আউটসোর্সিং-এ ৫ বছরে ২ লাখ কর্মসংস্থানের লক্ষ্য
2015.12.09

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আউটসোর্সিংকে আয়ের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ সরকার। গার্মেন্টসের চেয়ে সম্ভাবনাময় খাত বিবেচনায় নিয়ে আগামী বছরগুলোতে এ খাত থেকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং অসংখ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নানা উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া এ খাতে উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে তরুণদের।
বুধবার প্রথমবারের মত বাংলাদেশে ‘বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সামিট-২০১৫’ শুরু হয়েছে। দেশে আউটসোর্সিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়াতে সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং যৌথভাবে দুদিনের বিপিও সামিটের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘বর্তমানে আউটসোর্সিং থেকে আয় ১০০ মিলিয়ন ডলার এবং ২৫ হাজারের মত কর্মসংস্থান রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে এই আয় এক বিলিয়ন ডলার এবং দুই লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য রয়েছে।’
‘ইতিমধ্যে সরকারের আইসিটি বিভাগ থেকে আউটসোর্সিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার মধ্যে গত বছর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার জনকে। আর আগামী বছর থেকে ৫০ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে’।- যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী পুত্র জয়।
চাই তরুণ উদ্যোক্তা
এই খাতকে আরো বড় করতে মানবসম্পদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি কেরছে সরকার।
এ বিষয়ে জয় বলেন, “আউটসোর্সিংয়ে ১৮ থেকে ৩৫ বছরের তরুণদের সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে মন্তব্য করে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘আমর এ খাতে আমাদের ভবিষ্যৎ তরুণদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে চাই। এটাই হচ্ছে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের, আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্দেশ্য”।
তিনি জানান, ছয় বছর আগে আইসিটি খাতে মোট রপ্তানি ছিল ২৬ মিলিয়ন ডলার এবং কর্মসংস্থান ছিল মাত্র কয়েক হাজার মানুষের। কিন্তু এসময়ের মধ্যে আইসিটি খাতের রপ্তানি ৩০০ মিলিয়ন পার হয়ে গেছে এবং দুই লাখেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। যাদের মধ্যে বিপিও সেক্টরেই কর্মসংস্থান আছে ২৫ হাজারের বেশি। অথচ ছয় বছর আগে বিপিও সেক্টর বলতে বাংলাদেশে কিছুই ছিল না।
তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির উপর গুরুত্বরোপ করে তিনি আরো বলেন, “আমরা চাই, আমাদের তরুণরা উদ্যোক্তা হোক। নিজেদের উদ্যোগে তারা আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং, আইটি কোম্পানি করুক, যেখানে তারা নিজেদের কর্মসংস্থান এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারবে এবং দেশটাকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।”
সম্ভাবনা পোষাক খাতের চেয়েও বেশি
তৈরি পোষাক খাতের চেয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে ধরা হচ্ছে। তাই এ খাতে শিক্ষার্থী বাড়ানোর চিন্তাও করছে সরকার।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর তরুণ এই তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতের চেয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আয় কয়েকগুণ বেশি এবং ভবিষ্যতে পোশাক রপ্তানির চেয়ে আইটি পণ্য রপ্তানি বেশি হওয়া উচিত।’
এ লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে পড়ার আগ্রহ বাড়ানোর পরামর্শ দেন জয়।
আসছে প্রণোদনামূলক কার্যক্রম
আউটসোর্সিংয়ে আরো এগিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনামূলক কার্যক্রমের কথা ভাবা হচ্ছে।
এ বিষয়ে এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সারদের সহজ শর্তে ঋণ ও কম খরচে ইন্টারনেট সেবার ব্যবস্থাসহ একগুচ্ছ প্রণোদনামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ করে এক্সেসরিজ কেনাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।’
শুধু ফ্রিল্যান্সারদের জন্য একটি বিশেষ প্যাকেজের উল্লেখ করে পলক বলেন, ‘এর আওতায় প্রত্যেক নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সারকে একটি কার্ড দেওয়া হবে। এই প্যাকেজের আওতায় প্রত্যেক ফ্রিল্যান্সার কম খরচে উচ্চ গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা ভোগ করতে পারবেন।’
আগামী ২০২১ সালের মধ্যে এ খাত থেকে তিন বিলিয়ন ডলার আয়ের পরিকল্পনা কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এরই মধ্যে আমরা কিছু প্রকল্প নিয়েছি এবং শিগগিরই আরও কিছু প্রকল্প নেওয়া হবে।
সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত
আউটসোর্সিংসহ আইসিটিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা নিয়ে সরকারের এসব উদ্যোগ ও পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিছে দেশের ফ্রিল্যান্সাররা।
দীর্ঘ সাত বছর ধরে এ পেশায় থাকা মামুনুর রশীদ বেনারকে বলেন, “বলা যায় তরুণ সমাজের আগ্রহেই দেশের আউটসোর্সিং শিল্প আজ একটি কাঠামোতে রুপ নিয়েছে। কিন্তু এখন এ শিল্প বিস্তারে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন। তরুণ সমাজের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞান বিকাশের কাজে সরকারের এসব উদ্যোগ সত্যি প্রসংশনীয়। কিন্তু পরিকল্পনার সঙ্গে মিল রেখে সেসবের বাস্তবায়নও দ্রুত করতে হবে। কারণ, পৃথিবী প্রতিমুহুর্তে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতার যুগে কেউ কারো জন্য অপেক্ষা করে থাকবে না”।
আউটসোর্সিংয়ে এগিয়ে নিতে ইন্টারনেটের মূল্য কমানোসহ তথ্যপ্রযুক্তির এক্সেসরিজ কেনার ক্ষেত্রে আরো শিথিলতা আনার দাবিও জানান এই তরুণ উদ্যোক্তা।