স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ২ জনের মৃত্যুদন্ড, ৩ জনের যাবজ্জীবন
2015.11.03

১৬ বছর আগের এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় দুজনকে মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের একটি আদালত।
আসামিদের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার এ রায় দেন নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন, মোহর চাঁন ও আমির হোসেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছেন সফর আলী, নুরে আলম ও মনির।
এদিকে বিয়ের প্রলোভনে চাচাত বোনকে ধর্ষণের অভিযোগে মো.জসিম (৩৬) নামের এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। ঘটনার সাত বছর পর মঙ্গলবার দেওয়া এ রায়ে কারাদন্ডের পাশাপাশি ধর্ষককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ঘটনার পর থেকে জসিম পলাতক রয়েছে।
পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয় তানিয়াকে
নারয়ণগঞ্জের তানিয়া ধর্ষণ মামলার সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) রাকিব উদ্দিন বলেন, নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার রেবতী মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল তানিয়া। ১৯৯৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর আমির ও তার বন্ধুরা তানিয়াকে পালাক্রমে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে ফেলে পালিয়ে যান। পরে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় তানিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা হয়। ১৯ জনের সাক্ষ্য নেন আদালত। যার রায় ঘোষণা করা হলো মঙ্গলবার।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন সরকারি এই কৌঁসুলি।
‘বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছিল চট্টগ্রামের মেয়েটি’
এদিকে চট্টগ্রামের ধর্ষণ মামলাটির বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট জেসমিন আক্তার বেনারকে বলেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জসিম তার আপন চাচাত বোনের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল জসিম তাকে ফুসলিয়ে ধর্ষণ করে। কিন্তু ধর্ষণের পর জসিম চাচাত বোনকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়। এক পর্যায়ে জসিম গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। এ ঘটনায় ধর্ষিতা তরুণী বাদি হয়ে ওই বছরের ৩০ জুন আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০১০ সালের ৩১ জানুয়ারি জসিমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১)/১৩ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
কিন্তু নানা কারণে মামলাটি আলোর মুখ দেখছিল না। বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছিল মেয়েটি। এ মামলায় ৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪ জনেরই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেন।”
ধর্ষিত তরুণীর পূত্র সন্তানের ভরণপোষণ দেবে রাষ্ট্র
জেসমিন আক্তার জানান, ধর্ষণের ফলে ওই তরুণী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। রায়ে আদালত ওই সন্তানের ভরণপোষণ রাষ্ট্রকে বহনের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত সন্তানটির সকল খরচ জেলা প্রসাশকের মাধ্যমে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে রাষ্ট্রকে।
‘দ্রুত ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে’
বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সমাজে ধর্ষণ বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দ্রুত ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করলে এ অপরাধের মাত্রা কমে আসতে পারে।
এ বিষয়ে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বেনারকে বলেন, “ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া, সামাজিক অবক্ষয়, মানবিক গুণাবলি-সমৃদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার অভাবের কারণেই সমাজে এ অপরাধ বাড়ছে। বেশির ভাগ ধর্ষণের ঘটনায় মেয়েরা মামলা করতে চায় না। আর যে ক’টি মামলা করা হয় সেগুলোর বিচার দীর্ঘ সূত্রিতায় চাপা পড়ে যায়। সেই সুযোগে আসামি বের হয়ে যায়।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার বিষয়ে তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার রায় হওয়া দুটি মামলার একটি ১৫ বছর, অন্যটি সাত বছর লেগে গেছে বিচার শেষ হতে। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমন দীর্ঘ সূত্রিতার কারণেই আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হলে দ্রুত ধর্ষকদের শাস্তি বিধান করতে হবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সহযোগিতা করলে খুন ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতন শূণ্যের কোঠায় নেমে আসবে। তারা সক্রিয় না হলে ধর্ষণ সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হবে।