তৃতীয় দফায় বাংলাদেশের টাকা ফেরত দিল ফিলিপাইনের ব্যবসায়ী
2016.04.19

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে চুরি হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের আরও ২০০ মিলিয়ন পেসো (প্রায় ৪৩ লাখ ডলার) ফেরত আসতে পারে। ফিলিপাইনের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং এই অর্থ দেশটির মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কাউন্সিল—এএমএলসিকে ফেরত দিয়েছেন।
তবে এই অর্থ ফেরত পেতে হলে বাংলাদেশকে ফিলিপাইনে মালিকানা দাবি করে এবং তার সপক্ষে প্রমাণ দিতে হবে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে ওই অর্থ বাংলাদেশে আসতে কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে করেন আইনজ্ঞ ও বিশ্লেষকেরা।অবশ্য চুরি হওয়া টাকা তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশকে ফেরত দেওয়ার আশা করছে ফিলিপাইন। ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) পক্ষ থেকে মঙ্গলবার এ আশা প্রকাশ করা হয়।
এএমসিএলের মহাপরিচালক জুলিয়া বাকাই আবাদ ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আশা করছি, তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারকে অর্থ ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে। কারণ, এই অর্থ ফেরত পাঠানোর আইনি প্রক্রিয়ায় কোনো বিরোধী পক্ষ থাকবে না বলে আশা আমাদের।”
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ লোপাটে অন্তত ২০ জন বিদেশি নাগরিককে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি।তবে এসব অপরাধী বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করলে প্রচলিত আইনে এখনই তাদের বিচার সম্ভব নয় বলে মত আইনজ্ঞদের।
৯৮ লাখ ডলার ফেরত
গত সোমবার ফিলিপাইনের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অংয়ের কোম্পানি ইস্টার্ন হাওয়াই লেইজার কোম্পানি লিমিটেড ২০০ মিলিয়ন পেসো ফেরত দেয়। মঙ্গলবার দেশটির সিনেট কমিটির শুনানিতে একথা জানান এএমএলসির নির্বাহী পরিচালক জুলিয়া বাক।
এর আগে কিম অংয়ের পক্ষ থেকে গত ৩১ মার্চ ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং ৪ এপ্রিল আট লাখ ৩০ হাজার ৫৯৫ ডলার এএমএলসিকে ফেরত দেওয়া হয়।
সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত এই ক্যাসিনো জাঙ্কেট এজেন্টের কাছ থেকে মোট ৯৮ লাখ ডলার ফেরত এসেছে বলে জানিয়েছে ফিলিপাইনভিত্তিক অনলাইন সংবাদ সংস্থা র্যাপলার ডটকম।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের প্রায় ১০ কোটি ডলার খোয়া যায়। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। এ ছাড়া দুইজন ডেপুটি গভর্নরকেও বরখাস্ত করা হয়।
অর্থ ফেরত পাওয়া সময় সাপেক্ষ
ক্যাসিনো ব্যবসায়ীর ফেরত দেওয়া অর্থ দেশে আনা বেশ ‘সময় সাপেক্ষ’ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি এম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “ফিলিপাইনের আদালতে প্রমাণ করতে হবে যে, ওই অর্থ বাংলাদেশেরই। সে ক্ষেত্রে সে যে অর্ডারের মাধ্যমে অর্থ দেওয়া হয়েছিল, সেটা জাল প্রমাণ করা জরুরি।”
“এটা প্রমাণ করতে পারলে অর্থ ফেরত পেতে কোন অসুবিধাই হওয়ার কথা না। তবে এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা সম্পৃক্ত ছিল কিনা এবং তার ফলে যদি অর্ডারটা ‘প্রকৃত অর্ডার’ হয়ে থাকে, তাহলে তারা সেটা নিয়ে আপত্তি করতে পারে,” জানান মির্জা আজিজ।
তাঁর মতে, সবকিছুই আসলে নির্ভর করবে তারা (ফিলিপাইন) কি ধরনের প্রমাণ চায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কীভাবে তা মোকাবিলা করে তার ওপর।
২০ বিদেশি শনাক্ত: সিআইডি
ফিলিপাইন ছাড়াও লোপাট হওয়া রিজার্ভের অর্থের ২ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় চলে যায়। রিজার্ভ লোপাটের ওই ঘটনা তদন্তে সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইন ঘুরে এসেছে সিআইডির দুটি প্রতিনিধি দল।
ঢাকায় ফিরে গত সোমবার সিআইডির অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক শাহ আলম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, চীন ও জাপানের ২০ জন বিদেশি নাগরিক জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ করেন।
দেশের নাম প্রকাশ করলেও তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি শাহ আলম।
বাংলাদেশের কেউ জড়িত ছিলেন কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “সুরক্ষার ক্ষেত্রে কারও না কারও খামখেয়ালিপনা তো ছিলই। যারা এসব খামখেয়ালিপনার সঙ্গে জড়িত, তারা নতুন প্রযুক্তির সব বিষয় বুঝত না বলে অজুহাত দিচ্ছে। এগুলো আমরা বের করার চেষ্টা করছি।”
বিদেশিদের বিচারের মুখোমুখি করা যাবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে যে কোনো বিদেশিকে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেওয়া হবে।”
এদিকে আইনজ্ঞরা বলছেন, জড়িত বিদেশিরা যদি বাংলাদেশে অবস্থান না করে থাকেন, তাহলে বাংলাদেশের আইনে তাদের বিচার করা কঠিন।
“বিদেশি নাগরিক শনাক্ত হওয়ার পরে তাদের বিচারের দুটি বিকল্প উপায় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অপরাধীদের সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইনে বিচারের কথা বলতে হবে। অথবা জড়িতদের বিচারের জন্য বাংলাদেশের হাতে তুলে দিতে হবে,” বেনারকে জানান সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও কানাডার আইন কমিশনের সাবেক সদস্য ড. কাজী আকতার হামিদ।
চলছে নানামুখী তদন্ত
টাকা চুরির ঘটনার পর তদন্ত শুরু করেছে ফিলিপাইনের সিনেট কমিটি। বাংলাদেশের পাশাপাশি কাজ করছে এফবিআই ও ফিলিপাইন গোয়েন্দা সংস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বেও একটি কমিটি কাজ করছে। সিআইডি মামলাগুলোর তদন্ত করছে।