এবার ২৫ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আনসারুল্লাহ’র হত্যার হুমকি
2015.06.17

আবারও ধর্মীয় উগ্রপন্থি সংগঠন আনসারুল্লাহ’র নামে বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে আগের হুমকির সত্যতা পুলিশ খুঁজে পায় নি।
এবারের চিঠিতে হুমকির তালিকায় রয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ স স ম আরেফিন সিদ্দিকীসহ আরো ২৫ জন।
এর আগে দুই দফা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হত্যার হুমকি দিয়ে এ ধরনের চিঠি পাঠানো হলেও পুলিশ বলছে, তদন্তে সেসব চিঠির সত্যতা মেলেনি। আর তৃতীয় দফার এ চিঠির বিষয়েও তদন্ত চলছে; পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-১৩’ এর নামে ডাকযোগে পাঠানো তৃতীয় দফার এই হুমকির চিঠি মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে আসে বলে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. আমজাদ আলী।
তিনি বলেন, “যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে আনসারুল্লাহ এগিয়ে যাচ্ছে, সেই অগ্রযাত্রায় যারা বাধা সৃষ্টি করবে তাদেরকে হত্যা করা হবে।প্রথম আঘাতেই যাদের নিশ্চিহ্ন করা হবে, তাদের একটি প্রাথমিক তালিকা দেয়া হল- বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ চিঠি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শাহবাগ থানায় একটি জিডি করা হয়।”
নতুন এই চিঠির তালিকায় থাকা অধিকাংশই সংবাদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কর্মী উল্লেখ করে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বেনারকে জানান, “হুমকির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জিডি করার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ”।
এর আগে ২১ মে ‘আল কায়েদা-আনসারুল্লাহ বাংলাটিম: ১৩’ এর নামে চিঠি পাঠিয়ে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামসহ ১০ জনকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। আগের চিঠিতেও অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপক জাফর ইকবাল, ইমরান এইচ সরকারের নাম ছিল।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোনতাসিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “আগেও দুইবার ধর্মীয় উগ্রপন্থি সংগঠনের নামে এ ধরনের হুমকি আসে। কিন্তু পুলিশি তদন্তে চিঠিগুলোর বিষয়ে কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। কারা এ ধরনের কাজ করছে তারও প্রমাণ মেলেনি। এমনকি আল-কায়েদার বিষয়েও কোন প্রমাণ আমাদের হাতে আসেনি। তবে সর্বশেষ চিঠির বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বে সঙ্গে বিবেচনা করে তদন্ত পরিচালনা করছি। এছাড়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিরাপত্তা জোরদার করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।”
তবে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা এভাবে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন অভিযোগ এনেছেন হুমকিপ্রাপ্তরা। তাদের দাবি, একটার পর একটা হুমকির পরেও আসামিদের ধরতে না পারা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার উদাহরণ ছাড়া কিছু নয়। পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো তেমন কোন বাড়তি নিরাপত্তার দেখা পাননি বলেও অভিযোগ করেন তারা।
এ বিষয়ে হুমকি প্রাপ্ত ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বেনারকে বলেন, জঙ্গিরা প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে ব্লগারদের হত্যা করছে। অথচ পুলিশ সেসব হত্যাকাণ্ডের মোটিভ খুঁজে পায় না। পুলিশের সে মেধাই নেই। সাইবার যুদ্ধে জঙ্গি মৌলবাদীদের থেকে তারা ১০০ বছর পিছিয়ে আছে। সেই ধারাবাহিকতায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মূলত: জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্তরাই এসব কাজ করছে। সরকার জামায়াত নিষিদ্ধ না করার ফলেই বৃদ্ধি পাচ্ছে জঙ্গিবাদ।
হুমকির পরে পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত কোন নিরাপত্তার দেখা পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, “এভাবে ব্যক্তি ধরে নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত যদি সরকার নিয়েও থাকে তা সঠিক নয়। দেশের সকল মানুষকে জঙ্গিদের হাত থেকে নিরাপত্তা দিতে হবে। তার জন্য জামায়াত নিষিদ্ধ, মাদ্রাসাগুলোতে মওদুদীবাদ প্রভৃতি শিক্ষা বন্ধ করতে হবে।”
এদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, “গোয়েন্দারা অপ্রকাশ্যে এসব বিশিষ্ট নাগরিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিচ্ছে। পাশাপাশি হুমকিদাতাদের চিহ্নিত করে শিগগিরই বিচারের আওতায় আনা হবে; এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।”
হুমকির চিঠিতে আছে যাদের নাম
চিঠিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাড়াও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মোহাম্মদ এ আরাফাতের নাম রয়েছে।
সংবাদ কর্মীদের মধ্যে বৈশাখী টেলিভিশনের সিইও সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক শাহীন রেজা নূর, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবেদ খান, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, এটিএন নিউজের সিইও মুন্নী সাহা, অঞ্জন রায় ও টেলিভিশন উপস্থাপক নবনীতা চৌধুরী আছেন এই হুমকি তালিকায়।
এছাড়া একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, রামেন্দু মজুমদার, সৈয়দ হাসান ইমাম, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, মঞ্চের আরেক অংশের নেতা কামাল পাশা চৌধুরী, মঞ্চের কর্মী মাহমুদুল হক মুন্সী, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু, আকলিমা সুলতানা, এস এম শাহীন ও সঙ্গীতা ইমামের নাম রয়েছে এবারের তালিকায়।