শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সফল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.09.14
BD-students ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনের সাফল্যে উচ্ছসিত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ১৪ সেপ্টেম্বর,২০১৫
বেনার নিউজ

আন্দোলনের মুখে সরকার দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনের বড় দৃষ্টান্ত। সোমবার সরকার তাদের উপর আরোপিত ভ্যাট অবশেষে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দিনের মধ্যে চার দিনের আন্দোলনে ঢাকা জনদুর্ভোগের নগরীতে পরিণত হয়েছিল।

চলতি অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওপর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

এই ভ্যাট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর আরোপের কথা বলা হলেও পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভোক্তা হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই পরোক্ষভাবে টিউশন ফির সঙ্গে তা দিতে হবে।

দেশে এখন ৮৩ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ভ্যাটের আওতায় আসা মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সংখ্যা এখন প্রায় দেড়শ। কেবল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা তিন লাখের ওপরে।


শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সাফল্যে উচ্ছসিত শিক্ষার্থীরা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠন সমর্থন দেয়। সরকারি দলের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ছাড়াও সরকার-সমর্থক ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগও গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানায়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা গত কয়েক দিনে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন বিক্ষোভ প্রদর্শন করলেও সেই অর্থে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে জনদুর্ভোগ হয়েছে ব্যাপক, যা নিয়ে সমালোচনার মুখে সরকার দাবি মেনে নিয়েছে। বিশেষ করে গত বৃহস্পতিবার ও রোববার ঢাকা শহর প্রায় অচল ও স্থবির হয়ে যায়।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবরোধের জন্য জড়ো হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষ, লাঠিপেটা ও ভাঙচুরের মতো ঘটনা না ঘটলেও দিনভর জনদুর্ভোগ ছিল শহরজুড়ে।

দুপুর ১২ টার পর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার হচ্ছে মর্মে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীরা আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে রাজপথ ছেড়ে দেয়।

“শিক্ষা খাতকে এগিয়ে নিতে এই ইতিবাচক সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। তবে এই সিদ্ধান্ত আরও আগে নেওয়া হলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হতো না,” বেনারকে জানান ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ এর অন্যতম মুখপাত্র ফারুক আহমাদ।

আন্দোলন চলাকালে জনদুর্ভোগ হওয়ায় নগরবাসীর কাছে আন্দোলনকারীদের পক্ষে ক্ষমা চান তিনি।


বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া

অর্থ মন্ত্রণালয়ের  সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল সোমবার বিকেলে ভ্যাট প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়।

“যেহেতু বেসরকারি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য সাধারণভাবে অতিরিক্ত ব্যয় হয় এবং যেহেতু এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর ভ্যাট আরোপ করলে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার ব্যয় অধিকতর বাড়বে, সেহেতু এসব প্রতিষ্ঠানের সেবাকে ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার,” বেনারকে জানান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবর রহমান।

ভ্যাট প্রত্যাহারের খবরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আনন্দের সুর বেজে ওঠে। শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল আনন্দ মিছিলে পরিণত হয়।

“আমরা আশা করি শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে পড়াশোনায় মনোযোগী হবে,” বেনারকে জানান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন।

তিনি বলেন, এ ধরনের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অভূতপূর্ব। অতবড় আন্দোলনে একটি গাড়ির কাচও ভাঙেনি শিক্ষার্থীরা।

তবে এই আন্দোলনের সফলতার মধ্যে শঙ্কা খুঁজছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক উদ্যোক্তা।

“ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের স্বাদ পেয়ে গেল। গত ২০ বছরে তারা সেই অর্থে কোনো আন্দোলন করেনি,” বেনারকে জানান বেসরকারি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম হায়দার।

তাঁর মতে, আন্দোলনের এই শিক্ষা সুষ্ঠুভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে।  

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।