ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বিএনপি নেতার গোপন বৈঠক,রাজনীতিতে নানা প্রশ্ন
2016.05.13

ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশে সরকার উৎখাতের কথিত পরিকল্পনা নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে। দেশের অন্যতম জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকে গত কয়েকদিন ধরে সরকার উৎখাতের এই পরিকল্পনা নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।
এসব প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিরোধী দল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছেন। এই বৈঠক হয়েছে নয়াদিল্লীসহ বিভিন্ন শহরে।
বৈঠকের যে ছবি ও ভিডিও প্রকাশ হয়েছে তাতে দেখা যায়, ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদি এবং বাংলাদেশে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট শিপন কুমার বসুর সঙ্গে বৈঠক করছেন আসলাম চৌধুরী।
সম্প্রতি ইসরাইলের সংবাদ মাধ্যম ‘জেরুজালেম অনলাইন ডট কমে’ বাংলাদেশে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে খবর প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, শিগগির ইসরাইলিদের জন্য বাংলাদেশের দরজা খুলে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের পাসপোর্টে উল্লেখ আছে, ইসরাইল ছাড়া সব দেশে ভ্রমণ করা যাবে।
সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আসলাম চৌধুরী গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেননি। তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার দাবি করেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে তাঁর দলের কোনো সম্পর্ক নেই।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি ইসরায়েল ও দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কিছু খবর বেরিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দলটির অবস্থান হচ্ছে, বিএনপির সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো ধরনের সম্পর্কে নেই। বিএনপি ফিলিস্তিনের পক্ষে আছে, থাকবে।
সরকারি দলের মন্ত্রী-নেতাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিবের ভাষ্য, কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের প্রশ্নই আসে না। বিএনপি একটি উদারপন্থী রাজনৈতিক দল। বিএনপি বিশ্বাস করে, ষড়যন্ত্র নয়, নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন সম্ভব।
এদিকে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে বিএনপি বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
“আমাদের কাছে এমনও খবর আছে, সরকার উৎখাতে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি ধর্মান্ধ মুসলিম দেশ হিসেবে উপস্থাপন করে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হবে,” বেনারকে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেন, একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতে এ ধরণের কর্মকাণ্ড জঘন্য অপরাধ।
অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজবিজ্ঞানীদের অনেকে বিষয়টিকে ততটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সরকার উৎখাতে ইসরাইলের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তাঁদের।
“বিদেশে গেলে কারও সঙ্গে সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব হতে পারে। এটা ব্যক্তিগত বিষয় হলে বলার কিছু নেই। কিন্তু বিষয়টি রাজনৈতিক হয়ে থাকলে তা অবশ্যই চিন্তার বিষয়,” বেনারকে জানান সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক নেহাল করিম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রবীণ অধ্যাপক বেনারকে জানান, যে নেতার ছবি দেখা গেছে, তার পক্ষে এ ধরণের একটি বড় কাজ করা সম্ভব নয়। বিএনপিতে বিদেশি লবিংয়ের জন্য এর চেয়ে অনেক বড় নেতা রয়েছেন।
অবশ্য সরকারি দলের মন্ত্রী-নেতারা অভিযোগ করছেন, বিএনপি দেশ ও মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে ব্যবহার করে বিএনপি ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর ভূমিকা নিয়ে সরকার ও বিএনপির মধ্যে নানা ধরনের আলোচনা রয়েছে।
বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, আসলাম চৌধুরী দলের নীতি নির্ধারনি পর্যায়ের বা ত্যাগি কোনও নেতা নন। কিন্তু দলের সর্বশেষ কাউন্সিলে দলের সহ সম্পাদক থেকে বিস্ময়করভাবে যুগ্ম মহাসচিব হন। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, তিনি বিত্তবান। দলের জন্য তিনি খরচ করেন।
আকস্মিক উত্থানে বিএনপির একটি অংশও তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। ওই অংশটি তাঁকে বিতর্কিত অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। কারও কারও ধারণা হচ্ছে, মোসাদ ও আসলাম চৌধুরীর এ বিষয়টি প্রকাশে বাংলাদেশের কোনও গোয়েন্দা সংস্থার হাত থাকতে পারে।
তবে নেপথ্যের ঘটনা যাই হোক, ছবি ও ভিডিওর কারণে এ–সংক্রান্ত খবরটি সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছে।