হুকুমের অভিযোগে অভিযুক্ত খালেদা

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.05.07
BD-politics বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। এপ্রিল, ২০১৫
বেনার নিউজ

‘বিরোধী দল নিপীড়নের সরকারী কৌশল’ হিসেবেই এই মামলা করা হয়েছে, অভিযোগ বিএনপির।

যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমার হামলার এক মামলায় হুকুমের আসামি করে প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। এর ভিত্তিতে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা পেলেই খালেদাকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া শুরু করবে বলেও জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তবে এটি বিরোধী দল নিপীড়নে সরকারের আরেকটি কৌশল বলে অভিযোগ এনেছে বিএনপি।

গত ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে ওই পেট্রোল বোমা হামলায় ২৮ জন যাত্রী অগ্নিদগ্ধ হয়। সেসময় বিএনপির ডাকে দেশে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হচ্ছিল।
বিএনপির আন্দোলনের সময় বাংলাদেশে এরকম বহু পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা ঘটলেও এই প্রথম খালেদা জিয়াকে সরাসরি অভিযুক্ত করে এ ধরণের অভিযোগপত্র দেওয়া হল।

বুধবার যাত্রাবাড়ীতে বাসে আগুন দিয়ে হত্যা মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগপত্র জমা দেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, যেখানে খালেদাসহ ৩১ জনকে পলাতক দেখানো হয়েছে। মামলার একটি অভিযোগপত্র বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এবং অন্যটি হত্যা ও পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধার অভিযোগে। এ মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে আগামী ২৮ মে। রুহুল কবীর রিজভীসহ কারাগারে আটক সাতজন বিএনপি নেতা এবং নিখোঁজ সালাহ উদ্দিন আহমদকেও আসামি করা হয়েছে।

এ মামলায় সোহাগ ও লিটন নামে আটকৃত দুই আসামি বাসে আগুন দেওয়ার জন্য চার হাজার টাকা দিয়ে বিএনপির কয়েকজন নেতা তাদের নিয়োগ করেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবী ও দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দীন খোকন এই অভিযোগপত্রকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে বেনারকে বলেন, সারা দেশ জানে ওই সময় বালুর ট্রাক দিয়ে কার্যালয়ের গেট আটকে দিয়ে খালেদা জিয়াকে পুলিশ অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। সেই পুলিশই এখন অভিযোগপত্র দিয়েছে। এটি সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যতিত আর কিছুই নয়।’

‘আর সে উদ্দেশ্য পূরণে পুলিশকে নগ্নভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তবে খালেদাকে ‘মানুষ হত্যাকারী’ উল্লেখ করে শুধু অভিযোগপত্র জমা দিয়ে থেমে না থেকে তাকে দ্রুত গ্রেফতারের আহবান জানিয়েছেন  নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।

তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে খালেদা জিয়া ও তাদের দোসর জামায়াত যাদের হত্যা করেছে, তাদের পরিবারের দাবি খালেদাকে গ্রেফতার করুন।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের মামলা প্রতিহিংসার রাজনীতিকে উসকে দেবে। দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকারের উচিত সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা।

এ বিষয়ে রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বেনারকে বলেন, ‘কিছুদিন আগেও যে রাজনৈতিক পরিবেশ আমরা দেখেছি সেখানে আর প্রত্যাবর্তন করতে চাইনা। রাজনীতির পরিবেশকে সহযোগিতা এবং সহনীয় করতে সকলের প্রতি সহনশীল মনোভাব থাকা জরুরি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সকলকে নিয়েই কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে সকলের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। ’

খালেদার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগপত্রে বলা হয়, ৫ জানুয়ারি খালেদা দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেন। এর ধারাবাহিকতায় ২৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনার দুদিন আগে ওই হামলার ছক চূড়ান্ত করা হয় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার অ্যাপোলো হাসপাতালের পাশের একটি বাসায়। সেখানে  বৈঠক করেন হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা। হামলার বিষয়টি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় যাত্রাবাড়ী এলাকার জনি নামে মাঠপর্যায়ের এক ছাত্রদল কর্মী।

লেগুনাচালক শহীদুল্লাহ, বোমা রাসেল, সাব্বির, সোহাগ ও পারভেজসহ কয়েকজন গাড়িতে আগুন দেওয়ার সময় ঘটনাস্থলের আশপাশে উপস্থিত ছিলেন।

২৩ জানুয়ারি রাতে যাত্রাবাড়ীতে গ্লোরি পরিবহনের একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলার ঘটনায় ৩১ জন দগ্ধ হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা যান। এ ঘটনায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ যাত্রাবাড়ী থানায় দুটি মামলা করা হয়।

ওই মামলায় ২০-দলীয় জোটের আরও ৬৯ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছিল। এজাহারের আসামিদের মধ্যে ২৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। অন্যদের অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।

চাঞ্চল্যকর ঘটনা হিসেবে যাত্রাবাড়ী থানা থেকে মামলাটির তদন্তভার ন্যস্ত হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। এরপর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা হামলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেন। তাদের মধ্যে সোহাগ, লিটন ওরফে সাব্বির, রফিকুল ইসলাম ওরফে মাসুম ও নজরুল ইসলাম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে দেশব্যাপী সহিংসতা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কুমিল্লা, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন থানায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে বেশ কিছু মামলা হয়। সেসময় গুলশানে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের মিছিলে হামলার ঘটনায় দায়েও করা মামলায়ও খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়।

কিছুদিন আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পরপর তিন ধার্য তারিখে হাজির না হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে একবার গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়। তবে সে গ্রেফতারি পরোয়ানা দীর্ঘ দিনেরও থানায় পৌঁছায়নি। ইতিমধ্যে তিনি আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন।  

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।