বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মাহিদুর ও আফসারের আমৃত্যু কারাদণ্ড

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.05.20
BD-warcrimes একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন টুটুকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০মে,২০১৫
বেনার নিউজ

একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন টুটুকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে অপহরণ, হত্যা ও নির্যাতনের তিনটি অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে।

তারা একাত্তরে মুসলিম লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে তারা শিবগঞ্জ এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান বলে রায়ে উঠে এসেছে। রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন প্রশিকিউশন। তবে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে এর বিরুদ্ধে আপিল করবে বলে জানায় আসামি পক্ষ।

২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে এই নিয়ে ১৮টি মামলায় ২০ আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হল। যাদের মধ্যে ১৩ জনের ফাঁসির রায় এসেছে। এদের মধ্যে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর কার্যকর করা হয়েছে।

আসামিদের উপস্থিতিতে বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৩৩ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে বলা হয়, প্রসিকিউশনের আনা তিনটি অভিযোগের মধ্যে প্রথমটিতে দুই আসামিকে সর্বসম্মতভাবে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন তিন বিচারক।দ্বিতীয় অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের জেল এ সাজার আদেশ হয়েছে।

তবে তৃতীয় অভিযোগে এর আগে দালাল আইনে তারা দণ্ডিত হওয়ায় ওই অভিযোগটি বাদ দেওয়া হয়েছে।এছাড়া এই অভিযোগের ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর স্কুল মাঠ ও আশেপাশের এলাকায় গণহত্যার ঘটনায় ২০১৩ সালে মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুসহ ১২ জনকে আসামি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালতে একটি মামলা হয়। মামলাটি করেন গণহত্যার শিকার শহীদ পরিবারের সদস্য শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের বদিউর রহমান বুদ্ধু।পরে তা ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

মাহিদুর ও আফসার একাত্তরে মুসলিম লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন।মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান, তা রায়ে উঠে আসে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের দাদনচক গ্রামের সুবেদার আলী বিশ্বাসের ছেলে মো. মাহিদুর রহমানের বয়স বর্তমানে ৮৪ বছর।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃষিজীবী মাহিদুর স্থানীয় মুসলিম লীগের রাজনীতিতেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর মাহিদুর সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং স্থানীয় শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন।

অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের দিনগুলোতে তিনি স্থানীয় রাজাকার ক্যাম্পেই থাকতেন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আশপাশের এলাকায় হত্যা, লুটপাট, নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতেন।

আফসার হোসেন ওরফে চুটুর বয়স বর্তমানে ৬৫ বছর। মাহিদুরের মতো একাত্তরে তিনিও কৃষিজীবী এবং মুসলিম লীগের কর্মী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে ওই এলাকায় বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালান।

প্রসিকিউশনের তদন্ত দল এ দুই রাজাকার সদস্যের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করে গতবছর ১১ ফেব্রুয়ারি।তদন্ত শেষে ৭ খণ্ডে ৯৫৬ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন তদন্ত কর্মকর্তা।গতবছর আফসার ও মাহিদুরকে পৃথকভাবে গ্রেফতার করে পুলিশ।  
রায়ের ঘোষনার পর আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন টুটুকে কাশিমপুরের কারাগারে পাঠানো হয়।


মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।