লিবিয়ায় কাউকে যেতে মানা করেছে সরকার, নারী গৃহকর্মী যাচ্ছে না সৌদিতে

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.10.08
BD-worker নিরাপত্তার প্রশ্নে লিবিয়ায় যেতে মানা করেছে সরকার। অক্টোবর, ২০১৫
বেনার নিউজ

লিবিয়ায়  আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশি নাগরিকদের সে দেশে না যেতে  কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “মন্ত্রণালয় লিবিয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সে দেশে না যেতে অনুরোধ করছে।”

চলমান সংঘাত ও সহিংসতার কারণে গত জুলাই মাসে লিবিয়ায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। আপাতত তিউনিশিয়া থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

গত ১৪ জুলাই প্রবাসী শ্রমিক বা দেশের যে কোন নাগরিককে যুদ্ধ কবলিত লিবিয়া ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। তখন দেশটির রাজধানী ত্রিপলীস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

বৃহস্পতিবার লিবিয়া প্রবাসী যারা বর্তমানে দেশে অবস্থান করছেন,  তাদেরও আপাতত সে দেশে না ফেরার পরামর্শ দিয়েছে ।

“ওই দেশটির যে অবস্থা তাতে জীবনের মায়া থাকলে কেউ সেখানে যাওয়ার চিন্তা করবে না,” বেনারকে জানান মাস তিনেক আগে লিবিয়া থেকে দেশে ফেরা যুবক আব্দুল মোমিন,  যিনি ঢাকায় কাজ খুজছেন।

সরকার এই পরিস্থিতিতে ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৭ হাজার বাংলাদেশিকে লিবিয়া থেকে ফিরিয়ে এনেছে।  প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি এখনও সেখানে অবস্থান করছেন বলে গণমাধ্যমের খবর।

গত ২৪ আগস্ট নৌকায় করে লিবিয়া থেকে ইউরোপে পাড়ি জমানোর চেষ্টায় ভূমধ্যসাগরে ডুবে প্রাণ গেছে অন্তত ২৪ বাংলাদেশির।

২০১১ সালে লিবিয়ার স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে  দেশটিতে অরাজকতা চলছে। বিদ্রোহীদের বিভিন্ন দল ও উপদলের মধ্যে সেখানে প্রায়ই লড়াই হচ্ছে। উগ্রপন্থি জঙ্গি দল আইএস লিবিয়ার একটি অংশ দখল করে নিয়েছে।

অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মত বাংলাদেশিরা সেখানে হতাহত বা অপহৃত হয়েছেন।

“সেখানে যে কারও যোগাযোগের জন্য সার্বক্ষনিক চালু একটি হট লাইন স্থাপন করা হয়েছে,” বেনারকে জানান দূতবাসের শ্রম কাউন্সিলর এএসএম আশরাফুল ইসলাম, যিনি পুরো বিষয়টি সমন্বয় করছেন।

তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে ল্যান্ডফোন: +২১৬৭৫৭৫০৩০০, মোবাইল: +২১৬২১৯২৪২২৯ এবং ইমেইল: bdtripoli@yahoo.com- ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে  বলা হয়েছে- সরকারের তরফে লিবিয়ার পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।


সৌদি আরবকে নারী গৃহকর্মী দিতে পারছে না বাংলাদেশ

সৌদি আরবকে প্রতিশ্রুত নারী গৃহকর্মী দিতে পারছে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশ থেকে কর্মী না পাওয়ায় এখন আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়ার দিকে নজর দিচ্ছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। মোট পাঁচ লাখ নারী গৃহকর্মী দেওয়ার অঙ্গীকার করলেও গত ছয় মাসে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজারটিতে মাত্র দুই হাজার কর্মী দিতে পেরেছে ঢাকা।

স্থানীয় কর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আরব নিউজ ৮ অক্টোবর এ খবর দিয়েছে। প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ নারী গৃহকর্মী দেওয়ার বিষয়ে তাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, দু’পক্ষের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল, সে অনুযায়ী ঢাকার পক্ষ থেকে কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন রিয়াদ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মী নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান মিশারি আল-তুফাইরি। তিনি বলেছেন,  বাংলাদেশ আসলে সৌদিতে পুরুষ কর্মী পাঠাতে চায়, নারী কর্মী নয়।

আল-তুফাইরি অভিযোগ করেন, কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে চুক্তি লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো প্রতি কর্মীতে ২০ হাজার রিয়াল সার্ভিস ফি নিচ্ছে। এটা ঢাকা ও রিয়াদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত ফি’র তিনগুণ বেশি।

