জলডুবিতে মৃত্যু বাড়ছে, তাই বাংলাদেশে স্কুলে সাঁতার শেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে

ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরী
2015.04.17
BD-school হাতিরঝিলে চৈত্রের গরমে অতীষ্ঠ ছেলেরা পানিতে নেমেছে। ওরা সবাই সাঁতার জানে না। ৮ হাজার ছেলে-মেয়ে প্রতি বছর পানিতে ডুবে মরছে। মার্চ, ২০১৫
বেনার নিউজ

গত বছর পানিতে ডুবে মরবার আগে ১৭-বছরের আকিব আরমান ফেসবুকে লিখেছিল, “আমি মুক্ত মানুষ, মুক্ত মানুষ হিসেবেই মরতে চাই”। তার স্বপ্ন ছিলো সে একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হবে, যে পেশায় নিশ্চয়তা আছে পানিতে “সীমাহীন স্বাধীনতার”।

গতবছর নভেম্বরে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে সে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছে। সে সাঁতার শেখার প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে, যেহেতু একাডেমিতে সাঁতার জানা বাঞ্চনীয়। গত ডিসেম্বরে আকিব ফেনীতে যায় তার বন্ধুর ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে।সেখানে স্থানীয় ছেলেদের উৎসাহে মুহুরি নদীতে ঝাঁপ দেয় এবং সেখানে ডুবে মরে যায়।

তার পিতা হাবিবুল্লাহ প্রামাণিক বেনার নিউজকে বলেন, “ তার স্বপন পূরণ হয়েছে, সে মুক্ত মানুষ হিসেবেই মরতে চেয়েছে। আমি তাকে ফেনীতে যাবার ব্যাপারে মানা করেছিলাম, সে শোনেনি।এই কস্ট আমি বহন করতে পারছি না”।
তার পিতা আরো বলেন, সে যদি সাঁতার শিখতে পারতো তাহলে এরকম ট্রাজেডির শিকার হতো না।

আকিব আরমানের মতো হাজারো মানুষ প্রতিবছর সাঁতার না জানার জন্য ডুবে মরছে। সরকারী হিসাব মতে, ১৭ বছর বয়েসি প্রায় ১৮ হাজার ছেলে-মেয়ে প্রতি বছর পানিতে ডুবে মরছে।

এই অস্বাভাবিক মৃত্যুহারে সরকার উদ্বেগে পড়ে গত ২৪ মার্চ এক সার্কুলারে জানায়, দেশের প্রতিটি স্কুলে সাঁতার শিক্ষা বাধ্যতামূলক, এটা হবে তাদের শিক্ষার পাঠ্যসূচির অংশ।

অভিভাবক ও সাঁতার ফেডারেশন সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।এতে তরুনদের অকাল মৃত্যুর হার কমাবে বলে জানিয়েছে।
তাদের মতে, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ছেলে-মেয়েরা সাঁতার শেখার কোনো স্থান খুঁজে পায় না।
আরমানের পিতা প্রামাণিক বলেন, “এটা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত, এতে একটা জীবনও যদি রক্ষা পায় সেটাও হবে একটা অর্জন”।

সাঁতার ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি রফিজ উদ্দিন বেনারকে বলেন, “ প্রথমবারের মতো এই সার্কুলার চালুর ফলে বাংলাদেশে সাঁতার জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। আমরা তাই এটাকে স্বাগত জানাই।এর সাথে আমরাও পরিপূরক উদ্যোগ নিয়ে সারাদেশে প্রচার চালাবো যাতে অভিভাবকরা সাঁতারের সুবিধা সম্পর্কে সচেতন হতে পারে”।

শিক্ষা সচিব নজ্রুল ইসলাম খানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কোন বিষয়টার জন্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নিলো হঠাত করে? জবাবে তিনি বেনারকে বলেন, “ এটা আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত যে শুধু সাঁতার না জানার কারণে এতো মানুষ প্রতি বছর মরছে”। তিনি আরো জানান, সরকার অপ্রিচ্ছন্ন পুকুরগুলোকে পরিস্কার করারও উদ্যোগ নেবে যাতে সেখানে সাঁতার শেখানো যায়।

রফিজ আরো বলেন, একবার যদি অভিভাবকরা সচেতন হয়ে ওঠে, সারাদেশে সাঁতার শেখার অবকাঠামো বেসরকারী পর্যায়ে আপনা-আপনি গড়ে উঠবে। এই মুহূর্তে ফেডারেশন সারাদেশে ছোট ছেলেমেয়েদের সাঁতার শিক্ষা কোর্স চালু রেখেছে।

ব্যাংকার হাসান-উল-হক বেনারকে বলেন, “ সাঁতার হচ্ছে জীবন রক্ষার একটা শিক্ষা, এটা এমন একটা আর্ট যে একবার শিখলে কেউ কখোনো তা ভুলে না । আমি আমার ১৪-বছরের ছেলেকে মিরপুর সুইমিং কমপ্লেক্সে সপ্তাহে দুইবার সাঁতার শেখাতে নিয়ে যাই”।

বাবুগঞ্জ উপজেলার প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “ সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে স্কুল কর্তৃপক্ষ সরকার ও ব্যক্তিখাতের উভয়ের উচিত হবে স্কুলগুলোতে সাঁতার শিক্ষার কোচ নিয়োগ দেয়া”।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।