বাংলাদেশের গনতন্ত্রের সংকট, ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থা
2015.05.08

বাংলাদেশ কি কর্তৃত্বপরায়ন শাসন ব্যবস্থায় চলে যাচ্ছে? এই প্রশ্নটি উঠেছে গত ১৪ মাসে দু’টি প্রধান নির্বাচনে মারাত্নক অনিয়ম লক্ষ্য করেই।
শাসকগোষ্ঠি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গত বছর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেীবং গতমাসে সিটি নির্বাচনে ‘ব্যাপক’ কারচুপির অভিযোগ ওঠে।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অংশগ্রহন ছাড়াই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় পর পর ২য় বারের মতো অধিষ্ঠিত করে।
সিটি নির্বাচন নির্দলীয় হলেও প্রধান প্রধান দলগুলি নিজেদের প্রার্থী দেয়, কিন্তু বিএনপি নির্বাচনের দিন কয়েক ঘন্টার মধ্যে তাদের প্রার্থীতা সরকারের বিরুদ্ধে ‘ব্যাপক কারচুপি’র অভিযোগ এনে প্রত্যাহার করে নেয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ২৮ এপ্রিল নির্বাচনের দিন প্রেস কনফারেন্স করে সাংবাদিকদের জানান, “আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও ইলেকশন কমিশন উভয়েই সরকারী প্রার্থীদের ব্যাপক কারচুপিতে সাহায্য করছে”।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা ঘটছে মূলত নির্বাচনকালীন ‘কেয়ার টেকার’ ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাদ দেয়ার কারণে। যা উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধনের সুযোগটি গ্রহন করে। অথচ এর আগে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্দলীয় নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে এবং প্রভাবমুক্ত নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে।
“ ক্ষমতায় আসার পর প্রতিটি সরকারই ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার জন্য নির্বাচনী ব্যবস্থা নিজেদের প্রভাবে রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে” বেনারকে বলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামছুল হুদা। তিনি আরো বলেন, “এটাই কঠিন সত্য যে বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতায় থেকে কখনো নির্বাচনে হারে নাই, কারণ, নির্বাচন কমিশন ও আইন শৃংখলা বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রনে থাকে”।
৯০ সালে গণ-অভ্যুত্থানের মাধমে সামরিক একনায়ক জেনারেল এরশাদের পতনের পর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ধারনাটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। ৯০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই ব্যবস্থায় কয়েকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
হুদা আরো বলেন, “ নির্বাচিত হবার পর কয়েক বছরের মধ্যে অনিয়ম-দূর্নীতির কারণে জনপ্রিয়তা হারান এবং কেয়ার টেকারের অধীনে নতুন নির্বাচনে বিপুলভাবে পরাজিত হবারও রেকর্ড করে তারা। ক্ষমতায় থাকা কালে প্রত্যেকেই গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন নির্বাচন কমিশন বিচার ব্যবস্থা ও দূর্নীতি বিরোধী কমিশন কব্জা করার চেষ্টা করেন”।
সুশাসনের জন্য আন্দোলনকারী নাগরিক প্রতিষ্ঠান-সুজন’এর প্রেসিডেন্ট বদিউল আলম মজুমদার বেনার নিউজকে বলেন, “এই দূর্ভাগ্যজনক ঘটনা বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয়ের জন্য সত্য, যারা ৯০ সালের পর একের পর এক ক্ষমতায় ছিলেন”।
বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজের পরিচালক ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্টদূত হুমায়ূন কবীর বেনার নিউজকে বলেন’ “২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও সিটি নির্বাচনে কারচুপির ফলে আন্তর্জাতিক মহলে ধারনা তৈরি হয়েছে যে, নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার ছাড়া সূষ্ঠ নির্বাচন বাংলাদেশে সম্ভব নয়”।
নির্বাচন কমিশনের সাবেক কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বাংলাদেশের গনতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তারমতে ক্ষমতাসীন দল পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ব্যবহার করায় নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর মানুষের আস্থা উঠে গেছে। বেনারকে বলেন, “জনগনের উপর আস্থা রাখা ছাড়া দেশের গনতন্ত্র কোনোদিন শক্তিশালী হতে পারবে না। কেবল সুস্থ গনতন্ত্রই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসকে দূর করতে পারে এবং দেশের উন্নয়ন ঘটাতে পারে”।
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম একটি টিভিতে বলেন, “এই সব অভিযোগ সবই অপপ্রচার ও অযথার্থ, বাস্তবের সঙ্গে কোনো মিল নেই’। তার মতে, “অবরোধ ও হরতালের নামে বিএনপি পেট্রল বোমায় নিরিহ মানুষকে হত্যা করায় তারা জন সমর্থন হারিয়েছে, ফলে নির্বাচনে আসতে তারা ভয় পায়”।