্যের দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই বিচারক হন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং ট্রাইব্যুনালের নিবন্ধক মো. শাহীনুর ইসলাম। বিচারপতি ফজলে কবীরের স্থলে প্রথম ট্রাইব্যুনালে সদস্য করা হয় বিচারপতি আনোয়ারুল হককে।

ওই বছরের আগষ্টে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জহির আহমেদ পদত্যাগ করলে শূন্যস্থানে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেনকে নিয়োগ দেয় সরকার।

স্কাইপে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথিত কথোপকথন নিয়ে বিতর্কের মুখে বিচারপতি নিজামুল হক পদত্যাগ করলে ফজলে কবীরকে চেয়ারম্যান করে ১ নম্বর ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়।

তিনি অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান হিসাবে আসেন। এই ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।

দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসাবে ছিলেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলাম।


ছয়’শ মামলা বিচারাধীন, ট্রাইবুনালের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি

হান্নান খান বলেন,  “আমরা বরাবরই বলে আসছি সরকার যদি প্রয়োজন মনে না করে তাহলে ট্রাইব্যুনাল বন্ধও করে দিতে পারে।  তবে আমি বলবো তদন্ত সংস্থায় এখন প্রায় ছয় শ’ মামলা বিচারের অপেক্ষায় আছে। এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়াতেই হবে।”  

এসব মামলা ট্রাইব্যুনালে আসছে না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,  “তদন্ত শেষ না করে মামলার নথিপত্র, তথ্য-উপাত্ত, সাক্ষী-সাবুদ চূড়ান্ত না করে ট্রাইব্যুনালে পাঠানো যায় না।”

সাতটি বিভাগে সাতটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করার দাবি জানিয়ে আসছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

“আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাই। কয়েকজন রাজাকারের শাস্তি হওয়ার মানে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শেষ হওয়া নয়,”  বেনারকে জানান নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।