কথিত অনুপ্রবেশের অভিযোগে সালাহ উদ্দিনের বিচার শুরু, দেশে ফিরতে চান
2015.07.22

ভারতে অনুপ্রবেশের কথিত অভিযোগে দেশটির মেঘালয় রাজ্যে শিলংয়ের একটি আদালতে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদের বিচার শুরু হয়েছে। আদালত আগামী ৩০ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন।
ঢাকা থেকে উধাও হওয়ার দুই মাস পর গত ১১ মে তার সন্ধান মিলেছিল মেঘালয়ে। তখন তিনি দাবি করেন, তাকে বাংলাদেশ থেকে অপরহণ করা হয়েছিল। গত ১০ মার্চ অচেনা এক দল লোক উত্তরার একটি বাড়ি থেকে তুলে নেয় ৫৪ বছর বয়সী বাংলাদেশে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যকে।
“আমি আগেও বলেছি, এখনও বলি রহস্যঘেরা এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া জরুরী,” বেনারকে জানান বিএনপিপন্থি পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ।
তিনি বলেন, “সালাহ উদ্দিন আহমেদকে নিয়ে সরকার নোংরা নাটক করছে। এটা অবাস্তব ও অবিশ্বাস্য। এসব নোংরা নাটক জনগণ বিশ্বাস করে না।”
সিলেট সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বের শিলংয়ে বুধবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মুখ্য বিচারক কে এম লিংদো নংব্রির আদালতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে সালাহ উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
এর আগে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে ঢোকার অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ ধারায় পুলিশ মামলা করে বিএনপির ওই নেতার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ গঠনের শুনানির আগে সালাহ উদ্দিন বুধবার সেখানে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোর্ট যে রায় দিক, আমি আমার দেশে ফিরে যেতে চাই।”
সালাহ উদ্দিন বলেন, তার শরীরের অবস্থা এখন ‘ভালো’। আর দেশে ফেরার ক্ষেত্রে তার ‘কাউকে ভয় পাওয়ারও কিছু’ নেই।
বিএনপির এই নেতা দেশে ফিরে গ্রেপ্তার হওয়ার চেয়ে ভারতেই দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে আগ্রহী বলে তার ঘনিষ্ঠরা এর আগে জানিয়েছিলেন।
সরকার পক্ষের আইনজীবী আই সি ঝা প্রথম আলোকে বলেন, “সালাহ উদ্দিন অনুপ্রবেশের অভিযোগ অস্বীকার করায় আদালত তাঁর বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু করেছেন।”
অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলার সাত সাক্ষী ইতোমধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
সরকার পক্ষের আইনজীবী আগেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি অনুপ্রবেশের অভিযোগ স্বীকার করলে আদালত রায় ঘোষণার জন্য দিন ঠিক করবেন। আর অভিযোগ অস্বীকার করলে বিচারের প্রক্রিয়াটি দীর্ঘায়িত হবে।
তবে আদালতে অভিযোগ গঠনের শুনানিতে সালাহ উদ্দিন নিজের ইচ্ছায় ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের কথা স্বীকার করেননি।
সালাহ উদ্দিন আহমদ ৫ জুন থেকে জামিন নিয়ে শিলংয়ে একটি কটেজে রয়েছেন। তাঁর আইনজীবী এস পি মাহান্ত এই অভিযোগ গঠন নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
গত ১১ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে হদিস মেলার পর আটক হয়ে কিছু দিন কারা হেফাজতে হাসপাতালে ছিলেন সালাহ উদ্দিন। স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে পরে তাকে জামিন দেয় আদালত।
এরপর মেঘালয় পুলিশ গত ৩ জুন সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগপত্র দেয়। তার ভিত্তিতে বুধবার অভিযোগ গঠনের শুনানি হয় মেঘালয়ের বিচারিক হাকিমের আদালতে।
নিখোঁজ হওয়ার আগে বিএনপির অবরোধ-হরতালে নাশকতায় প্রাণহানির মধ্যে অজ্ঞাত স্থান থেকে প্রায় এক মাস বিবৃতি পাঠিয়ে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন সালাহ উদ্দিন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে বিএনপির ইঙ্গিত এবং সরকারের তা অস্বীকার, সেইসঙ্গে বিএনপির ‘ভেতরকার বিষয়’ বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে দুই মাস ধরেই আলোচনায় ছিলেন সালাহ উদ্দিন।