বিনা মূল্যে স্মার্টকার্ড পাবে দেশের ৯ কোটি ৬২ লাখ ভোটার
2015.08.04

নাগরিকের গুরুত্তপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশ ও বিস্তারিত তথ্যের ডেটাবেইস গড়ে তোলার লক্ষ্যে আগামী বছর জুনের মধ্যে ৯ কোটি ৬২ লাখ ভোটারকে বিনা মূল্যে স্মার্ট ন্যাশনাল আইডেনটিটি কার্ড (উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র) দেওয়ার প্রস্তুতি জোরেশোরে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। সে ক্ষেত্রে বর্তমানে চালু লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেয়, যা তখন ও পরবর্তীতেও ওই সরকারের প্রশংসিত কাজগুলোর মধ্যে একটি বলে বিবেচনা করা হয়।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, চলতি মাসেই শুরু হচ্ছে নাগরিকদের উন্নত মানের স্মার্টকার্ড তৈরির কাজ, যাতে একজন নাগরিকের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো থাকবে। স্মার্টকার্ড পারসোনালাইজেশন নামে ১০টি মেশিন ইতিমধ্যে ঢাকায় এসেছে।
কার্ডে প্রত্যেক নাগরিকের পৃথক আইডি নম্বর, নাম, মা ও বাবার নাম, পেশা ও জন্মতারিখ থাকবে। তবে আইডি নম্বরের বিপরীতে তথ্যভান্ডারে একজন নাগরিকের সব তথ্য থাকবে, যা হবে একটি জীবনবৃত্তান্তের মতো। এখনও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং পার্সপোর্ট অফিস জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লেখিত নম্বরের বিপরীতে সব তথ্য পেতে পারে।
বিশেষ গোয়েন্দাকাজেও নাগরিকদের তথ্য সংশ্লিষ্ট এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
“আমরা খুবই আশাবাদী-মেশিন স্থাপন শেষে এ মাসের শেষদিকে স্মার্টকার্ড তৈরি শুরু করা যাবে। এগুলো তৈরি শুরু হওয়ার পর বিতরণের সিদ্ধান্ত হবে,” বেনারকে জানান নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।
দেশে বর্তমানে ভোটার রয়েছেন ৯ কোটি ৬২ লাখ। এর মধ্যে ৯ কোটি ২০ লাখ নাগরিকের লেমিনেটেড এনআইডি কার্ড রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় এই প্রকল্পে মোট খরচ হবে প্রায় ১৪ শ কোটি টাকা।
নতুন স্মার্টকার্ড তৈরিতে ইসি মাথাপিছু প্রায় দেড়শ টাকা বা ২ ডলার খরচ করবে। কিন্তু বিনা মূল্যে নাগরিকদের এই কার্ড দেবে ইসি। এরপর নবায়ন, হারানো কার্ড উত্তোলন বা সংশোধনের জন্য ইসি নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে। যা পরবর্তিতে ঠিক করা হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০১০-এর আলোকে তৈরি এই স্মার্ট কার্ডের মেয়াদ হবে ১০ বছর। ফ্রান্সের ওভার্থোর নামে একটি কোম্পানি এই কার্ড প্রস্তুতের কাজ করছে।
গত ৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মার্ট কার্ডের বিভিন্নদিক তুলে ধরা হয়। পাওয়ার পয়েন্টে তাঁকে দেখানো হয়, স্মার্ট পরিচয়পত্র চালুর জন্য ৯ কোটি মানুষের ডেটাবেইস তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে কার্ডের কারিগরি বিন্যাস ও বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তার বিষয়টিও অবহিত করা হয়।
“প্রধানমন্ত্রী এই কার্ডের সুফল সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্মার্ট কার্ডের সুবিধার কথা জানতে পারলে মানুষ এটি নিতে আগ্রহী হবে,” বেনারকে জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, আগারগাঁওয়ে প্রকল্প কার্যালয়ে একটি ও বাকি মেশিনগুলো অস্থায়ীভাবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভাণ্ডারে স্থাপন করা হবে। প্রতিটি মেশিন মাসে ৫ লাখ কার্ড তৈরি করতে পারে।
ইসি কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা, সেপ্টেম্বরেই কার্ড বিতরণের কাজ উদ্বোধন করতে চান তাঁরা। এ জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শেষ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রতীকী স্মার্টকার্ড দেওয়ার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি উদ্বোধন করা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তারা।
“প্রাথমিকভাবে ঢাকায় স্মার্টকার্ড বিতরণের পরিকল্পনা থাকলেও একই সময়ে সারা দেশেও কিছু পরিমাণ বিতরণ করা হবে,” সাংবাদিকদের জানান জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন।
অগ্রগতির তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, এরই মধ্যে মেশিন স্থাপনের জন্য অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। বৈদ্যুতিক সংযোগ ও প্রিন্টারও বসে যাবে কদিনের মধ্যে।
“১০টি মেশিন দিয়ে প্রতি মাসে ৫০ লাখ স্মার্টকার্ড তৈরি করা সম্ভব হবে,” জানান মহাপরিচালক।
এদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র না পাওয়া ৪৭ লাখ ভোটারকে সবার আগে স্মার্টকার্ড দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক। ২০১৪ সালে এসব নাগরিক নতুন ভোটার হওয়ায় তাদের কোনো কার্ড দেওয়া হয়নি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ছিটমহলবাসীরাও স্মার্টকার্ড পাবে। এলাকার সীমানা নির্ধারণ করে ইসিকে জানানোর পর ওই সব এলাকায় ভোটার গণনা হবে। এরপর তারা স্মার্ট কার্ড পাবেন, যা কিছুটা সময়সাপেক্ষ বলে মনে করছেন ইসি কর্মকর্তারা।
“স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র চালু হলে দেশে অপরাধ ও দুর্নীতি দমনের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি খাতের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে পারে। তবে এই কার্ড তৈরির ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দরকার,” বেনারকে জানান ড. বদিউল আলম মজুমদার, যিনি সুশাসনের জন্য নাগরিক–সুজনের সম্পাদক।