ছাত্র বিক্ষোভে অচল ঢাকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.09.10
BD-student ভ্যাটের বিরুদ্ধে ছাত্র ধর্মঘট চলাকালে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজট। ১০ সেপ্টেম্বর,২০১৫
বেনার নিউজ

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহারের দাবিতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো আটকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করায় বৃহস্পতিবার অচল হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা, যা যানবাহনের গতি রুদ্ধ করে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দেয়।

বেলা ১১ টা থেকে শুরু হওয়া এই নাগরিক ভোগান্তি চলেছে মধ্যরাত অবধি। ভুক্তভোগী নাগরিকেরা জানিয়েছেন, একসঙ্গে গোটা শহর এমন স্থবির হয়ে পড়ার নজির নিকট অতীতে নেই। অন্য সময় শহরের একাংশ অচল থাকলেও আরেকাংশ সচল থাকে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা। গত জুনে জাতীয় বাজেট উপস্থাপনের সময়ে এই ভ্যাট আরোপের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।


ভ্যাট কে দেবে?

তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই ভ্যাট শিক্ষার্থীদের দিতে হবে। অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গতকাল বৃহস্পতিবার সাফ বলে দিয়েছে, এই ভ্যাট বিশ্ববিদ্যালয়কেই দিতে হবে। ছাত্রদের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়নি।

“এনবিআর যেভাবেই ব্যাখ্যা দিক না কেন, এই ভ্যাট শিক্ষার্থীদেরই দিতে হবে,” বেনারকে জানান শেখ কবির হোসেন, যিনি বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান এবং ফার ইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকটাত্মীয় শেখ কবির সরকারের কাছে এই ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, এটা আরোপ করা উচিত নয়। কারণ সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কোনো সহায়তা করে না।

উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের আমলে গত প্রায় সাত বছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। দেশে এখন এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৮৩টি, যেগুলোর মধ্যে গুণগত মান বজায় রাখতে পারছে বড় জোর ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়।  

গত তিন মাস ধরে দাবি উত্থাপনের ধারাবাহিকতায় বুধবার রামপুরায় ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে।  এ সময় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়।

এর প্রতিবাদে এবং ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাস্তায় নামে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের  আন্দোলনকারীরা।

রাজধানীর রামপুরা, ধানমন্ডি, গুলশান ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একযোগে বিক্ষোভ শুরু হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মহাখালী থেকে পুরো বিমানবন্দর সড়ক যানজটে আটকে যায়।


যানজট ও দূর্ভোগের মাত্রা অসহনীয়

বড় সংঘর্ষ বা ভাঙচুরের খবর পাওয়া না গেলেও দু:সহ যানজটের কারণে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। বহু মানুষকে ভরদুপুরে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয় পায়ে হেঁটে। শিশু, নারী এবং অসুস্থ মানুষের কষ্ট ছিল বর্ণনাতীত।

মিরপুরের বাসা থেকে সেখ কামাল ও কাকলি খাতুন দম্পতি দুপুর ১২ টায় মতিঝিল দিকে রওনা হন। বাসে ফার্মগেট পর্যন্ত আসতে বিকেল পাঁচটা বেজে যায়। এরপর বাস থেকে নেমে তাঁরা পায়ে হেঁটে মতিঝিলের উদ্দেশে রওনা হন।

“আমরা তো তাও সুস্থ মানুষ, কষ্ট হলেও হেঁটে যেতে পারছি। কিন্তু ওই দেখুন শিশু ও বয়স্কদের কষ্ট। একদিকে গরম, আরেকদিকে টিপটিপ করে বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে,” জানান সেখ কামাল, যিনি মতিঝিল এলাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন।   

ক্যান্সারের রোগী মো. বাদল আহমেদ (৪৫) রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন । কিন্তু মালিবাগে নিজের বাসায় ফেরার পথে যানজটের কবলে পড়ে নাকাল হতে হয় তাঁকে।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাদল চিকিৎসাপত্র হাতে ক্লান্তি মেশানো শরীরে বাড্ডা থেকে হেঁটে যাচ্ছিলেন রামপুরা ব্রিজের ওপর দিয়ে। এ সময় সেখানে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

অসুস্থতার কারণে ক্ষোভ প্রকাশের শক্তিও যেন তখন হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। কীভাবে বাসায় ফিরবেন জিজ্ঞেস করলে বাদল আহমেদ বলেন, “কেমোথেরাপি দেওয়ার সময়ও আমার এত কষ্ট হয়নি।”

এই ভোগান্তির কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ক্ষোভের ঝড় ওঠে। এতে কেউ সরকারকে, কেউবা শিক্ষার্থীদের দায়ী করেছেন।

“ঢাকায় সাতটা পয়েন্টে অবরোধ হয়েছে। যার কারণে শহরজুড়ে সারা দিন যানজট লেগে যায়। এ ছাড়া সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস হওয়ায় মানুষ ও যানবাহনের চলাচল অন্যদিনের তুলনায় বেশি ছিল,” বেনারকে জানান মৎসভবন এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট শহীদুল ইসলাম।
তাঁর মতে, চারদিক থেকে সৃষ্টি হওয়া এমন যানজট সামাল দেওয়া ট্রাফিক পুলিশের পক্ষে সম্ভব ছিল না।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।