সুন্দরবনে আবারও জাহাজ ডুবি, পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা
2015.05.06

তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির পাঁচ মাসের মাথায় বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে এবার পটাশ সার বোঝাই কার্গো জাহাজ ডুবেছে। এমভি জাবালে নূর নামের জাহাজটি থেকে পটাশিয়াম পানিতে মিশে সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ছে। এ ঘটনা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের উপর মারাত্মক ক্ষতির প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।
গত ৫ মে বিকেলে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের মরা ভোলা নদীর বিমলের চর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মংলা বন্দরের হারবাড়িয়া থেকে সার বোঝাই করে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ির উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে গত ৩ মে সুন্দরবনের ভেতরে ওই এলাকায় একটি ডুবো চরে আটকা পড়ে জাহাজটি। মঙ্গলবার কার্গো জাহাজটি উদ্ধার করতে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
‘ডুবো চরে আটকে পড়া কার্গো জাহাজটির মালিক মেসার্স আল এহসান শিপিং লাইন্স। মঙ্গলবার সকালে দু’টি কার্গো নিয়ে জাবালে নূর উদ্ধারে আসে। উদ্ধার চেষ্টার এক পর্যায়ে তলা ফেটে গিয়ে ভেতরে পানি উঠে আটকে পড়া জাহাজটি ডুবে যায়।’- এভাবেই ঘটনার বিবরণ দেন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) কামাল উদ্দিন আহমেদ।
ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে সার সরিয়ে নিতে মালিক পক্ষ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এই সার বোঝাই জাহাজ ডুবির এলাকাটি ডলফিন ও শুশুকের বিচরণ ক্ষেত্র হওয়ায়, সুন্দরবন আবারও মারাত্মক বির্যয়ের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, এ দুর্ঘটনা সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থানের উপর দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব ফেলবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন খুলনা থেকে বেনারকে বলেন, সুন্দরবনের মধ্যে সারবোঝাই ওই কার্গো ডুবে যাওয়ায় জলজ ও বনজ সম্পদের নানামুখী ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পরিমানমত সার ভাল। কিন্তু এই অতিরিক্ত সার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, তাতে অধিক পরিমান এসিড বিদ্যমান। যা পরিবেশর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
সুন্দরবনের নদীপথে তেল, সার, কয়লাসহ যেকোনো ধরনের পণ্যবাহী নৌযান চলাচল সুন্দরবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশ অনুযায়ী নৌপথে এসব পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্তই হবে সময়োপযোগী।
এর আগে, গত বছরের ০৯ ডিসেম্বর সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে সাড়ে তিন লাখ লিটারেরও বেশি ফার্নেস তেল নিয়ে ‘ওটি সাউদার্ন স্টার সেভেন’ নামে একটি জাহাজ ডুবে যায়। এতে বনের পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এরও আগে গত বছর ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনে ফার্নেস তেলবাহী জাহাজ ডুবে সুন্দরবন এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় জাতিসংঘের একটি বিশেষজ্ঞদল গত ২২ ডিসেম্বর সুন্দরবনে আসে। ২৫ সদস্যের দেশি-বিদেশি ওই বিশেষজ্ঞ দল তাদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধের সুপারিশ করে। ২৮ দিন বন্ধ থাকার পর ৭ জানুয়ারি থেকে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে শুধু দিনের আলোয় শ্যালা নদীপথে নৌযান চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার।
এদিকে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীও পটাশ সারের বিষক্রিয়ায় গাছপালার চেয়ে জলজ প্রাণীর ক্ষতির আশঙ্কার কথা স্বীকার করেছেন।
জাহাজটি উদ্ধারে কোন ধরনের গাফিলতি হলে বা গলিত সার পানিতে ফেললে জাহাজ মালিকের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি বেনারকে জানান।
তবে উদ্ধারে আসা কার্গো এমভি নুরুল হকের মাস্টার জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলের অংশ জুড়ে বিরাট চর থাকায় জাবালে নূর জাহাজটি উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষককে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে জানিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় জানায়, দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন, দায়দায়িত্ব ও ক্ষয়ক্ষতি বের করা, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা করা এবং অন্যান্য করণীয় সম্পর্কে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক সুপারিশসহ আগামী পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।