এ বিষয়ে সৌদি চেম্বার্স কাউন্সিলের মানবসম্পদ নিয়োগ কমিটির সাবেক সদস্য সাঈদ মুসাবি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রতি কর্মীতে ৭ হাজার রিয়াল করে নেওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের এজেন্সিগুলো নিচ্ছে ২০ হাজার রিয়াল।

মিশারি আল-তুফাইরি জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গৃহকর্মী সরবরাহ কম হওয়ায় এখন বাধ্য হয়ে সৌদির নিয়োগকারীরা ইরিত্রিয়া থেকে কর্মী নিয়োগের চিন্তা করছে।

তিনি বলেন, আফ্রিকার ওই দেশটি থেকে কর্মী নিতে প্রতিজনে ৮ হাজার করে সার্ভিস ফি দিলেই হবে। আর তারা সৌদিতে পৌঁছাতে পারবে ৩০-৪৫ দিনের মধ্যেই।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের উপমন্ত্রী আহমেদ এফ আল ফাহাইদের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল ৪ দিনের সফরে ঢাকায় আসেন। তখনকার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করে সৌদি আরবের প্রতিনিধিদল।

এরপর বাংলাদেশ থেকে আটশ রিয়াল বেতনে প্রতি মাসে ১০ হাজার কর্মী প্রেরণের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে উভয় দেশের সরকারের মধ্যে ‘এগ্রিমেন্ট অন ডোমেস্টিক সার্ভিস ওয়ার্কার্স’ শীর্ষক একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়।

এর ফলে দীর্ঘ সাত বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়।

সাবেক  প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়েছিলেন, আজ থেকে সৌদি আরবের শ্রমবাজার উন্মুক্ত। প্রতি মাসে ১০ হাজার নারী সৌদি আরবে যাবে।

এদিকে চুক্তিপত্রের পর গৃহকর্মীদের জন্য ভিসা ইস্যু করলেও বাংলাদেশ থেকে পুরুষ কর্মী নিতে কোনো ধরনের ভিসা ইস্যু করছে না নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

”চুক্তি অনুযায়ী ১১টি ট্রেডে  বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার কথা। সরকার সেই ব্যবস্থা করতে পারেনি। তবে এটা সত্য যে, সৌদি আরবের চাহিদা অনুযায়ী আমরা নারী শ্রমিক পাঠাতে পারিনি। এ কারণে তারা  অসন্তোষ প্রকাশ করেছে,” বেনারকে জানান বাংলাদেশ এসোসিয়েসন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রোটিং এজেন্সির (বায়রা) সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ কালাম ।


কাতারে শাকসবজি রপ্তানি বন্ধ

কাতারে মাস খানেক ধরে বাংলাদেশ থেকে কোনো শাকসবজি যাচ্ছে না। রপ্তানিকারকেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশটিতে সবজি রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছেন।

দেশে বেশ কয়েক মাস ধরে তরিতরকারির দাম চড়া। সে কারণে কাতারের আমদানিকারকদের কাছ থেকে সবজির জন্য বাড়তি দাম চেয়েছিলেন দেশের রপ্তানিকারকেরা।

কিন্তু কাতারের আমদানিকারকেরা বাড়তি মূল্য দিতে রাজি হননি। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সে দেশে সবজি রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছেন রপ্তানিকারকেরা।
তবে রপ্তানিকারকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে সম্ভাবনাময় একটি বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এই বাজার দখল করছে ভারতীয় সবজি। কাতারের আমদানিকারকেরা এখন কলকাতা থেকে সবজি আমদানি শুরু করেছেন। দেশের সবজি না পেয়ে এখন ভারতীয় সবজি কিনে খাচ্ছেন কাতারে থাকা প্রবাসী বাঙালিরা।

রপ্তানি বন্ধ থাকার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সবজি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস,  ভেজিটেবলস এলাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ মো. ইকতাদুল হক বলেন,  ”দেশের বাজারে যে কোনো সবজির দামই এখন ৫০ টাকার ওপরে। এ অবস্থায় আমরা বলেছিলাম সবজির দাম বাড়াতে। আমদানিকারকেরা রাজি না হওয়ায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কাতারে রপ্তানি বন্ধ রেখেছি।”

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে কি সবজির জন্য বাড়তি দাম দেওয়া হচ্ছে-জানতে চাইলে ইকতাদুল হক বলেন,  অন্য সব দেশে দাম ভালো দিচ্ছে। তাই সেখানে রপ্তানি অব্যাহত আছে।

কাতারে শাক-সবজি বিক্রির একমাত্র পাইকারি বাজারটির নাম সেন্টার মার্কেট,  যা প্রবাসী বাঙালিদের কাছে ‘সবজি মার্কেট’ নামে পরিচিত। পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে কয়েক শ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী এখানে বাণিজ্য করেন। কয়েক দশক ধরে এ বাজারের পুরোটাই প্রায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের দখলে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।