লিবিয়ায় আইএসের হাতে আটক দুই বাংলাদেশি দেশে ফিরলো

ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরী
2015.04.07
BD-islamist লিবিয়ায় আইএস জঙ্গিদের হাতে আটকের পর মুক্তি পেয়ে গত ৬ এপ্রিল দেশে ফিরে আসে দুই বাংলাদেশি। ছবিতে মুহাম্মদ আনওয়ার হোসেনকে ঢাকা বিমান বন্দরে তার আত্নীয়-শ্বজনরা বরণ করে নেয়। ৬ এপ্রিল,২০১৫
বেনার নিউজ

গত মাসে লিবিয়ার তেলের খনিতে আইএসের সুন্নি জঙ্গিদের হাতে আটক থাকার পর মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলো দুই বাংলাদেশি।
এই দুই বন্দির একজন জামালপুর জেলার হেলালউদ্দিন এবং অন্যজন নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জের গয়েশপুর গ্রামের আনওয়ার হোসেন।আটককারীদের প্রতি মুসলিম পরিচয় দিয়ে তাদের প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা দেখিয়ে তারা মুক্তি লাভ করে অবশেষে তাদের স্বজন-পরিজনদের কাছে ফিরে আসতে পেরেছে।

গত ৬ মার্চ  লিবিয়ার পোর্ট সিটি আলঘানীর একটি তেল খনিতে আইএস যোদ্ধারা দুই বাংলাদেশি সহ ৯ জন বিদেশী শ্রমিককে আটক করে ধরে নিয়ে যায়। ঐ সময় তেলখনির গার্ডদের তারা শিরোচ্ছেদ করে।
আনওয়ার তার গ্রামের বাড়ি থেকে ফোনে বেনার নিউজকে জানায়, “ওদের ৩ জন বন্দুকধারী আমাদের ৯ জনকে একটা ট্রাকে তুলে অজানা গন্তব্যে নিয়ে যায়। তারা আমাদের জাতীয়তা ও ধর্ম কি জানতে চায়। আমাদের মধ্যে  ৬ জন ছিলো খ্রিস্টান ৩ মুসলিমের মধ্যে একজন ছিলো ঘানার”।

আনওয়ার ও হেলাল দু’জনই নিশ্চিত ছিলো তাদের শিরোচ্ছেদ করা হবে, যেভাবে তারা ইউটিউবে আইএস-এর নিষ্ঠুরতা দেখেছে।
আনওয়ার আরো জানায়, “ তারা ৬ জন খ্রিস্টানকে আমাদের থেকে আলাদা করে আরেক জায়গায় নিয়ে যায়, আর আমাদের দুইজনকে একটা রুমের মধ্যে কয়েক দিনের জন্য ফেলে রাখে।আমরা জানিনা তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে। আমরা শুধু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি।আমরা খেতেও ভুলে গেছি এমনকি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেও ভুলে গেছি”।

“যখনই তারা আমাদের কাছে এসেছে তখনই মনে হয়েছে এখন আমাদের মরতে হবে।সেটা ছিলো ভয়াবহ অভিজ্ঞতা”।

চুপচাপ শুনছিলো তাদের কথাবার্তা

হেলাল আটককারীদের কথাবার্তা শুনতে পেয়েছে, সে মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনছিলো এবং বুঝতে চেষ্টা করছিলো হয়তো তাদের একটা পথ বের হবে। “তারা বলছিলো যে তারা সরকারের বাহিনীর লোকজনকে খুন করেছে এবং খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্ম বিশ্বাসীদের খুন করেছে। তাদের মতে, যে সব মুসলিম সপ্তাহে একবার নামাজ পড়ে না তারাও কাফের তাদেরকে খুন করি”।

আইএসের যোদ্ধারা ভিন্ন ধর্মের লোকদের চাইতে ঐসব মুসলিমদের উপর রেগে যায় যারা নিয়মিত নামাজ পড়েনা।

আইএস-এর একজন আটককারী হেলালকে বলছিলো, “তারা শুধু নামে মুসলিম আসলে তারা কাফের”, তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করে আমাদের কোনো ক্ষতি করবে না, আমরা যেহেতু সব সময় আল্লাহ আল্লাহ করছিলাম এবং নিয়মিত নামাজ পড়ছিলাম”।

আনওয়ার বেনার নিউজকে জানায়, আটক অবস্থায় প্রথম দিকে তারা ৩টি আলাদা রুমে রাখে। “তারা খুব ঘন ঘন অবস্থান বদল করছিলো। তারা আমাদের সাহারা মরুভূমিতে রাতদিন কাটাতে বাধ্য করে। তারা আমাদের দিনে একবার ছাতু জাতীয় খাবার ও অন্য কিছু খাবার খেতে দেয়। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবারো আমাদের কোনো হিতাহিত জ্ঞান ছিলো না”।
“ সামান্য পরিমান পানি আমাদের দেয়া হয়।পর্যাপ্ত পানি ছাড়া কেউ কি সাহারা মরুভূমিতে এক মিনিট থাকতে পারে?” জানতে চায় সে।

হেলাল জানায়, আইএস যোদ্ধারা আমাদের কাছে টাকা-পয়সা চায় নাই।আটককারী যারা আমাদের পাহারায় ছিলো তারা সবাই ছিলো আরব জাতির।তারা সবাই ভারি অস্ত্রে সজ্জিত ছিলো কেউ তাদের সাথে কথা বলছিলো না।

আনওয়ার জানায়, সে কিছুটা আরবী বোঝে। “ অধিকাংশ সময় তাদের কাছ থেকে আমরা দূরে থাকতাম যাতে তারা যেনো মনে না করে যে আমরা তাদের নিজেদের মধ্যকার কথা শুনছি”।

বাড়িতে ফোনে কথা হয়

গত ২৫ মার্চ তাদের মুক্তি পাবার কয়েকদিন আগে আইএস-এর যোদ্ধারা বলাবলি করছিলো যে, দুই-এক দিনের মধ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের তারা ছেড়ে দেবে।তারা অবশেষে হেলালকে তার স্ত্রী আলেয়ার সাথে ফনে কথা বলার সুযোগ দেয়। তাকে তখন জানিয়েছিলো যে খুব শীঘ্রই সে ছাড়া পাবে।

মুক্তির পর তারা দুইজন সিত্রের তেল খনিতে ফিরে যায় সেখানেই তারা অপেক্ষা করে মঙ্গলবার পর্যন্ত, লিবিয়ায় বাংলাদেশ এমবেসী তাদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা পর্যন্ত।

আলেয়া বেনার নিউজকে বলেন, “আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া, কৃতজ্ঞ মিডিয়া ও অন্যান্য যারা তাদেরকে সাহায্য করেছেন এবং প্রার্থনা করেছেন তাদের প্রতি যে আমি আমার স্বামীকে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেয়েছি”।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।