হিজড়াদের ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ উদ্যোগ
2015.06.11

এবার ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় আসছে বাংলাদেশের তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) উদ্যোক্তারা। এছাড়া সমাজের সুবিধা বঞ্চিত, প্রতিবন্ধী ও রাখাইনসহ সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে এসএমই খাতের আওতায় ঋণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ঐ ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচীর আওতায় সরাসরি অথবা এনজিও’র মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করা যাবে।
‘আর্থিক অন্তর্ভুক্তির' সুফল প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্য এসএমই খাতের আওতায় ঋণ বিতরণের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্যাংক গুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বুধবার মহাব্যবস্থাপক স্বপন কৃমার রায় সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রাম বিভাগ’পরিচালিত বাংলাদেশ ব্যাংক ফান্ড, নতুন উদ্যোক্তা তহবিল, ইসলামী পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আওতায় পুনঃঅর্থায়ন যোগ্য ঋণ হিসাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তা উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করতে পারবে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে হিজড়া এবং তাদেরকে নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো।
হিজড়াদের সংগঠন সাদা-কালো’র প্রেসিডেন্ট অনন্যা বনিক (হিজড়া) বেনারকে বলেন, সরকারের এই ইতিবাচক উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। হিজড়াদের মধ্যে অনেকেই নানা বিষয়ে দক্ষতা নিয়ে বসে আছে। কেউ বিউটি পার্লfরের কাজ জানেন, কেউবা খুব ভাল রান্না করতে পারেন। এরা পরিবারের সদস্য, ভালবাসার মানুষ এমনকি সমাজের সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত। স্বার্থক উদ্যোগের অভাবে, ঋণের অভাবে এরা দাঁড়াতে পারে না। সরকার যদি ঋণ দেয় তাহলে তারা নিজেরাই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। মাথা উঁচু করে বাঁচার সুযোগ পাবে।
তবে আমাদের দাবি ক্ষুদ্র ঋণ যাতে শুধু দেওয়ার জন্য দেওয়া না হয়। এর পরিমানটা যেন এমন হয়, যা দিয়ে সত্যিকার অর্থে কোন কাজ করা যায়। এবং যা থেকে লাভবান হয়ে ঋণটা পরিশোধ করা যায়।
ঋণের বিপরীতে সুদের পরিমাণটাও সহনীয় করার দাবিও তিনি জানান।
যৌন সংখ্যা লঘুদের স্বাস্থ্য ও অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট জাহিদ আল আমীন বেনারকে বলেন, যৌনসংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীসহ অপরাপর সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নি:সন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটা পিছিয়ে পড়া মানুষদের নি:সন্দেহে সাবলম্বী করতে এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে কার্যকর ভূমিকা পালক করবে।
তবে এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
আল আমীন বলেন, তারা যেন খুব সহজে এবং সহজ শর্তে এই ঋণ গ্রহন করতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি এই ঋণ কাজে লাগানোর মতো অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এলক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী এবং টেকসই পদক্ষেপ প্রয়োজন। সরকার তথা ব্যাংকগুলো যদি মুনাফার উদ্দেশ্যে এমন উদ্যোগ গ্রহন করে থাকে, তাহলে অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়বে।
তবে ‘সম্পর্কের নয়া সেতু’র সভাপতি জয়া সিকদার বলেন “হিজড়াদের নিয়ে কাজ করছে এমন সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা বা মতামত নিয়ে পরিকল্পনা করলে আরো ভাল হতো। তবে বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক।”