ব্যাংককে মানবপাচার রোধ সম্মেলননে বাংলাদেশের অবস্থান

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.05.27
BD-trafficking মানবপাচার রোধ ও ভাসমান বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে মঙ্গলবার প্রেসক্লাবের সামনে প্রগতিশীল গণ সংগঠন সমূহের বিক্ষোভে পুলিশের বাঁধা। ২৬মে,২০১৫
বেনার নিউজ

সমুদ্রপথে অবৈধ অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে থাইল্যান্ডে ২৯ মে একটি আঞ্চলিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৈঠকে অভিবাসী সমস্যা সমাধানে ‘দ্রুত ব্যবস্থা’ গ্রহণ নিয়ে আলোচনা হবে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হকের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল বুধবার রাতে ব্যাংকক গেছে। এর আগে বিকেলে  সাংবাদিকেরা শহীদুল হকের কাছে সম্নেলনে বাংলাদেশের অবস্থান ও প্রস্তাব কী হবে তা জানতে চান।  “সম্মেলনশেষে দেশে ফিরে এ বিষয়ে কথা বলবো,” জানান পররাষ্ট্রসচিব।

পররাষ্ট্র   মন্ত্রনালয়ের সূত্রমতে, মিয়ানমার শুরু থেকে ঐ সম্মেলনে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ করে আসছে। শেষ মুহূর্তে দেশটি রাজি হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশের মানবপাচার ইস্যুতে মিয়ানমারের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য, সেহেতু বাংলাদেশ এ বিষয়ে আগাম কিছু বলতে চায়না।

মিয়ানমারের হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম এবং বাংলাদেশি অভিবাসী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পথে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করছে। মে মাসে থাইল্যান্ডের সংখলা প্রদেশের গভীর জঙ্গলে একটি পরিত্যক্ত শিবিরে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর বিষয়টি সবার নজরে আসে।

পরপর আরো কয়েকটি পরিত্যক্ত শিবির এবং গণকবর আবিষ্কারের পর বিষয়েটি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দেয়।

মানবপাচার রোধে থাইল্যান্ড সরকার কড়াকড়ি আরোপ করায় মানবপাচারকারীরা ওইসব অভিবাসীকে সমুদ্রে ফেলে রেখে চলে যায়। সমুদ্রে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাসতে থাকে তারা।

বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায়, সামান্য পানি ও খাবার নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নৌযানে গাদাগাদি করে উঠে পড়া এই সব লোকজন সমুদ্রে ভাসছে।

শুরুতে কোন দেশ রাজি না হলেও পরে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া অস্থায়ীভাবে এইসব অভিবাসীকে আশ্রয় দিতে সম্মত হয়।

ইউএনএইচসিআর ও অভিবাসীদের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার (আইওএম) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখনো সাতটির বেশি নৌকায় প্রায় ২,৬০০ অভিবাসী সমুদ্রে ভাসছে।

ব্যাংককে শুক্রবারের বৈঠকে অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশন্স (এএসইএএন) এর ১৭টি দেশ ছাড়াও এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড এবং বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা অংশ নেবে।

বুধবার থাইল্যান্ডের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা প্যানোট প্রিচিয়ানুড বলেন, “অভিবাসী সমস্যা দ্রুত সমাধানের পথ খোঁজাই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় হবে।”

“গত কয়েক বছরে অবৈধ অভিবাসীদের বঙ্গোপসাগর পাড়ির ঘটনা নজিরবিহীনভাবে বেড়ে গেছে। যা এই অঞ্চলের জন্য একটি সতর্ক বার্তা। এ সমস্যা সমাধানে আমাদের সবাইকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে।”



ভারতের সঙ্গে সমঝোতা সই  হবেঃ

এদিকে মানবপাচার প্রতিরোধ, উদ্ধার, দ্রুত প্রত্যাবাসন এবং পুনর্বাসন সহযোগিতার জন্য সমঝোতা স্মারকে সই হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে। আগামী ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরে আসার পর এ সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।

পরবর্তীতে সমঝোতা স্মারকের আলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে দু’দেশের মধ্যে চুক্তিও সাক্ষর হবে।

এই সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় সমঝোতা স্মারকের খসড়া।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মানবপাচার প্রতিরোধে উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক সই হবে।

তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (রাজনৈতিক) মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মহলে মানবপাচার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে আন্তঃ মন্ত্রণালয় বৈঠক করে।

বৈঠকে বলা হয়, নারী ও শিশু পাচার রোধ, উদ্ধার ও প‍ুনর্বাসন সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ ও ভারত সরকার নিজ নিজ দেশে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রস্তুত করা হয়েছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশের কক্সবাজারে গত ২০১২ সালের ৮ ও ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তৃতীয় দ্বি-পাক্ষিক সভায় পাচার হওয়া মানুষদের দ্রুত প্রত্যাবাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া প্রস্তুত করা হয়।

ওই সমঝোতা স্মারক খসড়াটি সইয়ের বিষয়টি মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের জন্য পাঠানো হয়। গত বছর ১ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনও করা হয়। এটি উভয় দেশ সইয়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সমঝোতা স্মারকটিতে সই হলে উভয় দেশের নারী-শিশু ও মানবপাচার রোধ হবে। আর পাচার হওয়া মানুষদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে নেওয়া এবং তাদের প‍ুনর্বাসনও সম্ভব হবে।


মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।