সাতক্ষীরায় আবারো মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাংচুর
2015.10.19

গির্জার যাজক লুক সরকারকে হত্যা প্রচেষ্টার পর কিছুদিন পার না হতেই সাতক্ষীরায় পুজামন্ডপে দূর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। সদর উপজেলার বাবুলিয়া হাইস্কুল সংলগ্ন সার্বজনীন দুর্গাপুজো মন্ডপে দুর্বৃত্তরা তিনটি দুর্গা প্রতিমা ভাংচুর করেছে। শনিবার শেষ রাতে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ৬ অক্টোবর আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর কর্মকারপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্ডপেও পাঁচটি প্রতিমা ভাংচুর করে দুর্বৃত্তরা।
পুলিশ এবং স্থানীয় হিন্দু নেতারা জানান, অচেনা দূর্বৃত্তরা শেষ রাতের দিকে অন্ধকারে এই ভাংচুরের হামলা চালায়। পুলিশ এই ঘটনায় ইসলামিক একটি সংগঠনের সদস্য বাবুলকে গ্রেফতার করেছে।
সাতক্ষীরার শহরের পুলিশ কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ বেনারকে বলেন, “এই ঘটনার পেছনে কারা আছে সেই তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তারা বাবুলকে জিজ্ঞাশাবাদ করছেন। সে ইসলামি ছাত্র শিবিরের সদস্য”।
প্রতি বছরই হিন্দুদের বৃহত্তম উৎসব দুর্গাপুজার এক মাস আগে থেকেই প্রতিমা নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে থাকে, পুঁজার অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগে আগে প্রতিমার রং ও সাজানোর কাজ শেষ করা হয়ে থাকে।
বাবুলিয়া হাইস্কুল সার্বজনীন দুর্গাপুজো উদযাপন কমিটির সভাপতি অরবিন্দ মন্ডল ও সাধারণ সম্পাদক রমেশ চন্দ্র ঘোষ বেনারকে জানান, শুক্রবার রাতে আশাশুনির প্রতিমা শিল্পী সঞ্জয় কুমার মন্ডল সকল প্রতিমার রং টানার কাজ শেষ করে চলে যান। এরপর প্রতিমা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হয় শনিবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে বাকিরাও বিশ্রামের জন্য মন্ডপ ছেড়ে বাড়ি যায়। এরপর দুর্বৃত্তরা এসে তিনটি প্রতিমার বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর করে।
সাতক্ষীরা জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল জানান, “পরিকল্পিতভাবে এ প্রতিমা ভাংচুর করা হচ্ছে। বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করাই তাদের উদ্দেশ্য। আমরা চিন্তিত যে জঙ্গিরাই এই হামলার পেছনে রয়েছে”।
তিনি হামলাকারীদের অবিলম্বে আটকের দাবি জানান।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি রানা দাশ গুপ্ত বেনারকে জানান, “দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় জঙ্গি আক্রমনের মুখে আতংকিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। এইসব হামলার বিরুদ্ধে ঐক্য পরিষদ আগামি ২৭ নভেম্বর ঢাকায় একটি কনভেনশনের ডাক দিয়েছে। আমরা সেখানে প্রস্তাব গ্রহন করবো যাতে জঙ্গি হামলা থেকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেয়”।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পুঁজায় যোগ দিতে আসা বিমল কুমার দাস বেনারকে বলেন, “আমরা দেশের কয়েক হাজার স্থানে পুঁজা-অর্চনা করে থাকি। সাতক্ষীরায় প্রতিমা ভাঙ্গার ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে কিন্তু আমরা আমাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে চিন্তিত”।
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, সারাদেশের প্রায় ২৮ হাজার মন্দিরে তারা নজরদারির ব্যবস্থা নিয়েছে।
তিনি বলেন, “হিন্দু সম্প্রদায় যাতে শান্তিপুর্নভাবে পুঁজার উৎসব পালন করতে পারে সেজন্য আমরা সম্ভাব্য সবকিছু করবো”।