যৌন হয়রানির অভিযোগে দুই শান্তিরক্ষীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে
2016.02.01

বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম কুড়াচ্ছে, তখন যৌন হয়রানির মতো একটি স্পর্শকাতর অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। যৌন নির্যাতনের জন্য অভিযুক্ত সদস্যদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের প্রস্তুতি চলছে ।
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে দায়িত্বরত শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনকারী দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের নাম এসেছে। যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া শিশুদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জাতিসংঘ এই তথ্য প্রকাশ করে।
বেশ কিছুদিন থেকেই সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে শান্তিরক্ষী সদস্যদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের কথা শোনা গেলেও এই প্রথমবার জাতিসংঘ প্রকাশ্যে অপরাধী সদস্যদের দেশের নাম প্রকাশ করেছে।
গত বছর সারা বিশ্বে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের হাতে যৌন হয়রানির অভিযোগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯টি। তার আগের বছরে অর্থাৎ ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৫১।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গত শনিবার এসব তথ্য প্রকাশ করতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন সংস্থার অন্যতম সহকারী মহাসচিব অ্যান্থনি ব্যানবারি।
“জাতিসংঘের জন্য শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা এমন জঘন্য কাজ করতে পারেন, এটা ভাবা যায় না,” সংবাদ সম্মেলনে জানান ব্যানবারি।
তিনি বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেওয়া দুই বাংলাদেশি সদস্যের বিরুদ্ধে গত বছরের নভেম্বরে যৌনকর্মের জন্য একটি শিশুকে অর্থ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
শান্তিরক্ষী বাহিনীর অভিযুক্ত সদস্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও কঙ্গো, মরক্কো, নাইজার ও সেনেগালের নাগরিক আছেন। ২০১৪ সালে এবং গত বছরের বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত এসব অপরাধের সংবাদ নিশ্চিতভাবে কয়েক সপ্তাহ আগে জানতে পারে জাতিসংঘ।
এদিকে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ৯ হাজার ৩৩৭ সদস্য নিয়োজিত আছেন । এর মধ্যে সেনাবাহিনীর ৬ হাজার ৩৬১ জন, নৌবাহিনীর ৪১৭ জন, বিমানবাহিনীর ৫৪৯ জন ও পুলিশ বাহিনীর ২ হাজার ৫০ জন সদস্য।
আইভরি কোস্ট, লাইবেরিয়া, দক্ষিণ সুদান, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সুদান, পশ্চিম সাহারা, পূর্ব তিমুর, লেবানন ও হাইতিতে তারা কাজ করছেন।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, যৌন হয়রানির মোট ১০টি ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করে পাঁচটি ঘটনায় ছয়টি শিশুকে চিহ্নিত করা হয়। নির্যাতিতদের মধ্যে বালক ও বালিকা রয়েছে, যাদের বয়স ১০ থেকে ১৪-এর মধ্যে।
ব্যানবারি আশ্বাস দেন, ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়াটাই তাঁদের প্রথম অগ্রাধিকার। দায়বদ্ধতা ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে ঢাকায় আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক মো. শাহিনুল ইসলাম গত শনিবার ঢাকার প্রধান জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোকে বলেন, “এ বিষয়ে সরকার বা বাহিনীর অবস্থান হচ্ছে, তদন্তে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করা হবে।”
গৃহযুদ্ধবিধ্বস্ত আফ্রিকার এই দেশটিতে শান্তিরক্ষায় সহায়তা করতে ২০১৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৭০০ সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়। সেই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ নিজস্ব শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করলে শান্তিরক্ষার দায়িত্ব ইউরোপীয় বাহিনীর কাছ থেকে জাতিসংঘের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সেনাসদস্য, পুলিশসহ শান্তিরক্ষীর সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। এই বাহিনীতে ৫০টির বেশি দেশের সেনা ও পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দায়বদ্ধতার অভাব এবং সংশ্লিষ্ট দেশসমূহ প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার কারণেই বারবার এমন ঘটনা ঘটে চলেছে বলে তিনি জানান।
জাতিসংঘের নিয়ম অনুসারে, অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত শান্তিরক্ষী সেনা বা পুলিশ সদস্যকে নিজ নিজ দেশে বিচারের সম্মুখীন করার কথা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেনা প্রেরণকারী দেশগুলো বিচারের বদলে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে থাকে।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে বেনারকে বলেন, “জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন এখন বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাত। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ এখন বিশ্বে সর্বোচ্চ শান্তিসেনা প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে।”
“আমরা দোষীদের শাস্তির পক্ষে। আমরা চাই—সরকার নিজ থেকে তদন্ত করে দোষী সেনা সদস্যের নামধাম প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে,” চ্যানেল আই অনলাইনে ৩১ জানুয়ারি এই মতামত প্রকাশ করেন প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর।