হজের পর এবার ওমরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তার খবর

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.05.05
BD-umra সৌদি সরকার হজের কোটা কমিয়ে দেয়ায় ও উমরা ভিসা বন্ধ রাখায় হজ এজেন্সিগুলো সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে ৪ মে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। ৪ মে,২০১৫
বেনার নিউজ

কয়েকদিন আগে উদ্বেগের খবর ছিল নির্ধারিত কোটার কারণে টাকা জমা দিয়েও এবার ৯ হাজার ২৫৪ জন ব্যক্তি পবিত্র হজ পালনে যেতে পারবেন না। এর বাইরেও ইচ্ছুক আরও প্রায় ২০ হাজার ব্যক্তি হজে যেতে পারবেন না।  

ওই উদ্বেগের মধ্যে নতুন খবর হলো গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশিদের ওমরাহ ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি সরকার। কবে এই ভিসা দেওয়া শুরু হবে তাও অনিশ্চিত। এর ফলে ওমরাহ পালন করতে যেতে পারছেন না আগ্রহী ব্যক্তিরা।

প্রতি বছর রমজান মাসেই বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার মানুষ ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে যান। কিন্তু সৌদি সরকারের কড়া অবস্থানের কারণে আসন্ন রমজানে ওমরাহ পালনের বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি ওমরাহ করতে গিয়ে একটি বড় সংখ্যক মানুষ দেশে ফিরে আসেননি। এ বিষয়টিকে খুবই নেতিবাচকভাবে নিয়েছে সৌদি সরকার। এ জন্যই তাঁরা বাংলাদেশিদের ওমরাহ ভিসার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে।

বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেন। ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও একজন বাঙালি কর্মকর্তা এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

তবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, এই নিষেধাজ্ঞা ‘আপাতত’। তবে এই আপাতত ব্যবস্থাটি কত দিনের তা ধর্ম মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কেউই জানেন না।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ওমরাহর বিষয়টি ধর্ম মন্ত্রণালয় দেখে না। মন্ত্রণালয় শুধু হজ এজেন্সিগুলোকে লাইসেন্স দেয়। বাকি কাজ এজেন্সি গুলোই করে থাকে। এরপরও ঝামেলা সৃষ্টি হলে তা স্বাভাবিকভাবে মন্ত্রণালয়ে আসে।

সৌদি সরকারের নতুন নিয়মে যারা ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরবে যাবেন তাদেরকে নির্ধারিত এজেন্ট বা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। প্রতি মাসে এর সঠিক হিসাব সৌদি সরকারের কাছে প্রদান করতে হবে।

কিন্তু গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪০-৫০ হাজার মানুষ ওমরাহ পালন করতে সৌদি গেছেন। তাঁদের ১৪ থেকে ২৮ দিন মেয়াদের ভিসা ছিল। এঁদের বেশির ভাগ দেশে ফিরে আসলেও প্রায় দেড় হাজার ব্যক্তি সেখানে রয়ে গেছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, তাঁরা অবৈধভাবে সেখানে কাজের আশায় অবস্থান করছেন। বিষয়টি সৌদি সরকারের নজরে আসামাত্র বাংলাদেশি ওমরাহ হজযাত্রীদের ব্যাপারে সৌদি সরকার সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। গত ২২ মার্চ থেকে সম্পূর্ণভাবে ওমরাহ ভিসা প্রদান বন্ধ করে দেওয়া হয়।  

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা হাবের একাধিক নেতা জানান, এক ভাগের নিচে যাত্রীরা অবৈধ হলে সেটি সৌদি সরকার মার্জনা করে। কিন্তু এবার অতিরিক্ত ওমরাহ যাত্রী দেশটিতে রয়ে গেছেন। এ জন্য সে দেশের সরকার বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে।

এখন নিষেধাজ্ঞা তুলতে হলে আগে অবৈধ হওয়া ওমরাহ যাত্রীদের ফেরত আনতে হবে। আর সেটি করা খুবই কষ্টকর। সরকারি-বেসরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সি ওমরাহ ভিসার নামে সৌদি আরবে ‘আদম পাচার’ করছে।

“এই নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা খুবই সমস্যায় পড়েছি। অনেকে ওমরাহ করতে যেতে চাচ্ছেন, কিন্তু যেতে পারছেন না।
চালু হবে, হচ্ছে বলেও কবে তা চালু হবে তা বলা যাচ্ছে না,” বেনারকে জানান হাবের মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহ।

টাকা দিয়ে হজে যেতে পারছেন না অনেকে: এবারে নির্ধারিত কোটার কারণে টাকা জমা দিয়েও এবার ৯ হাজার ২৫৪ জন ব্যক্তি পবিত্র হজ পালনে যেতে পারবেন না। এর বাইরেও হজে যেতে ইচ্ছুক আরও প্রায় ২০ হাজার ব্যক্তি হজে যেতে পারবেন না। তাঁরা বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর কাছে আবেদন করেছিলেন কিংবা বলে রেখেছিলেন।

“নিয়ত করেও যে প্রায় ৩০ হাজার ব্যক্তি হজে যেতে পারছেন না, তাঁদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ করছি। আগামী বছরের হজে এঁদের অগ্রাধিকার দিতে এজেন্সির মালিকদের অনুরোধ  করা হবে,” গত সোমবার সাংবাদিকদের জানান ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান।

এ ব্যপারে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে হজ এজেন্সিগুলো গত ৪ মে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে।

“আমরা জানতাম না, যে কোটা পূরণ হয়ে যাবে। অন্যান্য বছর কোটা পূরণ হতো না। কিন্তু এবার হাজিদের সংখ্যা বেশি হয়েছে। আমাদের পক্ষে আগাম এই সংখ্যা বোঝা সম্ভব ছিল না,” মঙ্গলবার বেনারকে জানান নিজাম রহমান, যিনি নিজের হজ এজেন্সীর নাম প্রকাশ করতে রাজি নন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব জানান, এবার ১ লাখ ১১ হাজার ১২ জন পবিত্র হজে যেতে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন। বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জন। এর ফলে টাকা জমা দিলেও অতিরিক্ত ৯ হাজার ২৫৪ জন হজে যেতে পারবেন না।

ওই যুগ্ম সচিব জানান, এবারই প্রথম কোটার চেয়ে আবেদন বেশি জমা পড়েছে। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রথম হজ ফ্লাইট ছাড়বে আগামী ১৬ আগস্ট। হজ ফ্লাইট চলবে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

“ সরকার বা হজ এজেন্সি যাদের কারণেই হোক, টাকা জমা দেওয়ার পর এই বঞ্চনা ও অসম্মাণ মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের আত্মীয়–স্বজনেরাও বিষয়টি জানেন। আর বয়সও যথেষ্ট হয়েছে। তাই সৌদি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারের উচিত বিষয়টি সমাধান করা,” বেনারকে জানান নারায়ণগঞ্জ শহরের বাসিন্দা নাগিব হোসেন (৬৪)।

হাবের মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, হজ এবং ওমরাহ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার কথা তাঁরা ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। এ ছাড়া বিষয়গুলো নিয়ে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও কথা বলতে চান। এ জন্য তাঁর সাক্ষাত চেয়েছেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।